চকরিয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবহেলিত জনপদের নাম শাহওমর নগর
চকরিয়া প্রতিনিধি:
কক্সবাজারের চকরিয়ায় যোগাযোগ ও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত একটি নিভৃত এলাকার নাম হচ্ছে শাহওমর নগর। মাত্র দেড় কিলোমিটার রাস্তার জন্য গ্রামের প্রায় তিন হাজার মানুষ বর্ষায় পানিবন্দী থাকতে হয়। চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কি. মি. দূরত্বে এই গ্রামটিতে কালের পরিক্রমায় দিনের পর দিন মানুষের আবাসস্থলের মাধ্যমে গড়ে উঠে হাজারো বসতি। গ্রামটি উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড় শাহওমর নগর হিসেবে পরিচিত।
অবহেলিত এ ওয়ার্ডে এখনও পর্যন্ত তেমন কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। নিভৃতি এই পল্লী গ্রামে এখনও কোন ধরনের যানবাহন যেতে পারে না। একটি সড়কেই পাল্টে দিতে পারে এই গ্রামের চিত্র। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হলে এখানকার মানুষের জীবনমান সহসাই পরিবর্তন হবে এবং কৃষিপণ্যসহ বিভিন্নক্ষেত্রে গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখবে। গ্রামের মানুষ “হেমন্তে পায়ে হেঁটে, বর্ষায় নৌকা” এই প্রবাদ বাক্যের সাথে সম্পৃক্ত। এই গ্রামের মানুষের বর্ষাকাল ছাড়াও তাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে নৌকা। গ্রামটিতে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষার আলোবঞ্চিত হচ্ছে শত শত কিশোর-কিশোরী।
শাহওমর নগর গ্রামবাসীর কাছে বিদ্যুতের আলো যেন স্বপ্নের মত। সন্ধ্যার পরেই গ্রামের মধ্যে সৃষ্ঠি হয় এক ভূতুরে পরিবেশ।এ গ্রামটিতে বসবাস করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার তিন সহস্রাধিক মানুষ। প্রতি বর্ষাতেই গ্রামের লোকজন, স্কুলগামী কিশোর -কিশোরীদের পানিবন্দী অবস্থায় চরমদূর্ভোগে পড়েন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে আধুনিকতার ছোয়া সর্বত্র লাগলেও চট্রগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে গ্রামটির লোকজন নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শুধু একটি সড়কের জন্যই গ্রামের এতসব দূর্ভোগ। গ্রাম থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দুরে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পৌর শহর। এ গ্রামে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কোন মূমূর্ষ রোগিকে জরুরী অবস্থায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
স্থানীয় গ্রামবাসী জানান, প্রতিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা রাস্তা করে দিবেন বলে ভোট আদায় করলেও জয়ী হয়ে আমাদের কথা মনে রাখেনা কোন জনপ্রতিনিধি। গ্রামের প্রবীন মুরুব্বী মো. আলী বলেন, এখানে বসতি স্থাপনার পর থেকে আমাদের দুঃখ দূর্দশা লেগেই আছে। সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ও মধ্য আয়ের দেশের কথা বললেও আজ পর্যন্ত আমাদের গ্রামটি অন্ধকারেই রয়ে গেল। শাহওমরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী নাসরিন জানান, আমরা প্রতিদিন অত্যন্ত কষ্ট করে স্কুলে আসা যাওয়া করি নৌকা পারাপার করে। বৃষ্টির দিন হলে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয় না।
কাকারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. শওকত উচমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, গ্রামটির উন্নয়নের ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট আন্তরিক রয়েছি। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে পরিষদের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকবার সংস্কারও করা হয়। কিন্তু মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ী ঢলের বন্যায় সড়কটি পানির তোড়ে নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে শাহওমর নগর গ্রামের সড়কটি ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন থেকে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অতি দ্রুতসময়ে সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সাহেদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ওই গ্রামটি সর্ম্পকে আমি অবগত নই। এরপরও বিষয়টি আমি গুরুত্বসহকারে দেখবো। যাতে কোন ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উক্ত গ্রামের চলাচলের রাস্তাটি উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।
চকরিয়ায় অবহেলিত জনপদের নাম শাহওমর নগর