খাগড়াছড়ি’র ২ হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও নিউ ন্যাশন কমার্স লিমিটেড

image_19683.protarana

আল-মামুন, খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :
ঢাকা সিটি করপোরেশন হতে কনসালটেন্সি ব্যাবসার নামে লাইসেন্স নিয়ে অবৈধ ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ডিপিএস, এমডিপিএস ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন সঞ্চয়ী আমানত সংগ্রহ করে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রায় ২ হাজার গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে নিউ ন্যাশন কমার্স লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এতে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে জেলার অসংখ্য নিরীহ পরিবার।

এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান মীর শামসুদ্দিন মামুন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম কামালউদ্দিন সহ ৮ আসামীর বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করলেও আসামীরা কোম্পানীর নাম পরিবর্তন করে অন্য নামে ফেনী শহরে প্রশাসনের নাকের ডগায় চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। অথচ একই কায়দায় প্রতিষ্ঠানটি খাগড়াছড়ি জেলার নিরীহ মানুষের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন হতে কনসালট্যান্সি ব্যাবসার নামে লাইসেন্স নিয়ে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা সদর, পানছড়ি ও মহালছড়ি উপজেলা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাখা অফিস খুলে বসে নিউ ন্যাশন কমার্স লিমিটেড। অত্যন্ত লোভনীয় ও অকল্পনীয় অফার আর অল্প সময়ে বেশী মুনাফার প্রলোভনে না বুঝে তাদের এ প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে ডিপিএস, এমডিপিএস ও দীর্ঘমেয়াদী বিভিন্ন সঞ্চয়ী হিসাবে আমানত জমা দিয়ে প্রতারিত হয়েছে জেলার সদর উপজেলা, পানছড়ি উপজেলা, মহালছড়ি, মানিকছড়ি ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার প্রায় দুই হাজার গ্রাহক। এতে হাতিয়ে নিয়েছে প্রায় কোটি টাকা, সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে অসংখ্য নিম্ম-মধ্যবিত্ত ও দিন এনে দিনে খাওয়া পাহাড়ি-বাঙালি পরিবার। কোম্পানীর প্রতারণার প্রেক্ষিতে গ্রাহকের কথা চিন্তা করে জোনাল ইনচার্জ হিসেবে তৎসময়ে দায়িত্বরত অতুল পম চাকমা বাদী হয়ে গত বছরের জুলাই মাসে খাগড়াছড়ি আদালতে একটি মামলা দায়ের করে।

মামলা দায়েরের পর হতে আসামীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় কগনিজেন্স আদালত গত বছরের ১৯  নভেম্বর আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করে। তবে আসামীরা বর্তমানে ঐ কোম্পানীর নাম পরিবর্তন করে ফেনী জেলা শহরের মডেল থানার সামনে আমিন টাওয়ারে (৬ষ্ট তলা) প্রশাসনের নাকের ডগায় দিব্যি তাদের প্রতারণা ব্যাবসা অব্যাহত রাখলেও তাদের গ্রেফতারে কোনরকম পদক্ষেপ নিচ্ছেনা পুলিশ ।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, ঢাকা সিটি করপোরশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স নেওয়ার সময় প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা হিসেবে উল্ল্যেখ করা হয় ২৮৪ বড় মগবাজার, রমনা, ঢাকা এবং প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মীর শামসুদ্দিন মামুন। তবে ওই ঠিকানায় গিয়ে নিউ ন্যাশন কমার্স লিমিটেড নামে কোন প্রতিষ্ঠানের হদিস পাওয়া যায়নি। ভবনটির নিচতলার কয়েকটি দোকান ও উপরে আবাসিক হোটেল রয়েছে। ওই ভবনের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছে, এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস এই ভবনে কখনোই ছিলনা।

যৌথ মূলধনী কোম্পানী ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে জানান, নিউ ন্যাশন কমার্স লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অবৈধ ব্যাংকিংয়ের প্রমাণ পাওয়ার পর এর নিবন্ধন বাতিল করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলার প্রতারিত গ্রাহকরা জানিয়েছে, প্রতারণার উদ্দেশ্যেই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে লাইসেন্স নিয়েছে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। আসামীদের আইনের আওতায় এনে শীঘ্রই তাদের আমানতের টাকা উদ্ধারে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছে সর্বশান্ত গ্রাহকরা।  

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানীর চেয়ারম্যান মীর শামসুদ্দিন মামুন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম কামালউদ্দিন এর মুঠোফোনে কল করা হলে তারা জানান, গ্রাহকের আমানতের টাকা মাস-খানেকের মধ্যেই তারা ফেরত দিয়ে দেবেন।

কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান মীর শামসুদ্দিন মামুন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম কামালউদ্দিন বারবার তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে কালক্ষেপন করছেন বলে অভিযোগ করে জোনাল ইনচার্জ হিসেবে তৎসময়ে দায়িত্বরত অতুল পম চাকমা জানান, গ্রাহকের টাকা ফেরত দেয়ার সামান্যতম স্বদিচ্ছাও তাদের নেই। প্রতিষ্ঠানটি ভালো মনে করেই আমি সহ প্রায় ১২/১৪ জন এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী নিয়েছিলাম। তাদের প্রতারণা বুঝতে না পেরে চাকুরি মোতাবেক আমি আমার এরিয়ার মাঠ কর্মীদের দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করে তা কোম্পানীর পূবালী ব্যাংক খাগড়াছড়ি শাখার চলতি হিসাব ২৭৭১-৮ নং একাউন্টে এবং এস.এ পরিবহনের মাধ্যমে জমা দিয়েছি। কোম্পানীর প্রতারণায় বর্তমানে আমি সহ আমার সহকর্মীরা গ্রাহকের জ্বালাতনে এলাকা ছাড়ার উপক্রম হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন