চেয়ারম্যান নিয়োগে উপজাতীয়দের অগ্রাধিকার দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৩ পাশ

Untitled-1

পার্বত্যনিউজ রিপোর্ট :
(এক)

শান্তিচুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের জন্য বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান হওয়ার পথ বাঙালীদের জন্য রুদ্ধ হয়ে যায়। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রভৃতি। বাঙালীদের শেষ ভরসা ছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সৃষ্ট পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হওযার পথও বাঙালীদের জন্য রহিত বা রুদ্ধ করা হলো পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৩ মন্ত্রীসভায় পাশ করার মাধ্যমে। এ আইনে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে উপজাতীয় প্রার্থিকে আগ্রাধিকার দেয়ার কথা বলা হয়েছে। আইনের ৫(৩) ধারায় পার্বত্য উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, ‘চেয়ারম্যান পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকার যোগ্য উপজাতীয় প্রার্থীকে অগ্রাধিকার প্রদান করিবেন।’ ফলে এ পদটিতে বাঙালীদের প্রবেশ রহিত হয়ে তা কার্যত উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত হয়ে গেল বলে মনে করছেন পার্বত্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশে এ ধরণের কোন বিধান ছিলনা। ফলে সরকার চাইলে পার্বত্য চট্টগ্রামের যেকোন সম্প্রদায়ের যোগ্য ব্যাক্তিকেই চট্টগ্রাম উন্নয়ন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দিতে পারতেন। কিন্তু বর্তমান আইনের ফলে এ পদটি কার্যত উপজাতীয়দের জন্য সংরক্ষিত করা হল।

জিয়াউর রহমানের আমল থেকে এ পদে চট্টগ্রামস্থ ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার অভ কমান্ডিংকে প্রধান করা হতো। ফলে সেসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে পাহাড়ী বাঙালী সুষম বণ্টন বা ভারসাম্য পরিলক্ষিত হতো। বিগত চার দলীয় জোট সরকারের সময় খাগড়াছড়ি থেকে নির্বাচিত এমপি ওয়াদুদ ভুইয়াকে উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়। ফখরুদ্দীন- মইনউদ্দীন সরকারের সময় ওয়াদুদ ভুইয়া গ্রেফতার হলে এ পদটিতে আবারো প্রধান হিসাবে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি বসেন। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বান্দরবান থেকে নির্বাচিত এমপি বীর বাহাদুর উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে পাহাড়ী-বাঙালী বৈষম্যের সৃষ্টি হয়। কাজেই এ পদটি স্থায়ীভাবে উপজাতীয়দের কর্তৃত্বে চলে গেলে পার্বত্য বাঙালীরা আরো বৈষম্যের শিকার হবেন বলে মনে করছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা।

এমনিতেই শান্তিচুক্তির পর বিভিন্ন বৈষম্যমূলক বাঙালী বিদ্বেষী ধারার কারণে পার্বত্য বাঙালীরা নিজভূমে পারবাসী হয়ে পড়েছেন, নিজের দেশে উপজাতীয়দের মুখে স্যাটলার গালি শুনতে হয় প্রতিনিয়ত।

সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন, ২০১১ (২০১১ সনের ১৪নং আইন) এবং বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায় অনুযায়ী সরকারের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ উক্ত সময়ের মধ্যে প্রণীত হওয়ায় অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিণত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ তারিখে মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ, ১৯৭৬ এর সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধনপূর্বক স্টেকহোল্ডারদের মতামত ও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মতামতের ভিত্তিতে খসড়া আইনটিতে বিভিন্ন ধারা/উপধারা সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জন করা হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০১৩ তে।
The chittagong Hill Tracts Devolopment Board Ordinance, 1976 (Ordinance No LXXVII of 1976) অধ্যাদেশটি মুলত: আইনে পরিণত করার কথা বলা হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নতুন ধারা-উপধারা সংযোজন/পরিমার্জন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে The chittagong Hill Tracts Devolopment Board Ordinance, 1976 (Ordinance No LXXVII of 1976 অধ্যাদেশটি রহিত করা হয়েছে। যদিও মন্ত্রীসভার বৈঠকের জন্য যে সারসংক্ষেপ তৈরী করা হয় তাতে এই সংশোধিত ধারাগুলির কথা উল্লেখ করা হয়নি।

আইন প্রণয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মতামত চেয়ে মন্ত্রণালয় হতে পত্র দেয়া হলে আঞ্চলিক পরিষদ তাদের মতামত প্রদান করে।  আঞ্চলিক পরিষদের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড আইন,২০১৩ প্রণয়ন প্রক্রিয়া বন্ধ করা,  পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অধ্যাদেশ,১৯৭৬ বাতিল করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড অবলুপ্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে তাদের সুপারিশ প্রেরণ করে।

কিন্তু তাদের সুপারিশ মন্ত্রিপরিষদের গৃহিত সিদ্ধান্তের পরিপন্থি হওয়ায় সে সকল সুপারিশ আমলে না নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মন্ত্রিসভা বৈঠক অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিনত করার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

বর্তমান আ্ইনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, আঞ্চলিক পরিষদের প্রতিনিধি, তিন পার্বত্য জেলা প্রশাসক, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রতিনিধি, সরকার কর্তৃক নিযুক্ত উপসচিব পদমর্যাদার চারজন প্রতিনিধি- যাদের একজন সচিব হিসাবে দায়িত্বপালন করবেন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ এই বোর্ড গঠন করা হয়েছে। 

এদিকে নতুন এ আইনটি পাশের মাধমে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল শীর্ষপদ এখন পাহাড়ীদের কব্জায় সমর্পন করা হয়েছে। এ আইনের মাধ্যমে সার্বিকভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডে কোন বাঙ্গালীর চেয়ারম্যান পদে আসার সকল পথ রূদ্ধ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: উপজাতি, পার্বত্য চট্টগ্রাম, বাঙালী
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন