চকরিয়ায় বাবা-মেয়ে প্রার্থী, লড়াই নাকি কৌশল

চকরিয়া প্রতিনিধি:

আগামী ৩০ ডিসেম্বর আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ও স্বতন্ত্রসহ আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। কিন্তু রোববার (৯ ডিসেম্বর) শেষদিনেও মনোনয়নপত্র জমা দেয়া আট প্রার্থীর কেউই তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান।

তিনি বলেন, ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিলো। এইদিন চকরিয়া-পেকুয়া আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা আটজন প্রার্থীর কেউই প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি। ফলে আট প্রার্থীই এখন নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে চকরিয়া-পেকুয়া (কক্সবাজার-১) আসনে সংসদ নির্বাচনে লড়তে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে ও স্বতন্ত্রসহ আটজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।

প্রার্থীরা হলেন- চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপাতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম, সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ, জাতীয় পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান সাংসদ মো.ইলিয়াছ, ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা হাজি আবু মো.বশিরুল আলম, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (বিএনএ) ফয়সল চৌধুরী, ইসলামী শাসনতন্ত্রের মাওলানা আলী আজগর, স্বতন্ত্র বদিউল আলম ও তানিয়া আফরিন।

মহাজোটের শরীক জাতীয় পাটি ও ওয়ার্কাস পাটির মতো প্রার্থীতা প্রত্যাহার করেননি স্বতন্ত্র তানিয়া আফরিন। তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ জাফর আলমের বড় মেয়ে। প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করার ফলে স্বাভাবিক কারণে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন স্বতন্ত্র তানিয়া আফরিন। সেই কারণে বর্তমানে ভোটারদের মাঝে নতুন করে কৌতুহল তৈরী হয়েছে। আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী বাবার বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী তানিয়া আফরিন কতটা সফল হবেন।

অবশ্য অনেকে বলেছেন, বাবার বিপক্ষে নয়, তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনী বৈতরণি পার হতে বাবাকে সহযোগিতা করতেই কৌশলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তানিয়া আফরিন।

নির্বাচনের মাঠে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে বিএনপির একক প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ থাকলেও মনোনয়ন পত্র জমা দেয়া মহাজোটের আওয়ামী লীগ, অন্যতম শরীক জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ও ওয়ার্কার্স পার্টিও তিন প্রার্থী কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি। তবে মাঠ পর্যায়ে এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী নিয়ে বিভ্রান্তি থাকলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে দলের চুড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন সদ্য সাবেক চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাফর আলম।

অপরদিকে জাতীয় পাটির (এরশাদ) পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে তাদের দলের জনপ্রিয় প্রার্থীরা মহাজোটের শরীক হিসেবে ৩০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ওই ৩০টি আসনের মধ্যে জাতীয় পাটির ব্যানারে কক্সবাজার জেলার চারটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন সেই ধরনের কেউ নেই। অবশ্য ৩০ আসনের পাশাপাশি জাতীয় পাটির প্রার্থীরা লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১৩২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সেই ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ থেকে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে।

সেই হিসেবে উন্মুক্ত করে দেয়া আসনের কোটায় চকরিয়া-পেকুয়া আসনে বর্তমান এমপি জেলা জাতীয় পাটির (এরশাদ) সভাপতি হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াছ লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করবেন এটা অনেকটা পরিস্কার।

অন্যদিকে মহাজোটের অপর শরীকদল বাংলাদেশে ওর্য়ার্কাস পাটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি হাজি আবু মো.বশিরুল আলম মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।  শেষদিনেও তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। ফলে হাতুড়ি প্রতীকে তিনিও এ আসনে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী হাজী আবু মো.বশিরুল আলম বলেন, নির্বাচন হবে ৩০ ডিসেম্বর। মাঝে অনেক সময় রয়েছে। মাঠের পরিস্থিতি বুঝে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, চকরিয়া-পেকুয়া আসনে নির্বাচন করতে আমাকে অনুমতি দিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচন বোর্ড। জোট-মহাজোট যাই হোক আমি আওয়ামী লীগ নেতা, আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরিচয় দিয়েই নৌকা প্রতিক নিয়ে নির্বাচন করবো। সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, এখন আওয়ামী লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও আরাম-হারাম করে কাজ করছে দীর্ঘ ৪৩ বছর পর নৌকা প্রতিককে বিপুল ভোটে জয়ী করে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দেয়ার জন্য। সেইজন্য আমাদের অভিরাম নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন