গুইমারায় প্রচারণা ও ভোটের মাঠে ত্রিমুখী লড়াই : এগিয়ে নৌকা

দিদারুল আলম, গুইমারা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি:

খাগড়াছড়ি জেলার নবসৃষ্ট গুইমারার উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ী পল্লীগুলোতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের মাধ্যমে বেশ জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রার্থীর পক্ষে পথসভা, উঠান বৈঠক, জনসমাবেশ, গণসংযোগ আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাওয়ার মধ্য দিয়ে রীতিমত ব্যস্ত সময় পার করছে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। পোস্টার, ব্যানারে নববধুর সাজে সেজেছে গ্রামগুলো। উপজেলার ভোটের মাঠে আত্মবিশ্বাসী আ’লীগ। বিএনপিও ছুটছে, নীরবে কাজ করে যাচ্ছে (ইউপিডিএফ) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নতুন কুমার চাকমার কর্মীরা। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী নৌকা, সিংহ ও ধানের শীষের পক্ষের নেতারা।

গত কয়েকদিন উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মেমং মারমার নেতৃত্বে তিনটি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী কুজেন্দ্রলাল ত্রিপুরার পক্ষে উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা একযোগে ১৫টি টিম ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। সর্বত্র ঝুলছে নৌকার ব্যানার ও পোস্টার।সুন্দর ডায়লগে সিএনজিতে মাইকিং করছে। প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, সামাজিক গণমাধ্যমে প্রচারণা, মিছিল, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণ, মতবিনিময় সভা, জনসমাবেশ করছেন তারা।

উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের বাজার ছাড়াও পাড়ায় পাড়ায় নৌকার পক্ষে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি মিছিল-মিটিংয়ে বেশ সরগরম আ’লীগ নেতাকর্মীরা। বিভেদ ভুলে নৌকাকে জয়ের লক্ষে জেলা আ.লীগের সকল নেতাকে বর্তমান প্রার্থীর পক্ষে একমঞ্চে প্রচার প্রচারণায় দেখা গেছে।

বর্তমান সরকারের গত ১০ বছরে উন্নয়নের চিত্র হিসেবে গুইমারাকে উপজেলা ঘোষণা, সিন্দুকছড়ির দৃশ্যমান সড়ক উন্নয়ন, বিজিবি হাসপাতাল, নতুন ইউপি ভবন, মহাসড়কের বড়বড় ব্রিজগুলো, ১৩৯ প্রকারের ভাতা প্রদান, স্কুল কলেজ জাতীয়করণসহ উপজেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম তুলে ধরেন আ’লীগ নেতারা। এসময় উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করতে তৃতীয় বারের মত ভোটারদের কাছে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন তারা।

হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী, ছাত্রলীগ সভাপতি আনন্দ সোম, যুবলীগ সভাপতি বিপ্লব কুমার শীল, সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ চৌধুরী জানান, তারা পাড়ায় পাড়ায় গিয়ে মা-বোনদের কাছে আ’লীগ সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এতে পাহাড়ী বাঙ্গালী ভোটারদের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ দেখেছেন। তারা আশা করছেন এবার নৌকা প্রতীকে অতীতের ছেয়েও বেশী ভোট পাবেন।

উপজেলা আ’লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ডা. নুরুন্নবী নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা বসে নেই। জনসমাবেশে প্রার্থী কুজেন্দ্রলালকে গোল্ডেন কালারের ১০১টি নৌকা দিয়ে সম্বর্ধনা দেওয়ায় গুইমারার ভোটারদের মাঝে আলোচনার ঢল নেমেছে।

উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ঝর্ণা ত্রিপুরা ও সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদাক মারমার নেতৃত্বে ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের মাঝে প্রচারনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। সেখানে নৌকা আর সিংহের দাপটে জব্দ ধানের শীষ। ধানের ভোট নৌকা ও সিংহের ঘরে উঠার সম্ভাবনা।

আ’লীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সম্পাদক মেমং মারমা জানান, গুইমারা উপজেলায় বিশাল ভোটে জয়লাভ করবে নৌকা। এটি গত ২৩ তারিখ গুইমারার বেশ কয়েকটি জনসমাবেশে প্রমাণ করেছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে আ.লীগের তুলনায় কম সহযোগিতা পাচ্ছেন অভিযোগ বিএনপির। ইতোমধ্যে সাবেক সাংসদ ও জেলা বিএনপির সভাপতি ওয়াদুদ ভুঁইয়া উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ধানের শীষের প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ ও পথসভা করে গেছেন। জনপ্রিয়তা দিয়েই প্রার্থী শহিদুল ইসলাম রামগড় উপজেলা চেয়ারম্যান হয়েছেন। তিনি আশা করছেন শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোটাররা ভোট দিতে পারলে গুইমারায় ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত।

উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সাধারন সম্পাদক আইয়ুব আলী ডালিম বলেন, হুমকি ধামকির কারণে এবং লেভেল প্লেয়িং না থাকায় গুইমারায় প্রচার প্রচারণায় আওয়ামীলীগ এগিয়ে, তবে ভোটে বিএনপি এগিয়ে থাকবে।

উপজেলা বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, ভয়ভীতির কারণে বিএনপি প্রচারণা করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে প্রচার প্রচারণায় আওয়ামীলীগ এগিয়ে। তবে ভোটাররা যদি ভোট দিতে পারে তাহলে বিএনপি এগিয়ে থাকবে।

উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক নবী হোসেন বলেন, হাজার ও বাঁধার মাঝেও বিএনপি এগিয়ে ছিলো। ভোটের মাঠেও ধানের শীষ এগিয়ে থাকবে। হুমকি ধামকির বিষয়েও তিনি সত্যতা স্বীকার করেন।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ গুইমারায় এসে লাঙলে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেছেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় লাঙলের মাইকিং অব্যাহত রয়েছে। এদিকে হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী আবদুল জব্বার গাজীর সমর্থনে বিভিন্ন এলাকায় ভোট খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার সমর্থকরা।

অন্যদিকে গুইমারার ভোটের মাঠে সিংহ প্রতীকে আঞ্চলিক সংগঠন (ইউপিডিএফ)সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নতুন কুমার চাকমার পক্ষে প্রকাশ্য কোনো প্রচারণায় এখনো দেখা যায়নি।দৃশ্যমান প্রচারণা ও মাইকিং শোনা না গেলেও প্রত্যন্ত এলাকায় গোপনে গণসংযোগ, উঠান বৈঠক করে সিংহ মার্কা প্রতীকের পক্ষে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছে তার সমর্থকরা।উপজেলায় মোট ২৯১২৯ ভোটারের মাঝে উপজাতীয় ২০ হাজার ভোট নিয়ে সমীকরণ কষতে চাইছেন তারা। উপজেলায় মোট ভোটার ২৯১২৯। বাঙ্গালী ৯১০০, উপজাতি ২০০২৯। তাদের কিছু রিজার্ভ ভোট কেন্দ্র রয়েছে- যা তাদের মূল শক্তি। মোট ভোট কেন্দ্র ১১ ‍টি। তিনটি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে।

সিংহ প্রতীকের গুইমারা উপজেলা সমন্বয়ক ক্যাহ্লাচিং মারমা জানান, উপজেলা সদরে বাধা বিপত্তির কারণে প্রচার প্রচারণা করতে না পারলেও সদরের বাইরে প্রচার প্রচারণায় তারা এগিয়ে। ভোটের মাঠে সবার চেয়ে তারা এগিয়ে থাকবে। তবে এখন পর্যন্ত সিংহ মার্কার প্রার্থী গুইমারায় আসেননি।

সার্বিক সব দিক থেকে বিবেচনা করে উপজেলার নির্বাচনী চিত্রে দেখা যায়, এবারের নির্বাচনে গুইমারায় ভোটের মাঠে সবার চেয়ে এগিয়ে নৌকা।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, ইউপিডিএফ, গুইমারা
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন