চকরিয়ায় ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভবন নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থপনা মন্ত্রণালয়ের অধীনে উপকূলীয় ও ঘুর্ণিঝড় প্রকল্প এলাকা ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) তিন তলা ভবন নির্মাণ কাজে ব্যাপক অনিয়ম চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্মমানের ইট, ময়লাযুক্ত বালি, কংকর, সিমেন্ট ও মরিচিযুক্ত পুরনো লোহা। নিয়োগকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ অনিয়মের অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন পূর্ব বড় ভেওলা সিকাদার পাড়ার বাসিন্দা মো. কলিম সিকদার।

জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের সিকদার পাড়ার জয়নাল আবেদীন মুহিউছুন্নাহ দাখিল মাদ্রসায় ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের কার্যাদেশ পায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স হালিনী ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

উক্ত ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের ভবন নির্মাণ কাজের গুণগত মান বজায় না রেখে সরকারি সিডিউলের নির্ধারিত সরঞ্জামাদি দেয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এসবের তোয়াক্কা না করে তার ইচ্ছামতো নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে ভবন তৈরীর কাজ করছেন। সিডিউল অনুযায়ী ৭৮০.০৮ বর্গমিটার আয়তনের তিনতলা ভবন নির্মাণের কাজ দায়সারাভাবে তড়িগড়ি করে কাজ শেষ করার অপচেষ্টাও চালাচ্ছে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ন ক্দ্রে নির্মাণ প্রকল্প (২য় পর্যায়ে)  প্যাকেজ নং-ডিডিএম/এমসিএস-২/০১৭৫ স্বারকে এ ভবন নির্মাণে দুই কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার  ১শত ৯৬ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের তত্ত্বাবধানে উক্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।

অভিযোগকারী কলিম সিকদার আরো দাবি করেন, উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তার কার্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারের উপস্থিতিতে রাতের বেলায় ময়লাযুক্ত বালি ও নিন্মমানের কংকর মিশিয়ে মিস্ত্রিরা ডালাইয়ের কাজ করেন। এলাকার লোকজন এ ব্যাপারে মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলেও ঠিকাদার ও বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন এসবের  কোন তোয়াক্কা করেনা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মালিক মো. ফরিদ বলেন, সব সাংবাদিকের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক রয়েছে। কিন্ত আপনাকে কোনদিন দেখি নাই। আপনি লিখলে কিছু হবেনা। আমরা সব জায়গায় কমিশন দিয়ে কাজ করি। এখন কাজে ব্যস্ত আছি পরে ফোন দিবেন বলে লাইন কেটে দেন।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, প্রতিটি প্রকল্পের কাজে সাইট নোটবুক দেয়া আছে। সে অনুযায়ী  প্রকল্পের কাজের উপকরণ ব্যবহার বিধি বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেয়া আছে। যদিও কাজে অনিয়ম দেখা যায় তা ব্যবস্থা নেয়া হবে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ পাওয়ার পর মঙ্গলবার সকালে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। এসময় ময়লযুক্ত বালি দেখতে পাওয়ায় তিনি এসব বালি না মিশানোর জন্য নিষেধ করেন।

তিনি আরো বলেন, প্রকল্প কর্মকর্তার সাথে কথা বলে কাজে অনিয়ম হলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

অপরদিকে স্থানীয় লোকজন উপকুলীয় ও ঘুর্ণিঝড় প্রকল্প এলাকার  ঘুর্ণিঝড় আশ্রয়ন কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়গুলো সরেজমিনে তদন্তের জন্য প্রকল্পের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন