ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে লণ্ড ভণ্ড কুতুবদিয়া: নিহত ৩ আহত ১০
কুতুবদিয়া:
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়া লণ্ড ভণ্ড হয়ে গেছে ঘৃর্ণিঝড় রোয়ান‘র প্রভাবে। শনিবার সকাল থেকেই ঝড়ো হাওয়া ও সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে প্লাবিত হয়ে উপজেলায় ৩ ব্যক্তি নিহত ও আহত হয়েছে কপক্ষে ১০ জন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের নাজের বাড়ির মাস্টার মৃত ফয়জুর রহমানের পুত্র একে ফজলুল হক (৫৫) উপকুলে দু‘ফিশিং বোটের চাপে গুরতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাকে রেফার করা হলেও যানবাহন ও চ্যানেল পারাপার বন্ধ থাকায় জেলা সদরে নেয়া সম্ভব হয়নি। প্রায় দু‘ঘন্টা পর তার মৃত্যু হয়। উত্তর ধুরুং চুল্লার পাড়ার মৃত আবদউ রহমানের পুত্র মো. ইকবাল (২৭) বেড়িবাঁেধর পাশে একটি মাটির ঘরে আশ্রয় নিলে দেয়াল ধসে চাপা পড়ে আহত হন। পরে তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এ ছাড়া আলী আকবর ডেইল তাবালের চর নয়াপাড়ার মৃত মোস্তফিজুর রহমানের পুত্র ফকির আলম (৫০) কে উপকুলে মৃত ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়।
হসাপাতাল সূত্রে জানা যায়, ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে বেশ কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হন। এদের মধ্যে বড়ঘোপের রোকেয়া বেগম (৪২), পরান সিকদার পাড়ার তুহীন সাইদা (৯),মগডেইল গ্রামের রমজান (১০), উত্তর ধুরুং সিরাইজ্জার পাড়ার ছৈয়দ আলম (৩২), নয়াকাটা গ্রামের রেডক্রিসেন্ট সেচ্ছাসেবক এয়ার মোহাম্মদ (৫০), বড়ঘোপ স্টীমারঘাট এলাকার শাহীন (১২), দক্ষিণ ধুরুং এর আমিনা (৪০)। এ ছাড়া ধুরুং বাজারে আরো ৩জন গাছ পড়ে আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানা গেছে।
মহেশখালী ধলঘাটার একটি ফিশিং বোট ৮ জন জেলেসহ ঝড়ের কবলে পড়ে ভেসে কুতুবদিয়ার উপকুলে পৌছিলে তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা প্রশাসন সার্বিক ব্যবস্থার দায়িত্ব নেন। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, শনিবার সকাল ১০টার পর থেকেই জেয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বাতাসের বেগ বেড়ে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নে ৩ কিলোমিটার খোলা বেড়িবাঁধ দিয়ে দ্রুত লোনা পানিতে তলীয়ে যায় পুরো ইউনিয়ন। এতে শতভাগ এলাকার ঘরবাড়ি ধসে পড়ে এখন পানির নীচে। আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন উচু এলাকা সড়ক এবং সাইক্লোন শেল্টারে।
থাকা ও রান্নার কোন ধরণে ব্যবস্থা চোখে পড়েনি ওই এলাকায়। পার্শ্ববর্তী লেমশীখালী, দক্ষিণ ধুরুং কৈয়ারবিল, বড়ঘোপ প্রতিটি ইউনিয়নের অদিকাংশ গ্রাম তলীয়ে গেছে। এসব ইউনিয়নে ঘর সবাড়িসহ ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নে কাজীর পাড়া, কিরণ পাড়া, সাইট পাড়া,জেলে পাড়া, বায়ু বিদ্যুৎ পযেন্ট, তাবালের চরসহ কয়েকটি গ্রামের সংলগ্ন বেড়িবাঁধ টপকিয়ে সাগরের পানি ভিতরে প্রবেশ করতে থাকে। পানির স্রোত বৃদ্ধি পেয়ে বড়ঘোপ আলী আকবর ডেইল সড়ক তলীয়ে গিয়ে অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়।
বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিরা প্লাবিত এলাকা পরিদর্শন করে বলেন, প্লাবিত এলাকায় মানবিক বিপর্যয় চলছে। দ্রুত ত্রাণসামগ্রীসহ নিরাপদ আশ্রয়সহ নিরাপত্তার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। গৃহহীন পরিবারদের পূর্ণবাসন জরুরী হয়ে পড়েছে বলে তারা জানান। উপজেলা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ দিকে গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে চ্যানেল পারাপার,আজম সড়ক.আলী আকবর ডেইল সহ বিভিন্ন রুটে যানবাহন ও নৌযান চলাচল প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। বৃষ্টি ও বাতাস শনিবার রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। মানুষ আতংকে আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে ওঠে।
উপজেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুমে দায়িত্বরত প্রকল্প কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাস জানান,ঝুর্ণঝড় প্রভারের মোকাবেলা ও পরবর্তী পদক্ষেপে সব ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়। ১১৫টি সাইক্লোন শেল্টার ছাড়াও হাসপাতাল,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। তাদের জন্য শুকনো খাবার বিতরণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক লক্ষ টাকা জরুরী বিতরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া নিহতদের প্রতিটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা এবং আহতদের জন্য ৫ হাজার টাকা করে অনুদান দেয়ার কথা জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সালেহীন তানভীর গাজী বলেন,জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরী ত্রাণ হিসেবে নগদ দেড় লক্ষ টাকা ও ৫ মেট্রিকটন চাল ৬ ইউপি চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। রোববার নৌবাহিনীর একটি সাহায্যদানকারী জাহাজ আসার কথা রয়েছে বলে তিনি জানান। পানি বিশুদ্ধ বড়িসহ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।