ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে উপকূলে চিংড়িসহ মৎস্য খাতে ক্ষতি তিনশ কোটি টাকা

27.5

মহেশখালী প্রতিনিধি:

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার উপকূলে চিংড়িসহ মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫৬ হাজার একরের ২ হাজার ৭৭৫টি চিংড়ি ঘের পানিতে ভেসে গেছে, যার আর্থিক ক্ষতি প্রায় ১৯৪ কোটি টাকার।

এ ছাড়া ২৩২টি মৎস্য খামার এবং ২ হাজার ৩৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে আরও ১০০ কোটি টাকা। জেলা মৎস্য বিভাগের কাছ থেকে ক্ষয়ক্ষতির এ তথ্য পাওয়া গেছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন বলেন, ২১ মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে জেলার পেকুয়া, চকরিয়া, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলায় প্রায় ৬০ কিলোমিটার উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। এর ফলে জোয়ারের ধাক্কায় ভেসে গেছে চিংড়িঘের, মৎস্য খামার ও পুকুর। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা।

এখনো ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি অব্যাহত থাকায় চাষিরা নতুন করে মৎস্য চাষ শুরু করতে পারছেন না। তাই এ মৌসুমে চিংড়িসহ মৎস্য উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে।

কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী গ্রামে প্রায় ১৮ লাখ টাকা খরচ করে দুই একরের একটি চিংড়ি খামার গড়ে তোলেন স্থানীয় চাষি নাছির উদ্দিন। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ঘেরটি বিলীন হয়ে যায়। এতে তাঁর প্রায় ২৫ লাখ টাকার চিংড়ি মাছ ভেসে গেছে। তিনি বলেন, ‘প্রায় সাত লাখ টাকা ঋণ নিয়ে চিংড়িঘেরটি গড়ে তুলেছিলাম। ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনে ঘেরটি শেষ করে দিল।’

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী, গোমাতলী, , খুরুশকুল, ভারুয়াখালী, ঈদগাঁও মহেশখালীতে ৩০০ টি চিংড়িঘের, ১০০ টি মৎস্য খামার এবং ৪০০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।

চকরিয়া উপজেলার রামপুরার চাষি গোলাম হোসেন বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর আট একরের একটি ঘের বিলীন হলে অন্তত্য কোটি টাকার চিংড়ি ভেসে গেছে। ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কার না হওয়ায় তিনিও নতুন করে চিংড়িঘেরটি তৈরি করতে পারছেন না।

মহেশখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে উপজেলার ৯ টি ইউনিয়নের ৩০০টি চিংড়িঘের, ২৫টি মৎস্য খামার ও ২৮০টি পুকুর বিলীন হয়েছে। মাছসহ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

মহেশখালীর কুতুবজোম ও ধলঘাটা ইউপির চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন ও কামরুল হাসান বলেন, জলোচ্ছ্বাসে দুটি ইউনিয়নের প্রায় ১০০টি চিংড়িঘের বিলীন হয়েছে।

হোয়ানকের চিংড়িঘের ব্যবসায়ি আবু তালেব জানান, আমাবস্য খালী ঘোনা সম্পুন্ন বিলিন হয়ে গেছে, দ্রুত সময়ে তা বাধ নির্মান করা না গেলে মহেশখালীর মৎস্য খাতে বিপুল পরিমানে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, মহেশখালীতে ৩০০টি চিংড়িঘের, ২৫টি মৎস্য খামার ও ২৮০টি পুকুর বিলীন হয়েছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮৫ কোটি টাকা।

কুতুবদিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বেনজির আহমদ বলেন, জলোচ্ছ্বাসে উপজেলার ১৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্র থেকে জানা যায়, পেকুয়া উপজেলায় ৪ হাজার ১০০ একরের ৪৫৫টি চিংড়িঘের ও ৩১৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। টেকনাফ উপজেলায় ১ হাজার ৬৭ একরের ৪২টি চিংড়িঘের, ১৫টি মৎস্য খামার ও ১৮টি পুকুর, উখিয়া উপজেলায় ১ হাজার ২০০ একরের ৭৫টি চিংড়িঘের ও ৩৭৫টি পুকুর এবং রামুতে ১৫০ একরের ২২টি চিংড়িঘের, ২২টি মৎস্য খামার ও ৬৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।

মৎস্য কর্মকর্তারা আরও বলেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলের তিন লাখ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষের জন্য প্রতিবছর দরকার পড়ে প্রায় ৯০০ কোটি চিংড়ির পোনা। পোনা উৎপাদনের জন্য কক্সবাজার উপকূলের কলাতলী, ইনানী ও টেকনাফ সৈকতে স্থাপন করা হয়েছে ৫৭টি প্রজনন হ্যাচারি। ঘূর্ণিঝড়ে বিলীন চিংড়িঘের ও খামারগুলোতে পুনরায় মৎস্য চাষ শুরু না হলে হ্যাচারিগুলোতেও পোনা উৎপাদনে ধস নামতে পারে।

হ্যাচারি মালিকদের সংগঠন শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মশিউর রহমান বলেন, পোনার চাহিদা না থাকায় গত কয়েক দিনে ১০-১২টি হ্যাচারির উৎপাদন বন্ধ আছে। মৎস্য চাষের জন্য জরুরি ভিত্তিতে ভাঙা বেড়িবাঁধের সংস্কার করা দরকার।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে জেলার ছয়টি উপজেলায় প্রায় ৬২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিলীন হয়েছে। ভাঙা বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে নভেম্বর-ডিসেম্বরের আগে এই ভাঙা বেড়িবাঁধের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন