খাগড়াছড়িতে বাথরুম উদ্বোধন করেন এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ডিসি, ইউএনও

khagrachori

কাওসার আজম, খাগড়াছড়ি থেকে :

পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আলুটিলা রিসাং ঝর্ণাটি পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয় জায়গা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে যেসব পর্যটক খাগড়াছড়িতে ঘুরতে আসেন, তাদের পছন্দের তালিকায় রিসাং ঝর্ণা অন্যতম। নান্দনিক এই ঝর্ণার প্রবেশ মুখেই পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বাথরুম (ওয়াশ ব্লক ও চেঞ্জিং রুম)।

চলতি বছর ৭ সেপ্টেম্বর এটির উদ্বোধন করা হয়েছে। বাথরুমের উদ্বোধনী ফলকটিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য (স্থানীয় এমপি) বাবু কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বাবু কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান ও মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিএম মশিউর রহমানের নাম রয়েছে বড় বড় অক্ষরে। এলজিএসপি-২ এর অর্থায়নে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই বাথরুমটি নির্মাণ করা হয়েছে।

প্রতিদিন রিসাং ঝর্ণা দেখতে আসা শত শত পর্যটক ওই বাথরুম ১০টাকা মূল্যে ব্যবহার করে থাকেন। তবে অনেক সময় এর চেয়ে বেশি অর্থ নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এদিকে, একটি বাথরুম উদ্বোধনের ফলকে স্থানীয় এমপিসহ ৪ জন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তার নাম থাকায় হাস্যরস সৃষ্টি হয়েছে পর্যটকদের মধ্যে। অনেকেই এই নামফলকের সঙ্গে নিজের ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করছেন, সমালোচনা করছেন।

khagrachori-1

রিসাং ঝর্ণা
খাগড়াছড়ি জেলা সদর থেকে ৯ কিলোমিটার, পর্যটন মোটেল থেকে ৭ কি.মি. এবংআলুটিলা থেকে ২ কি.মি. দূরে মাটিরাঙ্গা উপজেলাতে রিসাংঝর্ণার অবস্থান।মূল রাস্তা থেকে উত্তরে গেলেই ঝর্ণার কলকল ধ্বনিশুনতে পওয়া যায়। এখানে পাশাপাশি দুটি ঝর্ণারয়েছে। পর্যটকদের সুবিধার জন্য একটি ঝর্ণায়যেতে পাকা সিঁড়ি দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। তাই সহজে এই ঝর্ণায়যাওয়া যায়। প্রথমটি থেকে আরও ২০০ গজ ভেতরে আরও একটি ঝর্ণা রয়েছে।

জেলা শহর থেকে ঝর্ণা স্থলের দুরত্ব সাকুল্যে ১১ কি: মি: প্রায়। নিজস্ব পরিবহন নিয়ে আপনি অনায়াসেই চলে যেতে পারেন একেবারে ঝর্ণার পাদদেশে। সামান্য পায়ে হাঁটা পথ যাত্রার আকর্ষণকে আরো বাড়িয়ে দেবে। উঁচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে পায়ে হেঁটে যেতে যেতে যে কারো দৃষ্টি আটকে যাবে পাহাড়ী সবুজ প্রকৃতি ও জীবনধারায়। হাজার ফুট নীচের উপত্যকায় দৃষ্টি পড়লে অপূর্ব মুগ্ধতায় ভরে যেতে পারে মন। জাগতে পারে রোমাঞ্চকর শিহরণ।

তবে সাধবান! ঝর্ণায় গোসল করতে গিয়ে যেকোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে রিসাং ঝর্ণা দেখতে গিয়ে ঢাকা থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের চোখের সামনেই এক পর্যটক পা পিছলে পড়ে যান। তিনি সঙ্গে সঙ্গে ঝর্ণার পানির স্রোতে গড়াতে গড়াতে কয়েকশত ফুট নিচে পড়ে যান। এতে মাথা ও হাতে প্রচণ্ড আঘাত প্রাপ্তও হয়েছেন তিনি। সাংবাদিকদের মধ্যেও একজন পা পিছলে পড়ে যান। তবে পরিধেয় কাপড় ভিঁজে গেলেও ভাগ্যক্রমে তিনি আঘাতপ্রাপ্ত হননি।

মূল রাস্তা থেকে ঝর্ণাটিপ্রায় ২ কিলোমিটার ভেতরে। পুরোটাই পায়ে হাঁটাপথ।প্রাকৃতিক এই ঝর্ণাটিপ্রায় ৩০ মিটার উঁচু থেকে আছড়ে পড়ছে নিচে। পুরোটাই পাথুরে পরিবেশ। পাহাড়ের প্রায় ১০০ ফুট ওপর থেকে ঝর্নার পানি নিচে পড়ছে। নিচে পড়ার পর তা আবার আরও ১০০ ফুট পাথরের ওপর গড়িয়ে নেমে আসে সমতলে। এটি এর একটি স্বাতন্ত্র রূপ, যা আপনার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যাবে।

রিসাং ঝর্ণার কাছাকাছি আরেকটি ঝর্ণা আছে যা রিসাং ঝর্ণা-২ বা অপু ঝর্ণা নামে পরিচিত। এটির পথ খানিকটা দুর্গম এবং রিসাং ঝর্ণা থেকে যেতে ৩০/৪০ মিনিট লাগবে।

যেভাবে যাবেন
ঢাকার আরামবাগ, শ্যামলী, কল্যাণপুর, আসাদগেট থেকে শান্তি, শ্যামলী, হানিফ, বিআরটিসি ও সেন্টমার্টিন পরিবহনের এসি বাস খাগড়াছড়িতে যায়। চট্টগ্রাম থেকেও বিআরটিসি বাস খাগড়াছড়িতে চলাচল করে।
খাগড়াছড়ি থেকে বাসে বা চাঁদের গাড়িতে করে রওনা দিয়ে রিসাং ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন