খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভীড়

kg 1

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার :
এ যেন বিধাতার নিজ হাতে গড়া প্রকৃতির হাতছানি। পাহাড় আর অরণ্য বেষ্টিত সর্পিল পিচঢালা সড়ক। পাহাড়ের বুক ছিড়ে নেমে আসা জলপ্রপাত উপভোগ করতে খাগড়াছড়ির সবকটি পর্যটন স্পটে ভিড় করছেন নানা বয়সী পর্যটকরা। শিশু, নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে সব বয়সীরা মেতে উঠেছেন ঈদ আনন্দে। যেখানে গেছি সেখানে ভ্রমন পিপাসু পর্যটকদের বাঁধভাঙা জোয়ার। এবারের ঈদে স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পর্যটকেরা ঈদের বাড়তি আনন্দ পেতে ছুটে এসছে খাগড়াছড়ির নয়নাভিরাম বিভিন্ন পর্যটন স্পটে।

খাগড়াছড়ির আলুটিলা রহস্যময় সুরঙ্গ, জেলা পরিষদ পার্ক, মাটিরাঙ্গার রিছাং ঝর্ণা, শতবর্ষী বটগাছ, জলপাহাড়, ভগবান টিলা, দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝর্ণা, থাংঝাং ঝর্ণা, গোবিন্দ মানিক্যের খনন করা দীঘি, দীঘিনালা বনবিহার, মানিকছড়ির রাজবাড়ি, রামগড়ের রামগড় লেক, চা বাগান, পানছড়ির রাবার ডেম ও পানছড়ির শান্তিপুর অরণ্যকুটির সবকটি স্পটেই ঈদের দিন বিকেল থেকেই উপচে পড়া ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ঈদের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের এ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
kg 2
টানা বৃষ্টির পর রৌদ্রোজ্জল দিনে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকদের পাশাপাশি খাগড়াছড়ির সব বয়সী মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে এ সব স্পটে আনন্দে উদযাপনে মেতেছেন। কেউই যেন অপার এ আনন্দকে হাতছাড়া করতে চাননি। প্রতিটি স্পটেই বাড়তি উৎসবে মেতেছিলেন নব দম্পতি, কপোত-কপোতি আর প্রেমিক-প্রেমিকারা।

ছোট্ট ছোট্ট শিশু থেকে শুরু করে যুবক-যুবতীরা জলপাহাড়ের প্রস্বস্ত লেকের ঝলমল পানিতে ময়ুরপঙ্খী নৌকায় চড়ে প্রকৃতি উপভোগ করছেন। মাঝ বয়সীরা প্রকৃতির ছায়াতলে আড্ডায় মেতেছেন। নব দম্পতি, কপোত-কপোতি আর প্রেমিক-প্রেমিকারা পাহাড়ের বুক ছিড়ে নেমে আসা ঝড়নাধারার সাথে মিতালী করতেও ভুল করেনি। দুর পাহাড়ে ছুটে চলার ক্লান্তি যেন মিশে গিয়েছিল পাহাড়ের আনন্দ জোয়ারে। ছোটদের ছোটাছুটি, বড়দের আড্ডা আর তরুন-তরুনীদের ঝর্ণাধারার সাথে আলিঙ্গনের ফলে খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলো যেন তাদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

চট্টগ্রাম থেকে মাটিরাঙ্গার জলপাহাড়ে বেড়াতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মামুন পার্বত্যনিউজকে বলেন, ‘আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে দেশের অনেক পর্যটন স্পট ঘুরেছি। ফেইসবুকের বদৌলতে জলপাহাড়ের গল্প শুনেই ঈদের ছুটিতে এখানে ছুটে  এসেছি। তার মতে স্বল্প পরিসরে বিনোদনের এর চেয়ে বড় সুযোগ আর হতে পারেনা। জলপাহাড়ের আয়োজন অতীতের সব বিনোদনকে ম্লান করে দিয়েছে। দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝর্ণা ঘুরে আসা ইফতেখারের ভাষায় তার কাছে নতুন স্বপ্নের নাম তৈদুছড়া। তৈদুছড়া ঝর্ণায় অনেক মজা করার পাশাপাশি নতুন এক অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছি। তৈদু ঝর্ণায় যাওয়ার উঁচুনিচু পথ, আশেপাশের ঝোপঝাড়, জলপ্রপাত তাদেরকে মুগ্ধ করেছে বলেই জানালেন তার আরেক বন্ধু ফরহাদ। সরকারের কাছে মাটিরাঙ্গার জলপাহাড় ও দীঘিনালার তৈদুছড়া ঝর্ণার উন্নয়নের পাশাপাশি প্রচার-প্রসারের দাবী করেন করেন স্থানীয় সাংবাদিক শাহজাহান কবীর সাজু।

স্থানীয়দের পাশাপাশি ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকরা রিছাং ঝর্ণার প্রকৃতি উপভোগ করার পর আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ দেখতে ভুলেননি। গা ছমছম করা আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ আর রিছাং ঝর্ণা এই সময়ের পর্যটকদের কাছে স্বপ্নের চারন ভুমি এমনটাই বললেন চট্টগ্রাম থেকে ছুটে আসা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মোহাইমিনুল আমিন। তার মতে পাহাড়ের বুক ছিড়ে নেমে আসা ঝর্ণা ধারার সাথে মিতালী আর ২৮২ ফুটের সুরঙ্গ অতিক্রম না করলে জীবনটাকেই উপভোগ করা হতোনা।

সবমিলিয়ে ঈদের ছুটিতে স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আগত পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত ছিল খাগড়াছড়ির পর্যটন স্পটগুলো। কোথাও যেন তিলধারণের ঠাঁই ছিলনা। পাহাড়ী কন্যা খাগড়াছড়ির আকাশ-পাহাড়ের মিতালিও উপভোগ করছেন আগত পর্যটকরা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন