খাগড়াছড়ির জুনায়েদ হত্যাকান্ডের ২বছরেও চার্জশীট দিতে পারেনি পুলিশ

junayed pic

নিজস্ব প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ি জেলার টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের সাবেক ছাত্র ও ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র মো: জুনায়েদ হোসেন হত্যাকান্ডের ২ বছর অতিবাহিত হলেও রহস্যজনক কারণে মামলার চার্জশীট দেয়নি ফেনী জেলা পুলিশ। গত ১৭ রমজান ছিল জুনায়েদ হত্যাকান্ডের ২বছর পূর্তি।

জুনায়েদ হত্যাকান্ড মামলার ১০জন আসামীদের মধ্যে গ্রেফতারকৃত ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউটের ছাত্র সাইফুল ইসলাম তপুর ১৬৪-এ স্বীকারোক্তি দেয়ার পরও ২ বছরেও চার্জশীট না হওয়ায় ফেনী পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নিহত পরিবারসহ নিহতের নিজ এলাকা খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়িবাসীর মধ্যে জন্ম নিয়েছে নানা প্রশ্ন, সন্দেহ ও শঙ্কা।

১৭ রমজান খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গা উপজেলাধীন তবলছড়ি এলাকার বড়বিল মুসলিম পাড়ায় মেধাবী ছাত্র জুনায়েদের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বাদ আছর পারিবারিক ইফতার ও দোয়া মাহফিলে ছেলে জুনায়েদের জন্য মা সাফিয়া বেগমের আর্তচিৎকার যেন বলছে-‘‘বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে নিভৃত্বে’’। গতানুগতিক ধারায় মামলার চার্জশীট, প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তি প্রদান করা হলেই থামবে যেন জুনায়েদের মাতা কান্না !

তথ্যানুসন্ধানে ও দায়েরকৃত মামলা সূত্রে জানা যায়, খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ হতে বিল্ডিংস্ ট্রেড হতে জিপিএ-৫ পেয়ে আর্কিটেকচার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয় জুনায়েদ। সেখানেই খাগড়াছড়ি জেলার অপর ছাত্র জনৈক ইসমাইল ও মাসুমের সাথে ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের কতিপয় ছাত্রদের টাকা লেনদেনের জের ধরে ২০১২সালের ২২জুলাই ফেনী কম্পিউটার ইনস্টিটিউটের ছাত্র ফুলগাজীর আ: কুদ্দুস মজুমদার (২৩) ও সোনাগাজীর হান্নানের ছেলে সাইফুল ইসলাম তপু (২২) এর নেতৃত্বে ৭-৮ জনের ছাত্র নামে সন্ত্রাসীদল জোনায়েদকে একা পেয়ে নির্মম ভাবে ফিল্মি স্টাইলে শারীরিক ভাবে নির্যাতন চালিয়ে মুমুর্ষ অবস্থায় ফেনীর কাজিরবাগ নানার মেসে আটকিয়ে রাখে। পরে আ: কুদ্দুস মজুমদারের মুঠোফোনে হুমকির মুখে খাগড়াছড়ি হতে জুনায়েদের বড় ভাই ও আত্মীয় স্বজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে মুক্তিপণ দিয়ে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ফেনী সার্জিকেল কেয়ার ক্লিনিকে ভর্তি করে। অবস্থার অবনতি ঘটলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম সার্জিসকো ক্লিনিকে আইসিউতে হস্তান্তর করা হয়। ক্রমেই অবস্থার আরও অবনতি হলে ঢাকা ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ১৫ দিন আইসিওতে চিকিৎসাধীন থাকার পর ৬ আগস্ট (১৭ রমজান) সোমবার সকাল ৮ টার দিকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এই মেধাবী ছাত্র। ময়না তদন্ত শেষে পরের দিন মঙ্গলবার সকালে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বড়বিল মুসলিমপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

এঘটনায় ২২জুলাই জুনায়েদের বড় ভাই মো. আবু তাহের ফেনী মডেল থানায় ফেনী কম্পিউটার ইন্সটিটিউটের ছাত্র আ: কুদ্দুস মজুমদার ও সাইফুল ইসলাম তপু সহ অজ্ঞাত ৮জন উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-৫২০/৪০, এছাড়াও দোষীদের বিরুদ্ধে রুজু হয় ফেনী জি-আর মামলা-৫১৯/১২।

ফেনী থানা সূত্রে জানা যায়, এ মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে ছিলেন তৎসময়ের এস.আই শাহিনুজ্জামান। এসময় জিআর মামলার মূল আসামী ও নিহত ছাত্রের বড় ভাই আবু তাহেরের দায়েরকৃত মামলার ২নং আসামী সাইফুল ইসলাম তপুকে গ্রেফতার করে ফেনী পুলিশ। তার স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে অন্যান্য ১০আসামীর নাম। পরবর্তীতে মূল হোতা আ: কুদ্দুছ সহ ১বছর পর কাপ্তাই জেলার শফিকুল ইসলামকে পুলিশ গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। বর্তমানে গ্রেফতারকৃত তিনজনই জামিন লাভ করলেও সাইফুল ইসলাম তপু বর্তমানে পলাতক রয়েছে। এছাড়াও এ মামলায় পরবর্তীতে তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পান ফেনী থানায় দায়িত্বরত এস.আই সোলেমান, এস আই এরশাদ ও বর্তমানে এস.আই নজরুল ইসলাম। হত্যাকান্ডের ২ বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও মামলার চার্জশীট প্রদানে পুলিশের এমন ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। অভিযোগ রয়েছে, মামলা নিয়ে চলছে গড়িমশি।

এদিকে, জুনায়েদ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের দাবীতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা নুরুন্নবী চৌুধুরী বলেন, একটি পরিবার যেন সুবিচার পায় তার জন্য ফেনী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, তৎসময়ের মেয়র বর্তমান সাংসদ নিজাম হাজারী, ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষের নিকট স্ব-শরীরে দেখা করে অবহিত করার পরও দুই বছরেও মামলার অগ্রগতি ও চার্জশীট না হওয়া দু:খজনক। তিনি গ্রেফতারকৃত আসামীর ১৬৪-এ স্বীকারোক্তিতে দেয়া সকল আসামীকে গ্রেফতার পূর্বক শাস্তি প্রদানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

এ বিষয়ে জুনায়েদের বড় ভাই ও মামলার বাদী মো. আ: আবু তাহের ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলেন, ছোট ভাই জুনায়েদ ও পরবর্তীতে ছেলের শোকে পিতার মৃত্যুতে তাদের পরিবারের সদস্যরা শোকে কাতর। তিনি ১৬৪-এ স্বীকারোক্তিতে দেয়া সকল আসামীর নামে চার্জশীট সহ গ্রেফতারের দাবী জানান। এছাড়াও তিনি বলেন, সু-বিচার পেতে খাগড়াছড়ি জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন ও প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করার পরও আজও মামলার কোন অগ্রগতি হয়নি।
প্রসঙ্গত: ফেনী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্র জুনায়েদের হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে ইন্সটিটিউটে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন