গুইমারায় দরিদ্র, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীদের লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

গুইমারা প্রতিনিধি:

পার্বত্য আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ’র সমর্থন নিয়ে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়িতে নির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রেদাক মারমার বিষয়ে সোনালী ব্যাংক ব্যবস্থাপক, ইউনিয়ন সমাজকর্মী ও ইউপি সদস্যরা মিলে অসহায় ভাতাভোগীদের ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অসহায় দরিদ্র প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বিধবা ভাতাভোগীদের লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনায় এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। অনেকের ধারণা ভাতাভোগীদের কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে কৌশলে আত্মসাৎ করেছে চেয়ারম্যান রেদাক মারমা।

১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) সরকারি নিয়ম অনুসরন না করে  সাপ্তাহিক বন্ধের দিনে খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের হতদরিদ্র ২১৩জন বিধবা, ২৯১জন বয়স্ক ও ৬৫জন প্রতিবন্ধীসহ সর্বমোট ৫৬৯জন ভাতাভোগীর কাছ থেকে যাতায়াত খরচের নামে সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদাক মার্মা, সোনালী ব্যাংক লি. মহালছড়ি শাখার ব্যবস্থাপক প্রিয়রঞ্জন চাকমা, ইউনিয়ন সমাজকর্মী আলোময় চাকমা, সিন্দুকছড়ি ইউপি সদস্যরা মিলে জনপ্রতি দু’শ টাকা হারে মোট একলক্ষ তের হাজার আটশত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে।

পরে আত্মসাৎকৃত টাকা ইউনিয়ন সমাজকর্মী আলোময় চাকমা, সিন্দুকছড়ি ইউপি সদস্যরা এবং ব্যাংক ম্যানেজার, চেয়ারম্যান নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভাতাভোগীরা। সরকারি তথ্য মতে, সিন্দুকছড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন ভাতাভোগী মোট ৫৬৯জনের জন্য চলতি বছরের এপ্রিল, মে ও জুন মাসের ভাতার টাকা বরাদ্দ হয়।

সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন পূর্বে মহালছড়ি উপজেলাধীন থাকায় ভাতার টাকা নিয়ম অনুযায়ী মহালছড়ি সোনালী ব্যাংক শাখা থেকে ভাতাভোগীদের মাঝে বিতরণের কথা থাকলেও সোনালী ব্যাংক মহালছড়ি শাখা ব্যবস্থাপক প্রিয়রঞ্জন চাকমা নিজেই এসে সাপ্তাহিক বন্ধের দিন শনিবারে সিন্দুকছড়ি ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে ভাতা বিতরণের দিন ধার্য্য করে।

ভাতাভোগীদের কাছ থেকে জোর পূর্বক চেয়ারম্যান রেদাক মারমা, ব্যাংক ব্যবস্থাপক, সমাজকর্মী মিলে স্থানীয় হতদরিদ্র ভাতাভোগী পাহাড়ি, বাঙ্গালীদের ভাতার টাকা থেকে ২০০ টাকা করে  আত্মসাৎ করেছে মর্মে ভাতাভোগীরা জানায়।

এঘটনায় ভাতাভোগীদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। গরীব অসহায়দের ভাতার টাকা আত্মসাতের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি ও আত্মসাৎকৃত টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করেছে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ অসহায় ভাতাভোগীরা।

এবিষয়ে অসহায় প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী হাসান আলী বলেন, ১ সেপ্টেম্বর (শনিবার) তিন মাসের ভাতার টাকা আনতে গেলে তাকে মাস প্রতি ৭শত টাকা হারে মোট ২১শত টাকার মধ্যে সমাজকর্মী এবং ব্যাংক কর্মকর্তা তাকে ১৯শত টাকা দেয়। ২শত টাকা কম কেন তা জানতে চাইলে ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ১শত টাকা চেয়ারম্যান-মেম্বার ও বাকি ১শত টাকা বিতরণকারীদের যাতায়াত খরচ বাবদ কেটে রাখা হয়েছে। তিনি ২শত টাকা কম নিতে অস্বীকৃতি জানালে উপস্থিত কর্তা ব্যক্তিরা বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরের মাস থেকে ভাতার তালিকা থেকে বাদ দেওয়াসহ কোন টাকা দিবে না বলে হুমকী প্রদান করে। একই অভিযোগ করে বয়স্ক ভাতাভোগী আবুল বশর এবং লাল মিঞার মুখে শোনা যায়।

এ নিয়ে চলছে গুইমারা উপজেলায় নানা জল্পনা-কল্পনা। কেউ কেউ বলছে সরকারীকরণ ছুটির দিনে সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার এতো টাকা কোথায় পেল? সরকারি কর্মচারী ব্যাংক ব্যবস্থাপক ও চেয়ারম্যান-মেম্বাররা গরীবের টাকা মেরে খাওয়ার জন্য বন্ধের দিনটাই বেছে নিয়েছে। তবে ভাতাভোগী ৫৬৯জনের কাছ থেকে টাকা আত্মসাতের ঘটনা শতভাগ সত্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউপিতে কর্মরত একাধিক ব্যক্তি ভাতা বিতরণকালে ২শত টাকা হারে কেটে রাখার কথা স্বীকার করেন।

এবিষয়ে সিন্দুকছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান রেদাক মারমা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সিন্দুকছড়ি থেকে মহালছড়ি যাতায়াত ভাড়া বাবত আমি ১০০ টাকা কেটে রাখতে বলেছি। কারণ মহালছড়ি থেকে ব্যাংক ম্যানেজার আসবে। তবে পরে শুনেছি মেম্বাররা আরও ১০০ টাকা  বাড়তি নিয়েছে এক মেম্বারের অসুস্থতার কথা বলে। এটা আমি জানতাম না। জানার পরে কি ব্যবস্থা নিয়েছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই মেম্বার এর পর আর পরিষদে আসেননি তাই কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনি। তবে এ বিষয়ের আলোকে সকল মেম্বারকে নিয়ে রবিবারে জরুরি মিটিং ডেকেছেন মর্মে তিনি জানান।

সোনালী ব্যাংক, মহালছড়ি শাখা ব্যবস্থাপক প্রিয়রঞ্জন চাকমার মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার  মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায় নি।

এব্যাপারে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়ার দৃষ্টি আকর্ষন করা হলে তিনি জানান, সিন্দুকছড়ি গুইমারা উপজেলাধীন হলেও কিছু কিছু কাজ এখনও মহালছড়ি উপজেলায় হচ্ছে। বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন। ইতিমধ্যে তিনি সমাজসেবা ও সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। কিন্তু সরকারি ছুটির দিনে গুইমারা উপজেলা প্রশাসনের কাউকে না জানিয়ে ভাতা বিতরণ কিভাবে করল তা বোধগম্য নয়। সোমবার তিনি সিন্দুকছড়িতে সরেজমিনের পরিদর্শন ও তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও তিনি জানান।

তবে বর্তমান সরকারের দুর্নীতি বিরোধী নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও এধরণের দূর্নীতিবাজ ব্যাংক কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের আইনের আওতায় না আনলে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটবে বলে গুইমারার সচেতন মহলরা ধারণা করছেন। পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন ভাতাভোগী ও গুইমারা উপজেলাবাসীরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন