চরম ঝুঁকিতে মাতামুহুরী ব্রিজ, যে কোন মুহুর্তে ধসে পড়ার সম্ভবনা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কয়েকদফা ভয়াবহ বন্যায় কক্সবাজারের চকরিয়ায় গত জুলাই মাসে টানা ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল এবং বানের পানির তোড়ে পড়ে মাতামুহুরী ব্রিজটি চরম ভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দুই মাস পূর্বে ব্রিজের বিভিন্ন অংশে ও মাঝখানের পিলার ফাটল দেখা গেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কর্মকর্তারা বন্যার পূর্বে বালির বস্তা দিয়ে ঝুঁকি এড়াতে কোন রখম দায়সারা মেরামত  করেন। বালির বস্তার উপর ব্রিজটি বর্তমানে বড় ধরণের হুমকিতে রয়েছে। যে কোন মুহুর্তে ধসে পড়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

এতে বিচ্ছিন্ন হতে পারে সারাদেশের সাথে পর্যটন নগরী কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। ব্রিজটি ভেঙ্গে গেলে দুর্ভোগের শিকার হবে জেলার আট উপজেলার প্রায় ৩০লক্ষাধিক জনগোষ্ঠী। নিত্যদিন এ  ব্রিজের উপর দিয়ে হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করে। যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে ব্রিজের উপরে দশটনের অধিক মালামাল বা পণ্য পরিবহন না করতে নির্দেশ দিয়েছেন চকরিয়া উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দ্রুত সময়ে সংস্কার বা মেরামত না করলে যে কোন মুহুর্তে ব্রিজটি ধসে পড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও পরিবহণ চালকরা।

স্থানীয় সূত্রে ও সরেজমিনে দেখাগেছে, চট্রগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সড়ক পথে যেতে যাতায়াতের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্ব বহন করছে উপজেলার মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত এ ব্রিজটি। ১৯৫৫ সালে এতদ্বঞ্চলের জনগোষ্ঠীর যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মাতামুহুরী নদীর উপর নির্মিত হয় চিরিংগা ব্রিজ। তিনশত মিটারের এ ব্রিজটি তৈরি বা নির্মাণ করতে সময় লেগেছে চার বছরের অধিক।

বিগত কয়েক বছর পূর্বে ব্রিজের মেয়াদ শেষ হওয়ার কারণে চরম ঝুঁকিতে পড়ে এ মাতামুহুরী ব্রিজ। মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে ব্রিজটির উপর দিয়ে নিয়মিত যানবাহন চলাচল করছে চরম ঝুঁকির মধ্যে। কয়েক মাস পূর্বেই ব্রিজটির নিচের অংশে একটি পিলারে বড় ধরণের ফাটল দেখা দেয়। এবং পিলারের মধ্যখানের কিছুটা অংশ ঝরেও গেছে।

এ অবস্থায় চরম ঝুঁকির মধ্যে দিয়ে ব্রিজে চলাচল করছে হাজার হাজার দুরপাল্লার যানবাহন। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এলাকার জনসাধারণ। ব্রিজের উপরের মাঝামাঝি স্থানে ধ্বসে ভেঙ্গে পড়েছে প্রায় ১৫ ফুট জায়গা। ওই ধসে পড়া অংশটুকুর মেয়াদও প্রায় ৮ বছর হয়েছে। ধসে যাওয়া ভাঙ্গন অংশে বসানো আলাদা পাটাতন দিয়ে ৮ বছর ধরে যানচালকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করে আসছে।

বর্তমানে কোন রখম জোড়াতালি দিয়ে চলছে প্রাচীনতম মাতামুহুরী এ ব্রিজটি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা দ্রুত ব্রিজটি সংস্কার বা মেরামতের উদ্যোগ না নিলে যে কোন মুহুর্তে বড় ধরণের দূর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।

এদিকে কয়েক মাস ধরে মাতামুহুরী ব্রিজে গাড়ি উঠলেই দেখা যায় কম্পন। ব্রিজের গার্ডার গুলো ঝুঁকিপূর্ন হয়ে যাওয়ার কারণে মুলত নানা সমস্যার দেখা যায় বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান। গাড়ি চলাচলের সময় ব্রিজে কম্পন সৃষ্টি হতে দেখা দেয়ায় গত ১৩ এপ্রিল ব্রিজের পিলারের চতুপার্শ্বে সহস্রাধিকের মতো বালির বস্তা দেওয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মচারী এবং স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে দু’দিন ধরে প্রায় এক হাজার বালির বস্তা দেয়া হয়েছিল ফাটল পিলারে। এর সাথে সংযুক্ত করা হয় গাছ ও তক্তা।

এ অবস্থায় কোনভাবে যানবাহন চলাচল করছে ব্রিজ দিয়ে। ব্রিজের দুই পাশ্বের মাথায় সতর্কতা চিহ্ন হিসেবে লাল পতাকা টাঙ্গানো হয়েছে। যেন দশ টনের অধিক কোন ধরণের মালামাল বা পণ্যবাহী পরিবহন ব্রিজের উপর দিয়ে যাওয়া যাবে না বলে নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সারাদেশ থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে যেতে মাতামুহুরী ব্রিজের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। জেলা শহরের প্রায় ৩০লক্ষাধিক মানুষের জন্য অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ন ব্রিজটি। প্রতিনিয়ত জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ, মাছ, তরিতরকারি, শাক-সবজি, শুটকী, পান-সুপারী, আসবাবপত্র যানবাহনের মাধ্যমে নিয়ে যেতে এ ব্রিজ হচ্ছে একমাত্র ভরসা। দ্রুতসময়ের মধ্যে নতুন করে ব্রিজের কোন সংস্কার কিংবা মেরামত না করলে যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয় এলাকাবাসি।

দুরপাল্লার কয়েকজন গাড়ি চালকের সাথে কথা বলে জানাগেছে, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। জীবিকা নির্বাহের তাগিদ ও সংসারের কারণে গাড়ি নিয়ে বের হয়। মাতামুহুরী নদীর ব্রিজটি উপর আসলেই জীবনটা বড় ঝুঁকিতে মনে হয়। ব্রিজের উপর দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলে কম্পন হয় ব্রিজটি। তাছাড়া বিভিন্ন অংশে

রয়েছে ফাটলও। এত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার পরও কর্তৃপক্ষ নেয়নি মেরামতের কোন ধরণের উদ্যোগ। এতো বড় ব্রিজের নিচে বালির বস্তা দিয়ে কতটুকু রক্ষা করা হবে বলে মন্তব্য করেন সচেতন মহল।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রানা প্রিয় বড়ুয়া’র কাছে জানতে চাইলে তিনি এ প্রতিবেদককে  বলেন, ব্রিজের মাঝখানে ধ্বসে যাওয়া জায়গায় পাটাতন অংশে সমস্যা দেখা গেলেই নতুন করে সংস্কার করা হবে। এটি ভাল ভাবে দেখভাল করতে আমাদের লোক রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

তাছাড়া ব্রিজে দশ টনের বেশি মালামাল পরিবহন না করতে বলা হয়েছে। নতুন করে ব্রিজের নকশা তৈরি করা হয়েছে। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর দিকে এ ব্রিজের টেন্ডার হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। বড় ধরণের কোন সংস্কার না করার আগে যতটুকু বালির বস্তা রয়েছে তা কিছুটা হলেও রক্ষা করবে বলেও তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন