ছাত্রলীগের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা কমিটিতে  সভাপতি পদে ৩ ও সম্পাদক পদে ৪ জনের সিভি জমা

c-lig-nc-news-pic-14-11-16-copy

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

অবশেষে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে উপজেলা কমিটির নেতাকর্মীদের মাঝে। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে কারা আসছেন তা নজরে রাখছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে জেলার পক্ষ থেকে জীবন বৃত্তান্ত (সিভি) আহ্বান করায় ছাত্রলীগের পদ প্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে এ দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়েছে। এদিকে নতুন নেতৃত্ব বাছাইয়ে জীবন-বৃত্তান্ত চাইলেও সমঝোতার মাধ্যমেই উপজেলা ছাত্রলীগের নতুন কাণ্ডারী নির্ধারণ হতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের জুন মাসে চোচু মং মার্মা সভাপতি ও বদুর উল্লাহকে সাধারণ সম্পাদক করে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তারা রাজনৈতিক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে কিছুটা সফলতার উদ্দেশ্যে এগুলেও দুই বছর পাঁচ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি বলে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতার দাবী।

সরেজমিনে জানা যায়, সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদে নিয়মিত ছাত্রত্ব, বয়স, পরিচ্ছন্ন মেধাবী ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নেতা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় নির্দেশনা থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন অনেকে। মেধাবী, যোগ্যতা মূল্যায়ন হলে স্বজনপ্রীতি নেতৃত্বের হিসাব-নিকাশ পাল্টে যেতে পারে। এতে করে দুই জন পদ প্রত্যাশীর ভাগ্য খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যোগ্যতা নির্ধারণে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য চায়নি জেলা কমিটি।

সভাপতি ও সম্পাদক পদে পৃথক পদ প্রত্যাশীর নাম জানা না গেলেও উভয় পদের জন্য সিভি জমা দিয়েছেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইব্রাহীম খলিল, বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বদুর উল্লাহ কবির বিন্দু, সহ-সভাপতি আহমেদ রিয়ান, বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি উবাচিং মার্মা, হাজী এমএ কালাম ডিগ্রী কলেজের সাবেক সভাপতি মোঃ ফরিদ উল্লাহ।

ফ্যাক্টর এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান: স্বাভাবিক ভাবেই উপজেলার রাজনীতিতে প্রভাব রয়েছে স্থানীয় এমপি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের। ছাত্রলীগের গত কমিটিতে এমপি অপ্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছিলেন সদ্য বিদায়ী সভাপতিকে। কিন্তু এবার নতুন মেরুকরণ রাজনীতিতে প্রকাশ্য কোন সমর্থন নেই। যার কারণে পদ প্রত্যাশীরা জেলা ছাত্রলীগ নেতাদের পাশাপাশি মূল দলের জেলা নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে বেশিরভাগ ইউনিয়নসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ নেতাদের প্রথম দাবী একজন মেধাবী, সৎ যোগ্যতা সম্পন্ন ও মাদকমুক্ত নেতৃত্ব। ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হওয়ার খবরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও সরগরম হয়ে উঠেছে। বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক বদুর উল্লাহ বিন্দু কমিটির পদ পেতে সক্রিয় নেতাকর্মীদের ইঙ্গিত করে তার ফেসবুক ষ্ট্যাটাসে লিখেছে, ও ভাই শীত আয়ের! অতিথী পাখিদের আনাগুনা বেড়ে যাচ্ছে। আমি আবার অতিথী পাখিদের ভয় পাই!

হাজী এমএ কালাম ডিগ্রী কলেজের সাবেক সভাপতি মো: ফরিদ উল্লাহকে নেতৃত্বে দেখতে চান এমন মন্তব্যও করছেন তার সহপাঠীরা। সাবেক ছাত্রলীগের এক কর্মী কমেন্টে লিখেছে- ‘ইব্রাহিম, রিয়ান, বদুর উল্লাহ ও ফরিদ উল্লাহকে এক সাথে কমিটিতে দেখতে চাই’।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাউছার সোহাগ জানান, মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত সভাপতি পদে ৩ জন আর সাধারন সম্পাদক পদে ৪ জন সিভি জমা দিয়েছে। তাদের জীবনবৃত্তান্তে সঠিক তথ্য দিয়েছে কি না তা যাচাই বাছাই করছি। ত্যাগী, শিক্ষিত, সকলের কাছে  গ্রহন যোগ্য এবং ছাত্রত্ব আছে এমন কারো হাতেই আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হবে।

বান্দরবানের প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্জ খায়রুল বাশার এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, আগে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ পরিচালিত হতো সমাজের সবচেয়ে অভিজাত, সম্ভ্রান্ত ও শিক্ষিত মানুষদের দ্বারা। এখানে, দেশপ্রেমিক মানুষের সমাবেশ ঘটেছিলো। পঞ্চাশ থেকে নব্বইয়ের দশকে ছাত্রলীগ ছিল এক আদর্শের নাম। তাই আমাদের সেই ঐতিহ্য ফিরে আনতে হবে। এতে করে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগ তথা ছাত্রলীগের পতাকাতলে জড়ো হবে বলে আমি মনে করি।

উল্লেখ্য, গত ৭ নভেম্বর বান্দরবান জেলা ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরী সভায় নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা ছাত্রলীগ আরো গতিশীল ও নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষে সভাপতি চো চু মং মার্মা ও সাধারণ সম্পাদক বদরুল্লাহ কবির বিন্দুর কমিটি বিলুপ্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন