খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা বর্জন করল আ’লীগ

1
নিজস্ব প্রতিবেদক :
খাগড়াছড়িতে জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে শহরে লাঠিমিছিলসহ উদ্ভূত পরিস্থিস্থিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসনের ডাকা বিশেষ আইনশৃঙ্খলা বৈঠক বর্জন করেছেন জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও তার অনুসারীরা।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল আমিন। তিনি পার্বত্যনিউজকে জানান, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে বিশেষ আইনশৃঙ্খলা সভা ডাকা হয়। সবাইকে যথা সময়ে চিঠিও পৌঁছানো হয়েছিল। কিন্তু বৈঠকে জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র রফিকুল আলমসহ বৈঠক সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত থাকলেও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও তার অনুসারীরা উপস্থিত হননি। ফোনে তারা এ ধরনের বৈঠকে যোগ দিবেন না বলেও জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা পার্বত্যনিউজকে জানান, প্রকাশ্যে দিবালোকে জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলা হয়েছে। তাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। তার এখনও জ্ঞান ফিরেনি। অথচ চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এখনও গ্রেফতার হয়নি। হামলাকারীদের সাথে জেলা প্রশাসনের এ বৈঠককে তিনি হাস্যকর বলেও দাবি করেন।

অন্যদিকে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান পার্বত্যনিউজকে জানান, ঘটনার পর থেকে হামলাকারীদের ধরতে পুলিশের সাড়াশি অভিযান চলছে।

উল্লেখ্য, বৃহষ্পতিবার বেলা ১২টার দিকে নারিকেল বাগান এলাকায় খাগগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
নির্মলেন্দু চৌধুরীকে জেলা সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে ডাক্তার তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন।

এ প্রসঙ্গে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নয়ন ময় ত্রিপুরা পার্বত্যনিউজকে জানান, নির্মলেন্দু চৌধুরী নাক দিয়ে রক্ত যাচ্ছিল। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্নও ছিল। তাছাড়া তিনি কথা বলতে পারছিলেন না। অবস্থা নাজুক হওয়ায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে হামলার প্রতিবাদে শহরে লাঠি মিছিল বের জেলা আওয়ামীলীগ। মিছিলটি শাপলা চত্বরে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে আওয়ামীলীগের অপর অংশের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় কয়েকটি দোকানে হামলা ও কয়েকটি টমটম ভাংচুর হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতির আতঙ্কে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট ও যানবাহন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।

জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রণবিক্রম ত্রিপুরা এ হামলার জন্য, বহিষ্কৃত জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদুল আলম এবং তার ছোট ভাই খাগড়াছড়ি পৌর মেয়র রফিকুল আলমকে দায়ী করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, জাহেদুল আলম।

এদিকে কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও পূজা উদযাপন কমিটি সিনিয়র সহ-সভাপতি আওয়ামীলীগ নেতা ও জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনায় নিন্দা, প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় সনাতন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ পরবর্তী করণীয় নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন।

প্রসঙ্গত, গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রতিনিয়ত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের অনুসারীদের পাল্টা-পাল্টি হামলা, মামলা ও ভাংচুরের ঘটনা অব্যাহত আছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন