গুইমারায় হেডম্যান ও কার্বারী সম্মেলন পার্বত্যাঞ্চলে শান্তি, সম্প্রীতি ও সহাবস্থান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে

20160530_115539

স্টাফ রিপোর্টার:

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়নে অনুষ্ঠিত হেডম্যান ও কার্বারী সম্মেলন পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি, সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য ও সহাবস্থান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে স্থানীয়দের অভিমত। এছাড়া নিয়মিতভাবে এ ধরণের সম্মেলনে মাধ্যমে দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য অংশগ্রহণকারীরা সেনাবাহিনীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন।

গত ৩০ মে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়নে এই হেডম্যান ও কার্বারী সম্মেলন-২০১৬ অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, গুইমারা রিজিয়ন কামন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুজ্জামান। এসময় অন্যান্যের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন, হেডম্যান প্রীতিময় চাকমা, কারবারী তগু মারমা, আন্দন মোহন ত্রিপুরা, হিরণময় ত্রিপুরা, ললিত বিকাশ ত্রিপুরা, গোলমনি চাকমা প্রমুখ। এসময় রামগড়, গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি উপজেলার শতাধিক হেডম্যান ও কার্বারী উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে হেডম্যান ও কার্বারী গণ পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নে ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেনাবাহিনীর অবদানের কথা অকুণ্ঠ চিত্তে স্মরণ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি সকল হেডম্যান ও কারবারীদের কাছ থেকে তাদের এলাকার বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে জানতে চাইলে, উঠে আসে পাড়া মহল্লায় পানীয় জলের সমস্যা, শিক্ষা সহায়ক উপকরণ সহ স্কুল কলেজের নানান সমস্যার পাশাপাশি জাতীয় সমস্যা। এসময় রিজিয়ন কমান্ডার সব বিষয়ে সর্বোচ্চ সাহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সম্মেলনে খাগড়াছড়ির গুইমারা রিজিয়ন কামন্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুজ্জামান বলেন, পার্বত্যাঞ্চলের মানুষ শান্তি প্রিয় আর সরকারও শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। পার্বত্যাঞ্চলে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উন্নয়নমূলক কাজে সরকারকে সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী। পাহাড়ে চাঁদাবাজী, সন্ত্রাসীমূলক অপরাধ কর্মকান্ড ও দুস্কৃতিকারীদের নির্মূলে পাড়া কারবারী ও মৌজা হেডম্যানদের ভূমিকা রাখতে হবে। সংবিধান পরিপন্থী কোনো কাজ করলে কাউকে কোন প্রকার ছাড় দেয়া হবে না। যারা অন্যায়ভাবে নিরীহ জনগন থেকে চাঁদা আদায় করছেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন তারা সাবধান হয়ে যান। অস্ত্র থাকবে শুধু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে, কোন সন্ত্রাসীর হাতে নয়।

এসময় তিনি আরো বলেন, যারা চাঁদা নেন তারা সংখ্যায় খুবই নগন্য। সকলে সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে হবে। হরতাল পালন ও চাঁদা আদায়ের আদেশ প্রদানকারী ব্যক্তিগণ প্রায়শই এলাকার বাহিরে থাকে কিন্তু আদেশ পালন করতে সাধারণ মানুষকে বাধ্য করে। এসকল লোকজন ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে সব সময় তৎপর। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে তারা কখনো কাজ করে না। তাই এদেরকে সর্ব শক্তি দিয়ে প্রতিহত করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সেনাবাহিনী সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করা হলেও সাধারণ মানুষ বা সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে কোন প্রকার প্রতিবাদ করা হয় না। হেডম্যানও কার্বারীগণ সেনাবাহিনীর অবদানের কথা স্বীকার করলেও জন-সম্মূখে বা গনমাধ্যমে এ ধরনের কোন বক্তব্য প্রদান করেন না। এসময় এলাকার সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি অন্যায় অপরাধ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানান রিজিয়ন কমান্ডার।

শান্তি শৃংখলা সুস্থ পরিবেশ বজায় রেখে চলমান উন্নয়ন কাজকে আরো এগিয়ে নেয়ার উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি আরো বলেন, পাহাড়ে যে সব দুস্কৃতিকারী রয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হেডম্যান কারবারীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। পাহাড়ী-বাঙ্গালী সম্প্রীতিকে বিনষ্ট করার জন্য বিভিন্ন ঘটনাকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়, এর থেকে বিরত থেকে সম্প্রীতি সৌহার্দের সাথে সবাই কে বসবাস করতে হবে। আইন-শৃংখলা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়র হলে এ জনপদে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠি সুখে থাকবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের, দূর হবে দারিদ্রতা, উন্নত হবে দেশ।

সম্মেলনে হেডম্যান-কারবারীদের পাশাপাশি অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মাটিরাঙ্গা জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জিল্লুর রহমান, লক্ষ্মীছড়ি জোনের অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. নুরুল আমিন, সিন্দুকছড়ি জোনের অধিনয়াক লে. কর্নেল ফজলে রাব্বি, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সুপার জ্যোতি চাকমা, মাটিরাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, মানিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, মাটিরাঙ্গা উপজেলার নির্বাহী অফিসার বিএম মশিউর রহমান, গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ সফিকুল ইসলাম প্রমূখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন