চাকঢালায় বর্ডার হাট আর দোছড়ি বিদ্যুৎ যাবে- প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর

unnamed copy

নাইক্ষ্যংছড়ি প্রতিনিধি:

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি হাজী এমএ কালাম ডিগ্রী কলেজের ২০ বছর পূর্তি ও পূর্ণমিলনীতে নবীন প্রবীনের মিলনমেলা ঘটেছে। ১৯৯৫ সনের ডিসেম্বরে বিজয়ের দিনে এ কলেজ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর পার করছে গৌরবের ২০ বছর।

এ উপলক্ষে শনিবার কলেজ ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি বলেছেন, দেখতে দেখতে হাজী এম এ কালাম ডিগ্রী কলেজ ২০ বছর পেরিয়ে গেল। আগামীতে এ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, অনার্স, মাষ্টার্স হবে। এতদুর আসার পেছনে যিনি প্রথমে এগিয়ে এসেছেন হাজী এমএ কালাম, যেসব শিক্ষক শ্রম দিয়েছেন তাদের প্রতি প্রতিমন্ত্রী কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আরও বলেন, মেধায় মেধায় যুদ্ধ করতে হবে এ কলেজের শিক্ষার্থীদের। শুধুমাত্র এ প্লাস সার্টিফিকেট নিয়ে সব জায়গায় টিকতে পারবে না। চলে যাওয়া সময় ফিরে আসেনা। শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবক এ তিনে মিলে যদি সঠিক পথে আগাই তাহলে আমাদের ছেলে মেয়ে মানুষ হবে।

বীর বাহাদুর উশৈ সিং আরও বলেন, বাইশারী চাকপাড়ায় রাজঘাট ব্রিজ, কালুরঘাট রাস্তা হবে। ৫৬৫কোটি টাকা পার্বত্য তিন উপজেলার জন্য একনেকে বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। সে সুযোগে দোছড়িতেও বিদ্যুৎ লাইন সংযোগ দেওয়া হবে। ঘুমধুমে স্থল বন্দর করার জন্য সরকার পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছে। চাকঢালাও বিবেচনায় রয়েছে। কর্তৃপক্ষ এসে সরেজমিন পরির্দশণ করবেন। তবে খুব শীঘ্রই চাকঢালায় বর্ডার হাট হবে। পাশাপাশি স্থল বন্দর স্থাপনেও কাজ চলবে। এতে দুই দেশের মাঝে বানিজ্য বাড়বে। পর্যটন নিয়ে কাজ করতে হবে এতে নাইক্ষ্যংছড়ির চেহারা পাল্টে যাবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কক্সবাজার-রামু ৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল বলেন, একদিকে আছে শিক্ষা, অন্যদিকে সুশিক্ষা। একদিকে সৃষ্টি অন্যদিকে ধ্বংস, স্বাধীনতার মূলমন্ত্র আরেক দিকে আছে স্বাধীনতা বিরোধীদের আষ্ফালন, একদিকে আছে উন্নয়ন অন্যদিকে আছে এদেশে লুটপাটের ইতিহাস, একদিকে আছে বীর বাহাদুর আরেকদিকে আছে এ দেশের ক্ষমতালোভী কিছু উচ্চাঙ্খী মানুষেরা। নিজের দিকে নিজেকে থাকতে হবে। বীর বাহাদুরের দিকে থাকতে হবে। তাহলেই নাইক্ষ্যংছড়ির উন্নয়ন হবে, দেশের উন্নয়ন হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহেশখালী-কুতুবদিয়া ২ আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ করতে চান, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশের স্বপ্ন দেখছেন। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বীর বাহাদুরের মত নেতার কোন বিকল্প নেই। আমরা এমন এক নেতার স্বান্নিধ্য পেয়েছি। যিনি শুধু বান্দরবানের উন্নয়নের জন্য নয়, মহেশখালীতে সাংগঠনিক সফরে গিয়ে বিভিন্ন উন্নয়নে সহযোগিতাসহ ফেরীঘাটের জন্যও তিনি আমাকে সহায়তা করেছেন। মানুষের প্রতি এত আন্তরিকতা হৃদয়ের এ বিশালতার কারনেই তিনি পার্বত্য বীর।

বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা তার বক্তব্যে বলেন, ২০০০সনের পূর্ব থেকে হাজী এমএ কালাম কলেজের সাথে আমি জড়িত। সে সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য যখন পেরেছি উন্নয়নে সহযোগিতা করেছি। এ প্রাণপ্রিয় কলেজ থেকে শিক্ষা ছড়িয়ে দিতে হবে সারাদেশে। আগামীতে কলেজের আরও বেশি সফলতা বয়ে আনার জন্য অভিভাবক, শিক্ষকদের নিরলস ভাবে কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

বান্দরবান জেলা প্রশাসক দীলিপ কুমার বণিক বলেন, বাংলাদেশের আনাচে কানাচে অনেক কলেজ আছে। দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম করছে সরকারী করণের জন্য। কিন্তু বান্দরবান জেলায় এক সাথে তিনটি কলেজ সরকারী করণ হয়েছে। এ সমস্থ কৃতিত্বের দাবিদার বীর বাহাদুর। বিনোদনের জন্য শিশু পার্ক ও ডাক বাংলো উদ্বোধন করেছেন তিনি।

বাংলাদেশে ৪৯১টি উপজেলার মধ্যে ৮টি উপজেলায় পাচঁশত আসন বিশিষ্ট অডিটরিয়াম হবে। এরমধ্যে বান্দরবানের থানচিতে একটি। এটিও বীর বাহাদুরের কল্যানে হচ্ছে।

পার্বত্য এলাকায় শান্তি স্থাপনে যার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারই ব্যক্তিগত উদ্যোগের ফলে আজকে পার্বত্য অঞ্চলে শান্তি স্থাপিত হয়েছে। বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার।

বান্দরবান জেলা সহকারী পুলিশ সুপার অনির্বান চাকমা বলেন, এহিত্যবাহী এ কলেজের মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন, সেই জ্ঞান অর্জনকে আমরা আরও প্রসারিত করব। ছাত্র, ছাত্রী শিক্ষক সবাই একধাপ এগিয়ে যাবেন। কলেজের অনুষ্ঠানে পুলিশকেও অন্তর্ভূক্ত করায় তিনি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামাল বলেন, জেলা সদর থেকে প্রায় ১৫০ কিমি দূরবর্তী এলাকায় একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হাজী এমএ কালাম ডিগ্রী কলেজে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আগামীতে কলেজে পূর্ণাঙ্গ লাইব্রেরী, একটি স্মৃতিসৌধ-শহিদ মিনার ইনডোর গেমসের ব্যবস্থার বিষয়ে প্রধান অতিথির দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে কলেজ অধ্যাক্ষ ও.আ. রফিকুল ইসলাম বলেন, পশ্চাদপদ এ জনপদে যখন শিক্ষার আলো নিভে যাচ্ছিল। উচ্চ শিক্ষার যখন কোন ব্যবস্থা ছিলনা ঠিক সেই মুহুর্তে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ তার সহযাত্রীদের মাধ্যমে কলেজ স্থাপনের স্বপ্ন দেখেছিলেন। রক্তের কোন আত্মীয় সম্পর্ক না থাকার পরও কলেজ স্থাপনের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন হাজী এমএ কালাম। সেই থেকে শুরু হয় কলেজের পথচলা। কলেজ উন্নয়নে দায়িত্ব নেন বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। যার কারণে আমাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরিপূর্ণতা লাভ করে হাজী এমএ কালাম কলেজ। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমন্ত্রিত অতিথিদের ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেন কলেজের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ। পরে অনুষ্ঠানে বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ম্যাগাজিন উদ্ভাস এর মোড়ক উম্মোচন করেন অতিথিরা।

এর আগে পার্বত্য প্রতিমন্ত্রী নাইক্ষ্যংছড়ি পৌঁছে প্রথমে রেস্ট হাউজ দ্বিতল ও শিশু পার্কের উদ্বোধন করেন। পরে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বদুর উল্লাহর সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ শীর্ষক রচনা প্রতিযোগিতার পুরষ্কার প্রদান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম সরওয়ার কামালের সভাপতিত্বে বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তি পর্যায়ে ঢেউটিন এবং শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ কর্মসূচী উদ্বোধন করেন। পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে কলেজ হোস্টেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে হাজী এমএ কালাম ডিগ্রী কলেজের ২০ বছর পূর্তি উৎসবে যোগদান করেন অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষী পদ দাশ, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এড. সিরাজুল মোস্তফা, আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য শফিকুর রহমান, পার্বত্য আঞ্চলিক পরিষদ সদস্য কাজল কান্তি দাশ, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সম্পাদক রেজাউল করিম, নাইক্ষ্যংছড়ি থানা অফিসার ইনচার্জ তৌহিদ কবির, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবীদ হাসান, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. ইকবাল, উপজেলা আওয়ামী লীগ আহ্বায়ক ক্যউচিং চাক, যুগ্ম আহ্বায়ক আবু তাহের কোম্পানী, অধ্যাপক মো. শফি উল্লাহ, তসলিম ইকবাল চৌধুরী, সদস্য সচিব মো. ইমরান মেম্বার, কলেজের উপাধক্ষ্য বশিরুল আলম, অধ্যাপক শাহ আলম, মোজাহিদুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক জনি সুশীল। অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন বাংলাদেশ আইডল মং।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন