Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

ছবিতে কেবলই রাখাইনের রক্তাক্ত স্মৃতি আঁকছে বিপর্যস্ত রোহিঙ্গা শিশুরা

পার্বত্যনিউজ ডেস্ক:

বাঁশের তৈরি রঙিন এক ছাউনি ঘর। এর দেওয়াল জুড়ে মোমরঙে আঁকা নানা রকম ছবি। নিজের আঁকা এমনই এক ছবিতে জ্বলন্ত ঘরবাড়ি, আটকে পড়া মানুষ আর সেনা দমনের চিহ্ন বহনকারী মরদেহ দেখিয়ে ১১ বছরের এক রোহিঙ্গা শিশু বলে ওঠে: ‘এটা আমার গ্রাম। ওরা এমন করে দিয়েছে।

আরেকটি ছবি দেখিয়ে খেলার মাঠে সেনাবাহিনীর শিশু হত্যাযজ্ঞের স্মৃতি স্বরণ করে সে। অন্য আরেক ছবিতে কালো আর বেগুনি রঙে আঁকা কয়েকটি হেলিকপ্টারের সঙ্গে এক সেনা সদস্যকে দেখিয়ে সে জানায়, এ হলো  তারই মতো এক ছোট্ট শিশুর হত্যাকারী। তার চোখের সামনে শিশুটির বুকে পা তুলে দিয়ে তাকে হত্যা করেছে ওই সেনা। শিশুটির স্পষ্ট ভাষ্য, ‘মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আমাদের ওপর নির্যাতন চালাত। সেইসব নির্যাতনের ছবি আঁকতে আমার ভালো লাগে’।

যে ছাউনি ঘরটির কথা বলা হলো, সেটি কক্সবাজারের উখিয়ায়। বালুখালি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য এই নিরাপদ স্থানটি গড়ে তুলেছে স্থানীয় এনজিও কমিউনিটি ডেভেলপ সেন্টার। সহযোগিতা দিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। সেই ঘরে ব্যস্ত সময় কাটছে রোহিঙ্গা শিশুদের। কেউ মাটিতে বসে বোর্ড গেম খেলছে।  কেউ মত্ত প্লাস্টিকের পশুপাখি নিয়ে। কেউ আবার আনন্দে লাফিয়ে উঠছে কার্টুন চরিত্রের কস্টিউম পরে। কেউ নিমো (কার্টুন ছবির মাছের চরিত্র) সেজেছে, আর কেউ হয়েছে সিংহ। ঘরটির দেয়াল জুড়ে থাকা ছবিগুলোর সবই রোহিঙ্গা শিশুদের আঁকা।

ওই শিশুদের স্মৃতিতে কেবলই নারকীয় আগুনে রূপান্তরিত রাখাইনের হত্যা-ধর্ষণ-আগুনের বীভৎস রক্তাক্ত বাস্তবতা। শিশুরা রাখাইনের সেই রক্তাক্ত স্মৃতিই এঁকে চলেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের এই বিপন্নতার কথা উঠে এসেছে।

শিশুদের জন্য নিরাপদ স্থান গড়ে তোলা স্থানীয় এনজিও কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের কর্মকর্তা লুৎফুর রহমান জানান,  এখানকার শিশুদের অভিভাবকরা আগে এর নিরাপত্তার ব্যাপারে জানতে চাইতো। প্রথম দিকে আসা শিশুরা পরস্পরের সঙ্গে কথাই বলত না। মনে থাকত সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ভীতি। এমনকী ছবি আঁকার য সরঞ্জাম দেওয়ার পরও তা খুব সহজে তাদের মন জোগাতে পারেনি।

কুতুপালংয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পে বাংলাদেশি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র একটি ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক পরিচালনা করছে। এতে সহযোগিতা করছে ডক্টরস অব দ্য ওয়ার্ল্ড। প্রতিদিন নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমনে এসব ক্যাম্পে খাবার ও পানির সংকট রয়েছে। অনেক মানসিক স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে নিয়োজিত কর্মীরা জানান, শুরুতে তারা নিরাপত্তা ও মানসিক প্রাথমিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। হয়তো কেউ কিছু বলতে চাইলে তা শুনে যাচ্ছেন। কাউকে আবার  গ্লাসভর্তি পানি দিয়ে আপ্যায়ন করছেন। রোহিঙ্গা শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জড়িত এমনই একজন  বিশেষজ্ঞ ডক্টরস উইদাউট বর্ডার-এর সিনথিয়া স্কট। তিনি জানান, এই মুহূর্তে কাউন্সেলিং বা গভীর আলোচনায় যাওয়ার মতো মানসিক অবস্থা রোহিঙ্গাদের নেই। এখন আমরা তাদেরকে স্বাভাবিক হতে সহযোগিতা করছি। এখন গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে তাদের স্বাভাবিক চিন্তা ও কাজে ফিরিয়ে নেওয়াকেই। সিনথিয়া বলেন, লোকজন মনে করে তারা উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে। ফলে তাদেরকে স্বাভাবিক করাই এখন বড় কাজ। তাদেরকে আমরা বোঝাই  যে, তারা পাগল হবে না।

মানসিক স্বাস্থ্যকর্মীরা জানান, রোহিঙ্গারা সহিংসতার স্মৃতি, ভয়াবহ ঘটনা, রাতে দুঃস্বপ্ন দেখছে। অনেকেই ঘুমাতে পারে না, কেউ খাচ্ছে না বা কথা বলছে না। ভয়াবহ ক্ষেত্রে তারা নিজের দেখাশোনা বা পরিবারের সদস্যদের দেখভাল করতে সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। ইউএনএইচসিআর-এর মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচির মাহমুদা জানান, ‘আমরা একদল বিষন্ন মানুষকে সহযোগিতা করছি। আমরা তাদের বুঝাচ্ছি যে, তারা এখন নিরাপদ, সুরক্ষিত ও একা নয়।’

অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট হাঙ্গার-এর এক মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, তিনি এক নারীকে পেয়েছেন যিনি গ্রামে আগুন দেওয়ার পর পালিয়ে এসেছেন। কিন্তু সঙ্গে করে তার সন্তানকে নিয়ে আসেননি। ফলে এখন তিনি অনুশোচনায় ভুগছেন। অন্য মায়েদের সন্তানের সঙ্গে দেখে তার অনুশোচনা আরও বেড়ে যায়।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিকের কর্মী লিজা আখতার জানান, প্রতিদিন তাকে অন্তত ৩০ জন রোগী দেখতে হয়। এক আহত নারীকে তিনি চিকিৎসা দিয়েছেন যার কাঁধে গুলি লেগেছে। লিজার আখতারের ভাষায়, ‘বার্মা হলো মানসিক আঘাত। এরকম অনেকের অবস্থা খুব খারাপ এবং দুর্দশাপূর্ণ।’

৩০ সেপ্টেম্বর ওমর ফারুক নামের এক মানসিক স্বাস্থ্যকর্মী একটি তাঁবুতে কাউন্সেলিংয়ের জন্য প্রবেশ করেন। তাকে দেখামাত্রই সেখানে অবস্থানরত একটি মেয়ে কাঁদতে শুরু করে। তিনি যখন ওই মেয়ের মাকে জিজ্ঞেস করেন- কেন মেয়েটি ভয় পেয়েছে। জবাবে মেয়েটির মা জানান তাকে দেখে মেয়েটি ভয় পেয়েছে। কারণ তার পরণে  প্যান্ট রয়েছে। রোহিঙ্গারা সাধারণত লুঙ্গি পরে কিন্তু মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা প্যান্ট পরে।

ফারুক জানান, রোহিঙ্গাদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা দলবদ্ধভাবে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এতে করে রোহিঙ্গারা অনেক স্বাভাবিক হতে পারে।

সিনথিয়া জানান, পর্যাপ্ত সহযোগিতার অভাবে শিশুরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেন, শিশুরা ভয়ংকর অনেক কিছু দেখেছে। তাদের সামনে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, নিজের মাকে ধর্ষণের শিকার হতে দেখেছে। তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনকে হারিয়েছে। পালিয়ে আসার সময় গুলিবিদ্ধ হওয়া শিশুরাও রয়েছে।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শিশুদের জন্য নিরাপদ স্থান গড়ে তুললেও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সন্দিহান ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞ ওয়েইন ব্লেইয়ার। তিনি জানান, আপাতত স্থানীয় সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের স্বাগত জানাচ্ছে।  রোহিঙ্গাদের মানসিক ধাক্কা সামলে ওঠার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে বিষয়টি সহায়ক। তারা এখানে নিরাপদবোধ করছে। কিন্তু তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। তাদের ভবিষ্যৎ কী হবে এই বিষয়ে কোনও সঠিক বার্তা তারা পাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, ইউনিসেফের মতে রাখাইন থেকে নতুন যারা পালিয়ে আসছে তাদের ৬০ শতাংশই শিশু।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন