চকরিয়ায় কমছে পানি, ভেসে উঠছে ভাঙ্গা সড়ক

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় ভারি বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার পরিস্থিতি সোমবার থেকে ক্রমান্বয়ে উন্নতি হয়েছে।

উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও বানের পানিতে ভাসছে উপকূলীয় জনপদের ৫টি ইউনিয়ন। যে সমস্ত ইউনিয়নে এখনো বানের পানিবন্দি অবস্থায় দিনাতিপাত করেছে সে সব ইউনিয়ন গুলি হচ্ছে বদরখালী, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা।

এ সব ইউনিয়নে হাজার হাজার পরিবার আঞ্চলিক মহাসড়কে তাবু টাঙ্গিয়ে মানবেতর জীবন অতিবাহিত করছে।বানের পানি কমার সাথে সাথে বন্যা দুর্গত জনপদে বাড়ছে জনদুর্ভোগ। এ বারের সৃষ্ট বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট, ছোট কালভার্টসহ অসংখ্য অভ্যান্তরীণ সড়ক ও উপসড়ক। উপরিভাগ থেকে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে নানা ক্ষতচিহ্ন।

বিশেষ করে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ একেবারে ভেঙে পড়েছে। কোথাও পিচঢালা সড়ক, আবার কোথাও ইটের সড়কের বিশাল অংশজুড়ে বড় বড় ক্ষতের সৃষ্টি হওয়ায় বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষের চলাচলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে। গত পাঁচদিন ধরে সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে উপজেলার ১৮ ইউনিয়নের।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের চকরিয়া উপজেলা প্রকৌশলী রণি সাহা বলেন,উপজেলার ইউনিয়নগুলো থেকে এখনো পুরোপুরিভাবে বানের পানি নেমে যায়নি। এ কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ঠিকভাবে নিরুপণ সম্ভব হচ্ছে না। অবশ্য পানি নেমে যাওয়ার পর দুয়েকদিনের মধ্যে এ ক্ষতি নিরুপণ করে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে কাকারা ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ ৭/৮টি সড়ক। তন্মধ্যে অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ শেষে সম্প্রতি উদ্বোধন হওয়া মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ছিদ্দিকী সড়কটির বেশি ক্ষতি হয়েছে। এতে ওই সড়কসহ সবকটি সড়কে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

চকরিয়া-পেকুয়া উন্নয়ন ফোরামের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান চৌধুরী মানিক বলেন, মাতামুহুরী নদী তীরের অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিকলঘাট-কৈয়ারবিল সড়কের কয়েক কিলোমিটারজুড়ে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাচল করাও সম্ভব হচ্ছে না। অতিসত্বর এটিসহ সব সড়ক চলাচল উপযোগী না করলে জনদুর্ভোগ আরও বাড়বে।

বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, এ ইউনিয়নের এমন কোনো সড়ক নেই যা বানের পানিতে ক্ষতবিক্ষত হয়নি। যেদিকে চোখ যায় শুধু ক্ষতচিহ্নই ভেসে উঠছে। এতে সড়ক যোগাযোগ একেবারে বিচ্ছিন্ন থাকায় নৌকাযোগে জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করছে বানভাসি মানুষ।সড়কের ওপর দিয়ে ব্যাপকভাবে বানের পানির স্রোত বয়ে যাওয়ায় ভেঙে গেছে সড়ক। এতে জনগণের চলাফেরায় দুর্গতি বেড়েছে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক। এ অবস্থায় অনেক স্থানে এখনো পানি রয়ে গেছে। তাই বানের পানি পুরোপুরি নেমে গেলে এসব সড়ক চলাচল উপযোগী করার কাজে হাত দেওয়া হবে। তবে যেসব সড়কে বড় ধরনের খাদ সৃষ্টি হয়নি তা দুয়েকদিনের মধ্যে সচল করে দিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম বলেন, পানি নামতে শুরু করলেও বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় গ্রামীণ সড়কগুলোর সংস্কার কাজ দ্রুত করা যাচ্ছে না।তবে মানুষের যাতে কষ্ট কম হয় সেজন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে বেশ তৎপর রয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন