চকরিয়ায় ড্রেনের পানিতে তলিয়ে স্কুলমাঠ, তিন বছরেও নেই সংস্কারের উদ্যোগ

চকরিয়া প্রতিনিধি:

চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ উপজেলা সদরের একমাত্র পুরনো একটি মাঠ। এই মাঠে একসময় প্রতিদিন নানা খেলাধুলায় মত্ত থাকতো শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে আশপাশের এলাকার তরুণ কিশোররা।প্রতিবছর স্থানীয় ক্রীড়া সংগঠকরা উদ্যোগী হয়ে মাসব্যাপী এ মাঠে টুর্নামেন্টের আয়োজন করতেন।

তবে সময়ের পরিক্রমায় এখন সেই দৃশ্য আর নেই। খেলাধুলার পাশাপাশি রাজনৈতিক দলের বিশাল সমাবেশ কিংবা জনসভাও হতো এ মাঠে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এই মাঠে জনসভা করেছেন। বলতে গেলে এখন চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে আর খেলাধুলা হয় না। তাঁর কারণ হচ্ছে বর্তমানে মাঠটি এক থেকে দেড় ফুট পানির নিচে তলিয়ে। মাঠের একপাশে গরুর বিচরণ। পশ্চিম ও উত্তর পাশে দুতলা দুটি ভবন। এ মাঠে তিন বছর আগেও নিয়মিত ফুটবল খেলত কিশোর ফুটবলাররা। এখন সেই সুযোগ নেই। প্রায় তিন বছর ধরে এখানে বন্ধ রয়েছে সব ধরণের খেলাধুলা।

জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলা সদরের প্রাণকেন্দ্রে ১৯৩০ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৭ সালে এটি সরকারিকরণ হয়। বর্তমানে সরকারিভাবে সাতজন ও পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক রয়েছেন।

সূত্রে জানা যায়, গত ৩ জুলাই জলাবদ্ধতা নিরসনে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম আহাদ মো. এনামুল হক চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরীকে চিঠি দিয়েছেন। ২৪ জুলাই জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তার কাছেও মাঠটি ভরাট করে খেলার উপযোগী করার দাবি জানিয়ে চিঠি দেন প্রধান শিক্ষক।

স্থানীয় বাসিন্দা ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলেন, বিদ্যালয়ের মাঠটি গত তিন বছর ধরে জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। মাঠের পূর্ব পাশে শমশের পাড়া ও চিরিংগা পৌর শহরের ড্রেনের মুখ। এই ড্রেন দিয়ে পৌর শহরের ময়লা-আবর্জনার পানি ঢুকেপড়ে বিদ্যালয়ের মাঠে। পুরো বর্ষা মৌসুমে শহরের পানি ঢুকে জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে মাঠটি।

বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র রিফাত মাহমুদ বলেন, বিদ্যালয়ে মাঠ থাকা স্বত্ত্বেও তারা খেলতে পারছে না। মাঠে পানি ও ঘাসে ভরপুর। মাতামুহুরীর চর বা অন্য কোনো মাঠে গিয়ে খেলতে হচ্ছে তাদের। এতে নানা দুর্ঘটনা ঘটছে।

শমশের পাড়ার বাসিন্দা মুহাম্মদ জিয়াউদ্দিন ফারুক বলেন, দুই মাস আগে শমশের পাড়ার ড্রেনটি মূল ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত করতে পৌর মেয়রকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত পৌর কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি।

গত ১৪ জুলাই মাতামুহুরী নদীর চরে ফুটবল খেলতে গিয়ে নদীর পানিতে ডুবে মারা যায় গ্রামের স্কুলের পাঁচ ছাত্র। এর পর ইসবমহল থেকে বিদ্যালয়ের মাঠ সমূহ খেলার উপযোগী করার দাবি উঠে। ওই সময় কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন সরেজমিনে চকরিয়া গিয়ে সব খেলার মাঠকে উপযোগী করার নির্দেশ দেন স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে।

চকরিয়া সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএএম এনামুল হক বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র মাঠপরির্দশন করেছেন। তাঁরা অল্প সময়ের মধ্যে মাঠ ভরাটের আশ্বাস দিলেও তা এখনো দৃশ্যমান হচ্ছেনা।

প্রধান শিক্ষক এনামুল হক আরও বলেন, পৌরসভার দুটি ড্রেনের মুখ বিদ্যালয়ের মাঠে দেওয়া হয়েছে। এ কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মাঠে পানি ঢুকলেও তা বের হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। পৌর কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে বিষয়টি জানানো হয়েছে। নতুন করে ড্রেন নির্মাণ করে ড্রেনের মুখ দুটি মূল ড্রেনের সঙ্গে যুক্ত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, ‘যে কোনো উপায়ে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ ভরাট করে খেলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হবে। এজন্য বরাদ্দ দিতে স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ইউএনও বলেন, আগে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ময়লা-আবর্জনা ফেলতো বিদ্যালয় প্রাচীরের ভেতরে। ভ্রাম্যমান আদালত অভিযান চালিয়ে কয়েক জনকে জরিমানার পর এখন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হয় না।

চকরিয়া পৌরসভার মেয়র আলমগীর চৌধুরী বলেন, ‘পৌরসভার যে দুটি ড্রেনের মুখ রয়েছে, তা অনেক আগে নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো আমার আমলে নয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানানোর পর একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। প্রকল্পটি পাস হলে নতুন ড্রেন নির্মাণ করে মূল ড্রেনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।’

জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, শৈশবে চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সব বয়সের মানুষ বিকাল বেলা খেলাধুলা করতো। এক সময় চকরিয়া উপজেলা সদরের এই মাঠটি খেলাধুলা ছাড়াও প্রশাসনের যে কোন অনুষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশ আয়োজনে ব্যবহার হতো। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের অবহেলার কারনে বর্তমানে খেলার মাঠটি অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, চকরিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের এই মাঠটি চালু থাকলে পাশের গ্রামের স্কুলের দুরন্ত কিশোর শিক্ষার্থীরা ফুটবল খেলতে মাতামুহুরী নদীর চরে যেতো না। সেইদিন সলিল সমাধির মতো ঘটনায় আমরা পাঁচটি তাজা প্রাণ হারাতাম না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন