চেঙ্গী নদী কি পানছড়ি বাজারের ডাস্টবিন
শাহজাহান কবির সাজু, পানছড়ি :
খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলায় সৌন্দর্যের এক অপরূপ আধার চেংগী নদী। দু’পার্শ্বে কাশফুলে বেষ্টিত এ নদী বছরের প্রায় চার মাসই থাকে শুকনো। তাই নদীতে সাজানো থাকতো সারি সারি বালুর স্তুপ। কিন্তু সরকারের এক যুগোপযোগী পদক্ষেপে প্রায় এগার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় শান্তিপুর রাবার ড্যাম। আর এই রাবার ড্যাম নির্মানের ফলে চেংগী নদীর পানছড়ি সীমান্তে সারা বছরই পানি থাকে জমা। ফলে উপকৃত হচ্ছে এলাকার কৃষক মৎস্য চাষী ও সর্বসাধারণ।
তবে পানিতে এখন আর আগের মতো স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে না । তাই বছরের ছয় মাস থাকে আবদ্ধ। এই আবদ্ধ পানিতে বর্তমানে ফেলা হচ্ছে পানছড়ি বাজারের ময়লা-আবর্জনা থেকে শুরু করে শুকর, মোরগের নাড়ি-ভুড়ি, ও নাপ্পী বাজারের পঁচা দ্রব্যাদি। রবিবার পানছড়ির সাপ্তাহিক হাটবার। এ দিন বাজারের পঁচা দ্রব্যাদি এক জায়গায় জড়ো করে সোমবার সকাল থেকে প্রায় ১৫/২০ ঝুঁড়ি আবর্জনা ব্রীজের উপর থেকে সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। এই ময়লা-আবর্জনা পঁচে ফুলে গন্ধে চারিদিকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। আর পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অত্র এলাকার সর্বসাধারণ।
গত সোমবার সকাল ৮টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এই পরিবেশ দূষণের মূল চিত্র। বড় বড় ঝুঁড়িতে করে ব্রীজের উপর থেকে প্রায় ১৫-২০ ঝুড়ি ময়লা- দুর্গন্ধযুক্ত আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। পথচারীরা দুর্গন্ধে নাক চেপে পারাপার হচ্ছে। পথচারী নুরুল ইসলাম, পরিমল ও আরো অনেকে জানালেন, নদীতে এখন আর গোসল ও কাপড় চোপড় ধোঁয়ার পরিবেশ নাই। সহসাই এ অত্যাচার বন্ধ করা নাহলে চেংগী নদী মৃত নদীতে পরিনত হবে বলে জানান পথচারীরা। তাছাড়া নদীর আশে-পাশের বাড়ীগুলোর পয়:নিষ্কাশনের পাইপগুলোও সরাসরি নদীর উপর। ময়লা-আবর্জনা সব নদীতেই পড়ে।
এ ব্যাপারে পানছড়ি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা: মতিউর রহমান এ প্রতিবেদককে জানান, এর ফলে মানুষ, পরিবেশ ও ফসল ৩ টিই হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত । এ জীবানুর কার্যকারিতা বছরের পর বছর পর্যন্ত থাকে। ফলে শুধু মানুষ নয় যে সব জমিতে এ বিষাক্ত পানি দেওয়া হচ্ছে সে সব জমিনের উর্বরতা শক্তিও কমে যাচ্ছে। তাছাড়া কলেরা, আমাশয়, চর্মসহ পানিবাহিত বহু রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পানছড়ি উপজেলা স্যানিটরি ইন্সপেক্টর মো: শওকত আলী জানান, নদীতে এ ধরনের ময়লা-আবর্জনা ফেলা আইনত: দন্ডনীয় অপরাধ। এদের আইনের আওতায় এনে জেল-জরিমানা করলে এলাকাবাসী তথা ভুক্তভোগীরা উপকৃত হবে। পানছড়িতে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন কার্যক্রম না থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করতে পারেন বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে প্রশাসনের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।