ঘুষে ঘুষে বেহাল পানছড়ির হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল

পানছড়ি প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল বছর খানেক ধরে পানছড়ি উপজেলায় আছেন অতিরিক্ত দায়িত্বে।

তাঁর যোগদানের পর থেকেই এই অফিসে শুরু হয় ঘুষ বানিজ্য। ঘুষ না দিলে গ্রাহক হয়রানি যেন তাঁর নিত্য রুটিন। গ্রাহক সেবা তো দূরের কথা ঘুষ দিলে এই অফিসে ফাইলের চাকা সচল, আর ঘুষ না দিলে অচল। সপ্তাহে প্রতি সোমবার কোনো কোনো সময় বৃহস্পতিবারেও তিনি অফিস করেন পানছড়িতে। জেলা কর্মকর্তা হয়েও উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি করে চলেছেন নানান অনিয়ম।

সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দালাল দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছেন অপকর্ম। অথচ গত ১৫/০৭/২০১৪ ইং তারিখে স্মারক নং ডিসিএ/চট্ট/হিসাব/২১(খ-৫)৮৩ মূলে উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের জিপিএফ লেজার/ব্রডসীট রেজিস্টার এবং গুরুত্বপূর্ণ হিসাবের রেজিস্টার ইত্যাদিতে নিজ অফিসের কর্মচারী ব্যতীত বাহিরের লোক দিয়ে না করানোর নির্দেশ প্রদান করা হয়। এর কোনো ব্যতিক্রম ঘটলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে মর্মে ডেপুটি ডিভিশনাল কন্ট্রোলার অব একাউন্টস, চট্টগ্রাম বিভাগ কর্তৃক আদেশ জারী করা হয়। যা সম্পূর্ণ অফিস পরিপন্থী এবং গুরুতর অপরাধ।

কিন্তু এসব নির্দেশাবলীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মো. ইউনুছ (প্রভাত) নামের এক দালালকে অফিসে বসিয়ে চালাচ্ছে অপকর্ম। তাছাড়া অফিসে আইবাস: ২ বহিরাগত দালাল দিয়ে অফিসের ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহারে সিস্টেমে প্রবেশ করে টোকেনসহ বিল পাশ সংক্রান্ত কাজ করানো হচ্ছে। যা খুবই স্পর্শকাতর ও আইবাস:২ নিরাপত্তার অন্তরায়। পক্ষন্তরে অর্থ মন্ত্রণালয়, অর্থ বিভাগ, বাজেট অনুবিভাগ-১, অধিশাখা :৩ কর্তৃক  ০২/০১/২০১৮ তারিখে জারীকৃত পরিপত্র নং-০৭.০০.০০০.১০৩.১৮.০০১.১৫ (অংশ) দুই সংখ্যক পরিপত্রের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অফিসের সরকারী অন্য কর্মকর্তারা এই অফিসের কোনো তদারকীতে নেই। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, হিসাব রক্ষন কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল ঘুষ ছাড়া কোনো ফাইল ধরে না।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে অনেক ভুক্তভোগীর দাবি, তিনি সেবা গ্রহীতাদের বিল থেকে ৫%, নতুন পেনশন কেইস প্রতিটি ৩০,০০০/-, পেনশন বদলী বাবদ ৩,০০০/-, জিপিএফ চুড়ান্ত বিল ১৫,০০০/-, জিপিএফ অগ্রিম বিল ৩,০০০/-, এলপিসি বাবদ ২,০০০/- টাকা করে নজরানা আদায় করে নেন। তাছাড়া এক পরিবার কল্যাণ সহকারীর পেনশন নিষ্পত্তি বাবদ ঘুষ আদায় করেন ৫০,০০০/- টাকা। এই ঘুষখোর কর্মকর্তা অফিসের আসবাবপত্র ক্রয় না করে সম্প্রতি প্রায় এক লক্ষ তেষট্টি হাজার সরকারি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। যা এ অফিসের বিল রেজিস্টার ও মজুদ বহি খতিয়ে দেখলে সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

এ অফিসের চলতি হিসাব নং ৫৪২০৫০২০০০২৬৯ এ গত ২৭ জুন রশিদ নং ৩২৭১৪১, ৪২, ৪৩ ও ৪৪ মূলে সর্বমোট এক লক্ষ চৌষট্টি হাজার পাঁচশত বত্রিশ টাকা জমা করে পরবর্তীতে গোপনে তুলে নেন এক লক্ষ টাকা। যা সোনালী ব্যাংকে হিসাব চেক করলেই সত্যতা বেরিয়ে আসবে।

সম্প্রতি অবসরে যাওয়া এক সরকারি কর্মকর্তা দুঃখের সাথে জানান, অবসরে গিয়েও শান্তি নাই। আমার পাশের অফিস হওয়া সত্বেও জিপিএফ চুড়ান্ত বিল উত্তোলন বাবদ ছয় হাজার ও লাম গ্র্যান্ট বাবদ চার হাজার সর্বমোট দশ হাজার টাকা নজরানা দিয়েছি।

এক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক জানায়, ঋণ পরিশোধের জন্য জিপিএফ থেকে লোন তুলতে এসে সাতশত টাকা ঘুষ দিয়ে কোনো রকম উদ্ধার হয়েছি। ভারত প্রত্যাগত প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছ থেকে ঘুষ আদায় করেছেন দেড় লক্ষাধিক টাকা তাছাড়া জুন ফাইনালেও তিন লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের কথা শুনা গেছে।

এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা জানতে তাঁর কার্যালয়ে গেলে তিনি বলেন, অসম্ভব ব্যপার। আমি আর অল্প কয়েকমাস পরেই অবসরে যাব আমাকে অযথা হয়রানি করার জন্য হয়তো কেউ এসব মিথ্যা বলছে। তবে আমার অনুরোধ লেখালেখি করে আমাকে অযথা হয়রানি করবেন না।

পানছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, এসব বিষয়াদি খতিয়ে দেখা হবে। ঘুষ বানিজ্যে আর অনিয়মের ব্যাপারে সত্যতা মিললে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর দাবি এই ঘুষখোরের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে অন্যত্র বদলীপূর্বক নতুন একজন হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা যোগদান করলেই অফিসে হয়তো স্বচ্ছতা ফিরবে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন