চকরিয়ায় ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতি ২১৭ কোটি টাকা

চকরিয়া প্রতিনিধি:

জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের বন্যায় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৮ ইউনিয়নে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে ২শত ১৭ কোটি ৬ লাখ ৮২ হাজার ৭ শত টাকা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হাসান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখিত পরিমাণ অংকের ক্ষয়ক্ষতির বিবরণ জানানো হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত দপ্তরগুলো হচ্ছে, সড়ক বিভাগ, এলজিইডি, প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, মৎস্য ও কৃষি অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ, পশু সম্পদ বিভাগ, বনবিভাগ ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বানভাসী লোকজন।

তাদের দেয়া পরিসংখ্যানে জানা যায়, চকরিয়ায় ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪ শত ৬৫ জন জনগণের মধ্যে পুরুষ হচ্ছে ১ লাখ ৬৬ হাজার ৫ শত ২৩ জন, নারী ১ লাখ ৬৫ হাজার ৪ শত ৫৬ জন ও শিশুর সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ৪২ হাজার, ৪ শত ৮৬ জন। মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৩০ জন। তন্মধ্যে নারীর সংখ্যা ৫০০ পুরুষ ৩৮০ ও শিশু ১৫০। মোট বসতবাড়ির সংখ্যা হচ্ছে ৮৮ হাজার ৩৯১ টি।

সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে ১৭ হাজার ১ শত ৪৩। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা হচ্ছে ২৫ হাজার ৭ শত ১৪। এসব পরিবারগুলো মধ্যে ৭ হাজার ৩ শত ৭ পরিবার পাকা ঘরে বসবাস করে, ১০ হাজার ৪ শত ৭৭ পরিবার বসবাস করে আধাপাকা ঘরে ও সম্পূর্ণ কাঁচা ঘরে বসবাস করে ৭০ হাজার ২ শত ৬৩ পরিবার।

এবারের বন্যায় আধাপাকা ঘরে বসবাসরত ৬৫ শতাংশ মানুষের, কাঁচাঘরে বসবাসরত ২ হাজার ৫ শত ৫ পরিবারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে সরকারিভাবে ক্ষতির নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ কোটি টাকা।

এ উপজেলায় দুর্যোগকালীণ আশ্রয় নেওয়ার জন্য ৮১ টি আশ্রয় কেন্দ্র রয়েছে। এবারের বন্যায় ১৭ হাজার ৫শ’ জন লোক আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিল। এ উপজেলায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৬ শত ৬৮ টি গরু, ৪ হাজার, ৩ শত ৬৫ টি মহিষ, ৩৬ হাজার ৩১ টি ছাগল, ৪ হাজার ৮৯ টি ভেড়া, ৭ শত ৮০ টি হাঁস, ১৫ হাজার, ৭ শত ৪৪ টি মুরগি রয়েছে।

বন্যার সময় এসব পশু সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ উপজেলায় শষ্য ক্ষেত রয়েছে ৫১০ হেক্টর, বীজতলা রয়েছে ৪০ হেক্টর, চিংড়ি জমি রয়েছে ২ হাজার ৬ শত ৯৩.৬৭ হেক্টর।

এসব খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯৬ কোটি ৪৮ লক্ষ ৬৩ হাজার ৫শত টাকা। বিদ্যুৎ বিভাগে ১৬ টি খুঁটি ও ৩ টি ট্রান্সফরমার ক্ষতি হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করা হয়েছে ২৮ লক্ষ টাকা।

২৮টি মসজিদ, ১২টি মন্দিরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে মসজিদ খাতে ১৪ লাখ ও মন্দির ৬ লাখ টাকা। পাকা সড়ক ক্ষতি হয়েছে সম্পূর্ণভাবে ২৪.৫০ কিলোমিটার। ক্ষতির পরিমাণ ৯ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পাকা সড়কের পরিমাণ হচ্ছে ২৩.৫০০ কিলোমিটার।

ক্ষতি পরিমাণ ২ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। ইট/খোয়া দ্বারা নির্মিত সড়ক সম্পূর্ণভাবে ১৫.৭১ কিলোমিটার। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি ৯৯ লক্ষ ৭০ হাজার। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিমাণ ৬ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা সড়কের পরিমাণ ৩০.৮৩ কিলোমিটার। ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৮ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।

আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কাঁচা সড়কের পরিমাণ ৬৬. ১০ কিলোমিটার। ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৩০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। মোট ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পথ হচ্ছে সম্পূর্ণ ৭১.০৪ কিলোমিটার। এতে ক্ষতির পরিমাণ ২৩ কোটি ৮৮ লক্ষ টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক পথ হচ্ছে ১০০.৬০ কিলোমিটার। এতে ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ১২ কোটি ৪২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।

উপকূলের বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ০.৪৫০ কিলোমিটার। ক্ষতির পরিমাণ ৪৫ লক্ষ টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ হচ্ছে ২ কিলোমিটার। এতে ক্ষতির পরিমাণ হচ্ছে ১ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।

এ উপজেলায় বনভূমি রয়েছে ৩হাজার ৯ শত ২৭ হেক্টর। বানে পানিতে বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

উপজেলায় ১৪১ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩৪ টি উচ্চ বিদ্যালয় ও ৩২ টি মাদরাসা রয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ২৬ টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ক্ষতিগ্রস্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের সংখ্যা হচ্ছে ২৪ টি। ক্ষতির পরিমাণ ১২ লক্ষ টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত কলেজের সংখ্যা হচ্ছে ৩ টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ১০ লক্ষ টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত মাদরাসার সংখ্যা হচ্ছে ১০ টি। ক্ষতির পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা।

এ উপজেলায় সরকারিভাবে বরাদ্দ দেয়া গভীর নলকূপের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৮ শত ৯৭ টি ও অগভীর নলকূপের সংখ্যা হচ্ছে ২ হাজার ৮ শত ৪৫ টি এবং হস্তচালিত নলকূপের সংখ্যা ৪ হাজার ৭ শত ২ টি। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গভীর নলকূপের সংখ্যা ১৮২ টি সম্পূর্ণ, আংশিক ১৪০ টি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উপজেলায় স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানার সংখ্যা হচ্ছে ৫৩ হাজার ৪ শত ৬০ টি। এতে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪ হাজার ২ শত ৫৫ টি। যার ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয় ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত পায়খানার সংখ্যা হচ্ছে ১৭ হাজার ২১ টি। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৩ কোটি ৪০ লাখ ৪২ হাজার টাকা।

এ উপজেলায় পুকুরের সংখ্যা হচ্ছে ১ হাজার ৯ শত ১ টি। মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ ৫৭ কোটি ৩ লক্ষ টাকা। এ উপজেলায় একটি হাসপাতাল ও ৪৪ টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৪৯ হাজার টাকা।

উল্লেখিত খাতসমূহে গেলো বন্যায় সরকারিভাবে দেখানো হিসাবমতে ২ শত ১৭ কোটি ৬ লক্ষ ৮২ হাজার ৭শত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জোবায়ের হাসান।

এদিকে অবিলম্বে বাঁধ, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন কক্সবাজার-১ চকরিয়া-পেকুয়া আসনের এমপি মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ, উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম বি.এ (অনার্স) এম.এ, পৌর মেয়র মোহাম্মদ আলমগীর চৌধুরী ও চকরিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি আবদুল মজিদ প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন