খাগড়াছড়িতে টানা ৭২ ঘণ্টার হরতাল কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি:
উত্তেজনা-আতংকের মধ্যে মাইক্রোবাস চালক সজিবসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচার ও অপহৃত তিন বাঙালি ব্যবসায়ী উদ্ধারের দাবীতে খাগড়াছড়িতে টানা ৭২ ঘন্টার হরতালের প্রথম দিন কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে। বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদ এ হরতালের ডাক দেয়। হরতালের সমর্থনে বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীরা রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করছে।

এদিকে হরতাল প্রত্যাহারের জন্য পুলিশ রাতভর নেতাকর্মীদের বাড়ী-ঘরে তল্লাসীর অভিযোগ করলেও পুলিশ তা অস্বীকার করছে। তবে হরতালের কারণে কর্মজীবী মানুষ দুর্ভোগের পড়েছে।

সকাল থেকে খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন পয়েন্ট ছিল পিকেটারদের দখলে।। ভোরের আলো ফোটার আগ থেকে হরতালের সমর্থনে খাগড়াছড়ি শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে পিকেটিং করছে বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মী। হরতালের কারণে শহরের দোকানপাট ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান খোলেনি। দুরপাল্লা ও আভ্যন্তরীণ সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। হরতালের কারণে কর্মজীবী মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

বৃহত্তর পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাঈন উদ্দিনের অভিযোগ পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে বাধা দিচ্ছে। রাতভর নেতাকর্মীদের বাড়ী-ঘরে পুলিশ তল্লাশী চালিয়েছে। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন বলেছেন, খাগড়াছড়িতে কোন হরতাল হচ্ছে না।

গত বৃহস্পতিবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত রাঙামাটির নানিয়াচর উপজেলা চেয়ারম্যান ও খাগড়াছড়ি জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য এডভোকেট শক্তিমান চাকমার শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে গতকাল শুক্রবার দুপুরে খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি সড়কের বেতছড়িতে সন্ত্রাসীদের হামলায় ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক-এর কেন্দ্রীয় আহবায়ক তপন জ্যোতি চাকমাসহ পাঁচজন নিহত হয়েছে।
নিহত ও আহতরা সকলেই খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।

মাত্র ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীদের ব্রাশ একজন জনপ্রতিনিধি ও অপর আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ ৬ জনের নির্মম মৃত্যু পাহাড় জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসা বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। পাহাড়ে আঞ্চলিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘাতে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকন্ঠা রিবাজ করছে সচেতন মহলেও। তারা এ সংঘাত বন্ধ না হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হওয়ার আশংকা করেছেন।

এদিকে নিহতের শেষকৃত্য শেষ হলেও তাদের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তবে পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে মুখ খুলতে না চাইলে জেএসএস(এমএন) রাজনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক বিভূরঞ্জন চাকমা পাহাড়ের সকল হত্যাকান্ডের জন্য প্রসীতের ইউপিডিএফ-কে দায়ী করে তাদের রাষ্ট্রীয় ভাবে নিষিদ্ধের দাবী জানিয়েছেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর বিবদমান পাহাড়ি সংগঠনগুলোর মধ্যে সংঘাতে প্রায় ৫শতাধিক নিহত ও সহস্রাধিক আহত হয়েছে। তার মধ্যে চলতি বছরে প্রাণ হারিয়েছে একজন উপজেলা চেয়ারম্যানসহ অন্তত ১৮জন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন