ঘূর্ণিঝড় কোমেনের অগ্রভাগের আঘাতেই কক্সবাজারে ৫ জনের মৃত্যু

Sent

স্টাফ রিপোর্টার:

ঘূর্ণিঝড় কোমেনের অগ্রভাগের আঘাতে বৃহস্পতিবার ভোরে সেন্টমার্টিনে গাছের নিচে চাপা পড়ে এক ব্যক্তি মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এর আগে বুধবার মহেশখালীতে শিশুসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। টেকনাফ সদর উপজেলার প্রায় ২০টি গ্রাম ও সেন্টমার্টিন দ্বীপের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঝড়ে সেন্টমার্টিনে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ ও সেন্টমার্টিন প্রবল ঝড়ো হাওয়ায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গাছ-বাঁশ দ্বার ও কাচাঘরে নির্মিত সব ধরণের বাড়ী বাতাসের সাথে উড়ে গেছে। ধসে পড়েছে দ্বীপের অধিকাংশ গাছগাছালি। নোঙর ছিঁড়ে হারিয়ে গেছে সাগরতীরে অবস্থানরত নৌকা-ট্রলারসমূহ। বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে প্রবল ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। মানুষ ঘরবাড়ী থেকে বের হতে পারছেনা।

ঘূর্ণিঝড় কোমেনের অগ্রভাগ বুধবার মধ্যরাতের পর সেন্টমার্টিন ও টেকনাফ উপকূলে আঘাত হেনে উত্তর-পূর্বদিকে এগিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর এবং মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ৫ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, ঘূর্ণিঝড়টি বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টার দিকে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিম, কক্সবাজার থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিম, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ২০০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণ পূর্ব ও পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে অবস্থান করছে। দুপুরের দিকে এটি চট্টগ্রাম উপকূল পার হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার। এটি দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। উপকূলের বেশির ভাগ এলাকায় ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি চলছে। জোয়ারের পানি বেড়েছে।

এ ব্যাপারে প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান জানান, দ্বীপের ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ী ও গাছপালা ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘর থেকে বাহির হওয়ারও কোন সুযোগ নেই। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম ঝুকিতে রয়েছে দ্বীপবাসী। প্রচুর পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে। এর পরিমাণ নির্ণয় করা যাচ্ছে না। স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই হারুনর রশিদ জানান, আমরা বের হওয়ার সাহসও পাচ্ছি না। আপাতত কিছুই করা যাচ্ছে না। বাতাস থামলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। লোকজনকে নিরাপদে অবস্থান করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপের সবত্রই গাছপালা ভেংগে একাকার হয়ে পড়েছে। সমস্ত দ্বীপবাসী বর্তমানে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় পরিবেশ গুমোট আকার ধারণ করেছে। আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। বৃষ্টিপাত বন্ধ আছে। বাতাসও বন্ধ। তবে মাঝে মাঝে দমকা আকারে বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও এই এলাকায় সারারাত বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেন্টমার্টিনে ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে দাবি করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, দ্বীপের ৯০ শতাংশ ঘরবাড়ি ও গাছপালা ধ্বংস হয়ে গেছে। ঘর থেকে বের হওয়ারও সুযোগ মিলছে না। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছেন দ্বীপবাসী। তার দাবি, দ্বীপের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তার পরিমাণ নির্ণয় করা সম্ভব নয়।

সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) হারুনুর রশিদ সাংবাদিকদের জানান, তারাও ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। আপাতত কিছুই করা যাচ্ছে না। বাতাস থামলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।তবে লোকজনকে নিরাপদে অবস্থান করার জন্য ইতোপূর্বেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। ঘূর্ণিঝড় কোমেনের প্রভাবে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, নাই টংপাড়া, দক্ষিণ জালিয়াপাড়া, ইসলামাবাদ, ফলিয়াবাদসহ ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ।

তিনি বলেন, মানুষজনকে বুধবার রাত থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ফুট পর্যন্ত বেড়েছে। টেকনাফ থানার ওসি মো. আতাউর রহমান খন্দকার বলেন, ঝড়ো বাতাসে সেন্টমার্টিন দ্বীপে শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে ও নারকেল গাছ ভেঙে পড়েছে। সেন্টমার্টিনে ভোরে গাছের নিচে চাপা পড়ে মো. ইসলাম (৫০) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন বলেও জানান তিনি।

ঘূর্ণিঝড় কোমেন ঘিরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন বুধবার রাতে বিশেষ প্রস্তুতি সভা করেছে। সভা শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. অনুপম সাহা সাংবাদিকদের বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই দুর্যোগকালীন আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বুধবার বিকেল থেকেই উপকূলীয় এলাকার মানুষদের নিরাপদস্থানে সরে আসতে মাইকিং করা হচ্ছে। রাতে অধিকাংশ উপকূলীয় মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে সরে এসেছেন। অন্যদিকে টানা বর্ষণ ও সাগরের জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় ও নিচু এলাকায় এক সপ্তাহ ধরে পানির নিচে রয়েছে। এখনো সেই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাননি লাখ লাখ মানুষ।

কক্সবাজারের উপকূলীয় মহেশখালী দ্বীপে নিম্নচাপের প্রভাবে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। বুধবার এই উপজেলায় নিহত হয়েছে শিশুসহ চারজন। আহত হয়েছে শতাধিক। উত্তাল সমুদ্র সোনাদিয়া থেকে কাঁকড়া আহরণ করে ফেরার পথে ট্রলারডুবির ঘটনায় দুই জেলে নিহত হন। এ সময় পানিতে ডুবে আহত হন আরো সাতজন। নিহতরা হলেন- তাজিয়াকাটা কুতুবজোমের জাফর আলমের ছেলে গিয়াস উদ্দিন কালু (৩০) ও বড় মহেশখালীর মগরিয়াকাটা এলাকার ইয়ার মোহাম্মদের ছেলে মোহাম্মদ একরাম (২১)।

বড় মহেশখালীর পাহাড়তলী এলাকায় জনৈক দিনমজুর সৈয়দ নুরের কাঁচাবাড়ি ধসে দেয়াল চাপায় তার পাঁচ বছরের শিশুকন্যা হুমায়রা বেগমের মৃত্যু হয়। এছাড়া সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে বাঁকখালী মোহনায় ট্রলার থেকে পড়ে গিয়ে নিহত হয়েছেন উপজেলার কালামার ছড়ার আব্দুল করিমের ছেলে জেলে আব্দুল করিম (৩০)।

মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল নাসের বলেন, ঘূর্ণিঝড় কোমেনের সতর্কতার পর উপজেলায় ১২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন