Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

খাগড়াছড়িতে আ’লীগের দুই গ্রুপের শক্তি বৃদ্ধিতে বহিরাগত সশস্ত্র ক্যাডারদের সমাবেশ

SAMSUNG CAMERA PICTURES

বিশেষ প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়িতে আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপ শক্তির যোগান দিতে বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র বহিরাগত ক্যাডারের সমাগম ঘটিয়েছে। ক্যাডারদের জন্য শহরের নিজেদের নিরাপদ আস্থানাগুলোতে খোলা হয়েছে লঙ্গরখানা। পুলিশের টানা অভিযানের মুখে দুই গ্রুপের সন্ত্রাসীরা মুখোমুখি সংঘাতে লিপ্ত হতে না পারলেও প্রস্তুত হয়ে আছে আঘাত এলে পাল্টা আঘাতের জন্য। একাধিক স্থানীয় সূত্র এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এসব তথ্যকে উড়ো খবর দাবী করে বলা হচ্ছে, যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য তারা প্রস্তুত রয়েছেন।

খাগড়াছড়ি শহরের আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে চলতি সংঘাতে সূচনা হয় বুধবার রাতে শহরের শালবাগানে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের অনুসারী শুক্করের উপর হামলার জেরে। তার পরের দিনই বৃহষ্পতিবার প্রকাশ্যে দিবালোকে শহরের কলেজ রোডে বেলা ১২টার দিকে নারিকেল বাগান এলাকায় কেন্দ্রীয় সনাতন সমাজ কল্যাণ পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা খাগগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ সদস্য নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার  ঘটনা ঘটে।

ঘটনার প্রতিবাদে শহরে লাঠি মিছিল বের করে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির অনুসারীরা। জাহেদুল আলম ও রফিকুল আলমের বিরুদ্ধে নানা শ্লোগান দিয়ে মিছিলটি শাপলা চত্বরে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। নেতাকর্মীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে আওয়ামীলীগের অপর অংশের কার্যালয়ে হামলা চালায়। এ সময় কয়েকটি দোকানে হামলা ও কয়েকটি টমটম ভাংচুর হয়। এ সময় আতংকে শহরের অধিকাংশ দোকানপাট ও যানবাহন সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়।
Khagrachari Pic(03) 23-01-2017

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রাতে জেলা প্রশাসন বিশেষ আইন-শৃঙ্খলা সভা আহবান করলেও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও তার অনুসারীরা তা বর্জন করেন।

নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে শুক্রবার সকালে ফের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী হামলার জন্য আওয়ামীলীগ নেতা জাহেদুল আলম ও তার ছোট ভাই মেয়র রফিকুল আলমসহ চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। তার পরক্ষণেই আদালত সড়ক এলকায় হামলার শিকার হন জাহেদুল আলমের অনুসারী হিসেবে পরিচিত জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার রইছ উদ্দিন।

রইছ উদ্দিনের উপরে হামলার প্রতিবাদে জাহেদুল আলমের নেতৃত্বে শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে হামলার জন্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির গ্রুপকে দায়ী করা হয়।
Khagrachari Pic(04) 23-01-2017

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ হান্নান পার্বত্যনিউজকে জানান, উল্লেখিত পৃথক ঘটনায় খাগড়াছড়ি সদর থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। মামলায় দুইপক্ষের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরও আসামী করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার ঘটনায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করে  দায়েরকৃত মামলায় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম, তার ছোট ভাই পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম ও  জাহেদুল আলমের ছোট ভাই জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা ও মানবসম্পাদক দিদারুল আলম ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন ফিরোজসহ জাহেদুল আলমের অনুসারী সকল উল্লেযোগ্য নেতাকে আসামী করা হয়েছে।

অপর দিকে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রইছ উদ্দিনের উপর হামলার ঘটনায় পৌরসভার মেয়র মো. রফিকুল আলম বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলায় খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রণবিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, জেলা পরিষদ সদস্য মংশেপ্রু চৌধুরী অপু, জুয়েল চাকমা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শানে আলমসহ ২৬ জনের নাম উল্ল্খে করে আরো অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামী করা হয়েছে।
Khagrachari Pic(05) 23-01-2017

এছাড়া শুক্কর আলীর উপর হামলায় ঘটনায় কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপির অনুসারী আওয়ামীলীগের ১১ নেতাকর্মীকে আসামী করে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত মাত্র আট আসামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দুই গ্রুপের পক্ষে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও পাশ্ববর্তী চট্টগ্রাম, ফটিকছছি, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, ফেনী ও ছাগলনাইয়া থেকে বিপুল সংখ্যক সশস্ত্র ক্যাডার খাগড়াছড়ি এসেছে। ভারী আগ্নেয়াস্ত্রে সজ্জিত এসব ক্যাডার শহরের আশাপাশে অবস্থান করছে। এরা যে কোন সময় দুইপক্ষের হয়ে সংঘাতে লিপ্ত হতে পারে। এতে প্রাণ হানির আশংকাও করছেন কেউ কেউ।

খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ হান্নান এধরনের তথ্যকে উড়ো খবর দাবী করে পার্বত্যনিউজকে বলেন, আমার কাছেও এ ধরনের তথ্য ছিল। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা সাদা পোষাকে শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করছে। পুলিশ মামলার আসামীদের ধরতে দিন-রাত অভিযান চালাচ্ছে।

তবে সচেতন মহলের অভিযোগ, আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুলিশের অভিযান লোক দেখানো। তবে খাগড়াছড়ি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তারেক মোহাম্মদ হান্নান এমন অভিযোগ অস্বীকার করে পার্বত্যনিউজকে বলেন, পুলিশের চেষ্টার কমতি নেই। তিনি জানান, পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলীর নির্দেশ যে কোন মূল্যে আসামী ধরতে হবে। অন্যথায় শাস্তি ভোগ করতে হবে।

এদিকে কেন্দ্রীয় সনাতন সমাজ কল্যাণ পরিষদের প্রধান উপদেষ্ট ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক  নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলার প্রতিবাদে ও জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের  সকল নাগরিকের জানমালে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবীতে খাগড়াছড়ি জেলা সকল মন্দির ও মঠে কালো ব্যানার ঝুলছে। খাগড়াছড়ি কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদ, বাংলাদেশ জন্মাষ্টমী উদযাপন ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এসব ব্যানার উত্তোলন হয়।
Khagrachari Pic(01) 23-01-2017

সনাতন সম্প্রদায়ের দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল নাগরিকের জান-মাল রক্ষায় প্রশাসনের উপযুক্ত পদক্ষেপ, নির্মলেন্দু চৌধুরীর উপর হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, খাগড়াছড়ি জেলার হিন্দু সম্প্রদায়ের সকল মঠ, মন্দির, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দের নিরাপত্তা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় ভবিষ্যতে হিন্দু সম্প্রদায়ের নাগরিক ও জান-মালের উপর হামলা, অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধে সরকারের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ। একই দাবীতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্বারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সনাতন সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ।

অপর দিকে  জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রইছ উদ্দিনের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতারের দাবীতে সোমবার জেলা শহরে  বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী দিয়েছে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড।

খাগড়াছড়িতে ধারাবাহিক সহিংসতার জন্য জেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার অভিযোগ, জাহেদুল আলম ও তার ছোট ভাই রফিকুল খাগড়াছড়িতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। অপর দিকে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের অভিযোগে, এমপি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরার সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে খাগড়াছড়ি শহরবাসী জিম্মি হয়ে পড়েছে।

প্রসঙ্গত, গত পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়াকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগ দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এর পর থেকে প্রতিনিয়ত খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি ও সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলমের অনুসারীরা পাল্টা-পাল্টি হামলা, মামলা ও ভাংচুরে লিপ্ত হয়ে আসছে। এ সময় মধ্যে উভয় পক্ষের অর্ধ শতাধিক নেতাকর্মী-পথচারী আহত হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন