চকরিয়ার শীর্ষ ইয়াবা কারবারীরা অধরা, সচেতন মানুষ হতাশ

চকরিয়া প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের চকরিয়ার পৌরসভার মাদকপাড়া খ্যাত ‘৮নং ও ৯নং ওয়ার্ডের’ শীর্ষ ইয়াবা কারবারীরা এখনো অধরা রয়ে গেছে।

সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানে মুখেও ওই সব ইয়াবা কারবারীরা আড়ালে চলে গেলেও বন্ধ হয়নি তাদের ইয়াবার ব্যবসা। মাদক ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন কৌশলে রুট বদল করে বীর বেশে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

প্রায় সময় র‌্যাব ও পুলিশের ধারাবাহিক অভিযানে ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। চকরিয়ার ইয়াবা ব্যবসার নেপথ্যে কারা তাদের পাকড়াও করতে পুলিশের অভিযানও অব্যাহত রেখেছে। মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে চকরিয়ায় ইয়াবা কারবারীদের আইনের জালে আটকানোর দাবি জানান সচেতন মহল।

তবে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, যারা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত আছেন। তাদের এক বিন্দু ছাড় দেওয়া হবে না। আইনের আওতায় পাকড়াও করা হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সারা দেশে পুলিশ ও র‌্যাবের মাদকবিরোধী অভিযান চলমান রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক কারবারীরা নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হচ্ছেন। গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষ অনেক মাদক ব্যবসায়ীকে। এদের সবাই ইয়াবা ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত ছিল।

তেমনি চকরিয়ার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের কয়েকটি গ্রাম ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আস্তানা রয়েছে। ওই ওয়ার্ডের ভাঙ্গারমুখ এলাকায় কয়েকটি সিন্ডিকেট মূল ইয়াবা গডফাদাররা মূল হোতা হিসেবে কাজ করছেন বলে জানান এলাকাবাসী। তাদের সিন্ডিকেটের অনেক সদস্য বিভিন্ন সময় ইয়াবাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে আছে।

ওই সিন্ডিকেটের একজন মাদক কারবারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে শীর্ষ গডফাদার হিসেবে তালিকাভূক্ত। মূলত পৌরসভার ভাঙ্গারমুখ এলাকাটি এখন ইয়াবা ব্যবসায়ীদের ‘আতুর ঘর’ হিসেবে চিহ্নিত।

কক্সবাজারের টেকনাফ ও বান্দরবানের সীমান্ত ইয়াবা আসে। এরপর সড়ক, সাগর, আকাশপথ ও পাহাড়ি পথে ইয়াবা চালান সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে।

এ কারণে কক্সবাজারের প্রবেশ মুখ চকরিয়া হয়ে বিভিন্ন জায়গা ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ইয়াবা কারবারী বেঁছে নিয়েছে তারা। টেকনাফের ইয়াবার গডফাদারের মতো চকরিয়া কয়েকজন শীর্ষ গডফাদার রয়েছে। এদের মূল আস্তানা এখন ভাঙ্গারমুখ। চিরিংগা কয়েকটি এলাকা আগে মাদক পাড়া হিসেবে খ্যাত থাকলেও, তারা এখন পুলিশি অভিযান এড়াতে পাশ্ববর্তী ৯নং ওয়ার্ডকে বেঁছে নিয়েছে।

চকরিয়ায় ইয়াবা ব্যবসা করে অনেক মাদক ব্যবসায়ী রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছে। চকরিয়ার পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের অনেক ইয়াবা কারবারী গাড়ি-বাড়ি কোটি কোটি মালিক বনে গেছেন। আলিশান বাড়িও নিমার্ণ করেছে। এমন কথা এখন পুরো চকরিয়া জুড়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন অভিব্যক্তি তুলে ধরছেন সাধারণ মানুষ।

সাধারণ মানুষের আলাপচারিতায় উঠে আসছে অল্প সময়ে এত টাকা মালিত বনে যাওয়ার উৎস কোথায়! আরো নানা কথা। তাদের সম্পদের বিষয়ে তদন্তে নামার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকার সচেতন মহল।

সাধারণ মানুষের দাবি, যারা মাদকের বিস্তার ছড়িয়ে দেশ ও যুব সমাজকে ধ্বংস করছে তাদের আইনের আওতায় এনে কটিন শাস্তির মুখামুখি করতে হবে। চকরিয়ার ভাঙ্গারমুখ, খুটাখালী ও বদরখালীসহ আরো কয়েকটি পয়েন্টে ইয়াবার চালান হাত বদল হয়। চকরিয়ায় বসে কয়েকজন গডফাদার টেকনাফ থেকে ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এসব ইয়াবা কারবারিদের অনেকে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বেশ কয়েকবার তাদের বাড়িতেও অভিযান চালায়।

সূত্র জানায়, চকরিয়া পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের শীর্ষ গডফাদাররা এখনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছে। ওই গডফাদারের বিরুদ্ধে ইয়াবাসহ অসংখ্য মামলা রয়েছে। তারা ফেরারী আসামীও। ওই ইয়াবা গডফাদারদের সাথে সব সময় বন্দুকধারী থাকায় সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে পারছে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ধরতে না পারায় সাধারণ মানুষ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এই নিয়ে সাধারণ মানুষ নানা প্রশ্ন তুলছে।

তবে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে চকরিয়ার শীর্ষ ইয়াবা কারবারি হিসেবে নাম উঠে এসেছে। কয়েকজন গডফাদারের নামও আছে ওই তালিকায়। সংস্থাগুলোর তালিকায় তাদের অনেক সহযোগীদের নামও রয়েছে।

চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে। মাদকের প্রসার ও বেচাকেনা ঠেকাতে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। সারা দেশের মত চকরিয়ায়ও মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে থানা পুলিশ।,

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: চকরিয়ার শীর্ষ ইয়াবা কারবারীরা অধরা, সচেতন মানুষ হতাশ
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন