ঘুমধুম সীমান্তের রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের শেষ ঠিকানা কোথায়?

লামা প্রতিনিধি:

কক্সবাজারের টেকনাফ-উখিয়া সীমান্তের পর নাইক্ষ্যংছড়ির চাকডালা, আশারতলী, ফুলতলা ও জামছড়ি সহ ৩০ কিলোমিটার সীমান্তের জিরো পয়েন্টে ২০ হাজারের অধিক রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। এসব শিশু, নারী ও পুরুষ নাইক্ষ্যংছড়ির পাহাড়ী সীমান্তের এ দীর্ঘ পয়েন্টে খোলা আকাশের নিচে বিপর্যস্ত অবস্থায় সময় কাটাচ্ছে। ৩দিনের উপোস অনেক শিশুকে নিয়ে মা-বাবা আহাজারি করছে আকাশের দিকে দু’হাত তুলে। কান্নার আওয়াজে আকাশ ভারী হয়ে গেছে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ৫৫ কিলোমিটার এলাকা। প্রতিটি মুহুর্তে ছোট ছোট দলে রোহিঙ্গারা এখানে জড়ো হচ্ছে রবিবার থেকে। বিজিবির শক্ত অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারছে না।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু আহম্মদ জানান, মিয়ানমার বাহিনীর গুলির আওয়াজে সীমান্ত ঘেষা তুমব্রু, দক্ষিণ ঘুমধুম ও ভাজাবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। গুলির আওয়াজে শিক্ষার্থীরা এদিক ওদিক পালাতে থাকলে স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। । জিরো পয়েন্টে জড়ো হওয়া আতঙ্কগ্রস্ত নারী পুরুষ জিরো পয়েন্টের খোলা আকাশের নিচে, গহিন জঙ্গলে ও পাহাড়ের ঢালুতে বসে আতঙ্কের পহর গুনছে। তবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ সীমান্তে জোরদার করা হয়েছে বিজিবি, কোষ্টগার্ড, পুলিশ, আনসার বাহিনী সহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার দল।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্তের পিলার ৪১ নম্বর থেকে ৪৭ নম্বর পিলারে ঘুমধুম, তুমব্রু, চাকডালা, আশারতলী, ফুলতলা ও লিমুছড়ি সহ ৬টি সীমান্ত পয়েন্টে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা খাদিজা বেগম জানান, তাদের গ্রামে নিরাপত্তা বাহিনী ঢুকে পড়ে গুলি চালিয়েছে। তার দুই ভাই মারা গেছে। স্বামী ও তিনি পালিয়ে আসতে পেরেছেন।

ঘুমধুম ইউনিয়নের এনামুল হক জানিয়েছেন, মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) সকালে মায়ানমার সীমান্তের অভ্যন্তরে সে দেশের হেলিকপ্টার উড়েছে। আশারতলী জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন এলাকা থেকে রশিদ আহম্মদ জানিয়েছেন, জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত হাজার হাজার শিশু, নারী ও পুরুষ অনাহারে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ সচিব মো. এরশাদুল হক সাংবাদিকদের জানান, সোমবার মিয়ানমান বাহিনীর ছোড়া একটি বুলেট সকাল ৮ টায় ঘুমধুমের টুমরো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং অপর ১টি বুলেট তুমব্রু বাজারে পড়ে। যার কারণে এলাকার মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। জিরো পয়েন্টে অনুপ্রবেশের জন্য জড়ো হওয়ার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে ৩০ হাজারের অধিক অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে।

কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার লে. কর্ণেল আনোয়ারুল আজিম জানিয়েছেন, ঘুমধুম, তুমরু, আশারতলী ও চাকডালার জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শিশু, নারী ও পুরুষদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিজিবি জোয়ানরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে রোহিঙ্গা আগমন ঠেকাতে স্ট্যান্ড বাই রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন