খাগড়াছড়িতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে বালি খেকোদের তান্ডব

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:

খাগড়াছড়ির বিভিন্ন নদী-খালে অবাধে চলছে বালি খেকোদের তান্ডব। সরকারিভাবে বালি উত্তোলনের জন্য ৯টি স্পর্টে বৈধ ইজারাদার নিয়োগ করা হলেও খাগড়াছড়ি সদরসহ বিভিন্ন উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীতে প্রায় অর্ধশতাধিক স্পর্টে ড্রেজার দিয়ে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন চলছে।

প্রকাশ্যে বালি উত্তোলন ও বেচা-কেনার হাট, যেন দেখার কেউ নেই! নির্বিচারে বালি উত্তোলনের কারণে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। ধারণ ক্ষমতার বেশি ওজনের বালি ভর্তি ট্রাক ও ট্রাক্টর চলার কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো তছনছ হয়ে গেছে।

অবৈধভাবে উত্তোলনের কারণে বৈধ বালি মহাল ইজারাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং সরকারেরও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি হচ্ছে। পরিবেশ পড়েছে হুমকির মুখে।

বালু খেকোদের তান্ডবে এখন ক্ষত-বিক্ষত খাগড়াছড়ি সদর, দীঘিনালার, মানিকছড়ি ও পানছড়ির পাশ দিয়ে প্রবাহিত চেঙ্গী, মাইনী, হালদা, মানিকছড়ি খাল, চেঙুগুছড়া ও বড়বিলসহ বিভিন্ন নদী ও খাল। এসব নদী ও খালে নিয়মিত ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে বালি খেকো একটি প্রভাবশালী মহল।

কোন ধরণের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অন্তত অর্ধশত স্পর্ট থেকে দিনে-রাতে বালি উত্তোলন চলছে। উত্তোলিত বালি ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। বালি ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে নাজুক অবস্থায় দাড়িয়েছে গ্রামীণ সড়কগুলো। বালি মহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা বিধি না মানার কারণে নদী-খাল ও ছড়া ভেঙ্গে গেছে। তবে বালি সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ।

অতিরিক্ত বালি বোঝাই ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। প্রতিদিন বালির শত শত ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচল করায় সড়কগুলো বেহাল। জনগণের দুর্ভোগের সীমা নেই। অবৈধ ও অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালি উত্তোলনের কারণে নদী-খাল তীরবর্তী বসতবাড়ীগুলোও হুমকির মুখে পড়েছে। বালি উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।

মঙ্গলবার (১২ ফের্রুয়ারি) সকালে মানিকছড়ি সদর উপজেলার সিএন্ডবি কলোনি এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, তিন শ্রমিক খাল থেকে ড্রেজার দিয়ে বালি তুলছে। পাশের কয়েক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, বালি উত্তোলনের কারণে প্রতি বর্ষা মৌসুমে তাদের ভূমি ভেঙ্গে যাচ্ছে। বালি উত্তোলনে বাধা দিলে হুমকি দেওয়া হয়। কারণ বালি উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী ও রাজনীতির সাথে জড়িত।

কিছু সময় পর বেলাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে জানালেন, তিনি শ্রমিক লীগের নেতা। তিনি বালি তুলছেন নিচু রাস্তা সমান করার জন্য।

তিনটহরী চেংগুছড়া রাস্তায় দেখা গেছে আরও ভয়াবহ চিত্র। এ সড়কের বিভিন্ন স্পর্টে ড্রেজার দিয়ে বালি তুলছে শ্রমিকরা। কিন্তু নির্দ্দেশদাতা নাম বলতে রাজি নয় তারা। অতিরিক্ত বালু ভর্তি ট্রাকের ভারে এ গ্রামীণ  সড়কটি এখন বিলীন হওয়ার পথে। কোথাও কোথাও বড় বড় গর্ত। আবার কোথাও সড়কের কোন অস্থিত্ব নেই।

জনৈক ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, পুরো সড়কটি বালি খেকোরা নষ্ট করে দিয়েছে। দিনে-রাতে এ সড়ক দিয়ে চলে অতিরিক্ত বালু ভর্তি ট্রাক। এরা প্রভাবশালী। কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করে না। একই চিত্র মানিকছড়ির বড়বিল,যোগ্যাছলা, পাক্কাটিলার ও তুলাবিল এলাকার। এ সব এলাকার প্রতি কদমে কদমে দেখা মিলবে বালি উত্তোলনের চিত্র।

নাম প্রকাশ না শর্তে কয়েক জন স্থানীয় জানান, সম্প্রতি সেনা, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও আবারও পুরোদমে চলছে।

খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সভাপতি প্রদীপ চৌধুরী বলেন, নির্বিচারে বালি তোলার কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। নদী, খাল ও ছড়াগুলোর ইকোসিস্টেম মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, অবৈধ বালি উত্তোলনকারীদের ধরতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালানো হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। অভিযানের খবর আগে জেনে যাওয়ায় সফল হচ্ছে না। তবে ভ্রাম্যমান আদালতের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।

পরিবশে রক্ষায় বালি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এমনি প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: খাগড়াছড়িতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চলছে বালি খেকোদের তান্ডব
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন