ক্ষুদ্র জাতিগুলোকে যদি ‘আদিবাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তাহলে প্রধান স্রোতবাহী নীতিনির্ধারক বাঙালিরা কি নব্যবাসী

chakma
এ কে এম জাকারিয়া
জাতিসংঘ কর্তৃক ব্যবহৃত ‘Indigenous’ শব্দটির অপব্যাখ্যায় ‘আদিবাসী’ শব্দটি উপজাতিদের ক্ষেত্রে প্রয়োগের প্রবণতা যথার্থ নয়। বিষয়টি গভীরে নিয়ে আলোচনা করলেই বিভ্রান্তির অবসান হতে পারে। অযৌক্তিকভাবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যে আঘাত হেনে কোনো একটি জনগোষ্ঠীকে মর্যাদামণ্ডিত করা যায় না।
‘উপজাতি’ বলতে এমন একটি জনসমষ্টি বা সামাজিক গোষ্ঠীভুক্ত দলকে বোঝায়, যাদের রয়েছে একেকটি নিজস্ব বিশেষ ভাষা এবং সংস্কৃতি, আর অন্যান্য জাতি থেকে একটু ভিন্নতর, যারা বাস করে পৃথক পৃথক একেকটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে, যাদের মধ্যে আছে একটি বিশেষ সহানুভূতির ঐক্যবোধ, যারা তাদের একে অন্যের সঙ্গে সহাবস্থানে সম্পৃক্ত করে রাখে। সোজা কথায় বলা যায়, কোনো একটি দেশে শ্রেণীসহাবস্থানে বৃহত্তর জাতির পাশাপাশি অপরাপর ক্ষুদ্রতর জাতির অবস্থানকে উপজাতি হিসেবে বুঝানো হয়। অন্যভাবে বলতে পারি যে, কোনো একটি বৃহত্তর নদী অপেক্ষা অপর একটি ক্ষুদ্রতর নদীকে বলা হয় ‘উপনদী’; একটি বড় দ্বীপ থেকে অন্য একটি ছোট দ্বীপকে বলে ‘উপদ্বীপ’; একটি বৃহত্তর সাগর অপেক্ষা তুলনামূলক কোনো ছোট সাগরকে বলা হয় ‘উপসাগর’; আর একটি বৃহত্তর শহর থেকে আরো একটু ছোট শহরকে ‘উপশহর’ ইত্যাদি নামে অভিহিত করা হয়ে থাকে। স্বাভাবিকভাবে জাতি ও উপজাতি প্রসঙ্গটিও ঠিক এমনি একটা ব্যাপার মাত্র।
আমাদের দেশে অবস্থানকারী বৃহৎ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে অন্যান্য ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর সান্নিধ্যমূলক পরিচয় সূচিত হয় ‘উপজাতি’ নামে। একটি দেশের মধ্যে যখন কোনো একটি আইন প্রণয়ন করা হয়, তখন ওই আইনটি কেবল ওই নির্দিষ্ট দেশের অভ্যন্তরে সার্বভৌমত্বের অখণ্ডতা বজায় রেখে শাসনকার্য পরিচালনা করার লক্ষ্যে প্রযোজ্য হয়ে থাকে, বহির্বিশ্বের জন্য নহে; অর্থাৎ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানটি কেবল বাংলাদেশের ভৌগোলিক সীমানা অখণ্ডতা রক্ষার্থে নীতি-নির্ধারণী একমাত্র নির্ভরশীল আইন বটে, এটি অন্য কোনো একটি দেশ পরিচালনা করার বিধি-বিধান নয়। এমনি কায়দায় বাংলাদেশের নৃ-তাত্ত্বিক শ্রেণীগোষ্ঠী স্ব-স্ব পরিচয়সূচক রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা, নৃ-বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মতামত সংবলিত সার্বভৌম কর্তৃপক্ষের সুচারু ধারণাগত নির্দেশ সবকিছুই অনন্য এক যোগসূত্রতার সূতিকাগার অতন্দ্রপ্রহরীরূপে বাস্তব দর্শনে সবার মাঝে সূচিত হয়েছে অভিন্ন সমীক্ষায়। বাংলাদেশে যারা উপজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, তাদের কাউকেই এ নিয়ে লজ্জাবোধ করা কিংবা চিন্তায় মাথা ঘামানোর কোনো হেতু থাকতে পারে না।
(১) নৃ-বিজ্ঞানী কোহেন ও ইয়ামস বলেছে, ‘উপজাতি বলতে এমন এক জনগোষ্ঠীকে বোঝায়, যারা তাদের জীবিকার জন্য খাদ্য সংগ্রহ, উদ্যান, কৃষি ও পশুপালনের উপর নির্ভরশীল’। (২) টেলর বলেছে, ‘উপজাতি বলতে বোঝায় এমন একটি জনগোষ্ঠী, যারা মোটামুটিভাবে একটি অঞ্চলে সংগঠিত এবং তাদের মধ্যে রয়েছে সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং যার সদস্যরা মনে করে- তারা একই সাংস্কৃতিক এককের অন্তর্ভুক্ত। (৩) ‘আরণ্য জনপদে’ নামক গ্রন্থে আবদুস সাত্তার বলেন, ‘প্রধান জাতির অন্তর্ভুক্ত ক্ষুদ্র জাতি বা সম্প্রদায়কে উপজাতি বলা হয়। এমন অনেক উপজাতি রয়েছে যারা বর্তমানে অনেক শিক্ষিত, উন্নত এবং যাদের মধ্যে রয়েছে প্রেমিক দরবেশ, রাজা-বাদশাহ, বীরযোদ্ধা এবং কবি-সাহিত্যিকও যথেষ্ট দৃষ্টিগোচর হয়। তাছাড়া তাদের সরলতা, ধর্মভাব, ধৈর্য, সাহস ও আত্মসম্ভ্রমজ্ঞান স্বভাবতই আমাদের মনে শ্রদ্ধার উদ্রেক করে। এদিক দিয়ে বিচার করলে উপজাতির সংজ্ঞায় কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। (৪) ‘এই পৃথিবীর মানুষ’ নামক গ্রন্থে এ.কে.এম আমিনুল ইসলাম লিখেছেন যে, ‘অনেক সময়ই উপজাতি (Tribe) এবং জাতের (Caste) মধ্যে পার্থক্য নিরূপণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ভারতীয় সভ্যতার সূত্রীয় রীতিতে জাত হলো সংস্কৃতির একটি অংশ- কোনো ভৌগোলিক সীমারেখায় তা আবদ্ধ নয়। উপজাতি একটা সামগ্রিক সংস্কৃতির প্রতিনিধি বা প্রতিবিম্ব, আর সাধারণত তা একই ভৌগোলিক পরিবেশে ব্যাপৃত। পাক-ভারতীয় সমাজব্যবস্থা গঠনকালীন আদি যুগে উপজাতীয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে কৃষিজীবীকরণের চেষ্টা থেকে সৃষ্ট হয়েছে। এর অপর এক অর্থ হলো উপজাতীয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে আধুনিকায়ন করার চেষ্টাটি জাতপ্রথার (Caste জন্মদাতা’।

উপরোক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বোঝা যায়, উপজাতীয় সম্প্রদায় আধুনিক জীবিকা অর্জনের পেশাসহ এক ধরনের নির্দিষ্ট জীবিকা অর্জনের পদ্ধতি অনুসরণ করে। তাদের নির্দিষ্ট সংস্কৃতি রয়েছে এবং তারা এমন একেকটি এলাকায় বাস করে, যা প্রায়শ নির্দিষ্ট কাঠামোতে আবর্তিত। সর্বোপরি তাদের জীবনধারা পরিচালিত হয় একইরূপ সামাজিক আচার, প্রথা, বিশ্বাস, ধর্মীয় ভাবাশ্রয়ী বিচারব্যবস্থা, অনুসরণীয় রীতিনীতি এবং প্রগাঢ় মূল্যবোধ দ্বারা। এ অবস্থায় প্রতিটি উপজাতীয় লোকজন নিজেদের মধ্যে পরস্পর এমনভাবে বিশ্বাস পোষণ করে যে, তাদের মাঝে একে অন্যের সঙ্গে সংহতিভাব গড়ে উঠে পারস্পরিক রক্ত-সম্পর্কের বিশ্বাসের ভিত্তিতে।

বাংলাদেশে আমরা যাদের উপজাতি বলে আখ্যায়িত করি, তাদের ১৯৩১ সালের পূর্ব পর্যন্ত এনিমিস্ট বলা হতো। এমনকি ওই ১৯৩১ সালের আদমশুমারির সময়কালে তাদের প্রথমবারের মতো দেখা হয় ‘আদিম উপজাতি’ হিসেবে। যেহেতু বাংলাদেশে বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন উপজাতি বাস করে, সেহেতু তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মাঝেও বহুবিধ বিপন্নতা পরিলক্ষিত হয়। সর্বোপরি এদের বিশ্বাসগত বৈচিত্র্যের মাধ্যমে চলমান রয়েছে এক নান্দনিক নিরন্তর স্বকীয় সাংস্কৃতিক জীবনধারা। এ প্রসঙ্গে হুটনের উক্তিটি তুলে ধরতে পারি যে, ‘ভারত উপমহাদেশকে একটি বিরাট জালের সঙ্গে তুলনা করা যায় এবং এতে এশিয়ার বিভিন্ন জাতি এবং জনগণ ভেসে এসে ধরা পড়েছে’। ((The Sub-continent of India has been likened to a deep net into which various races and peoples of Asia have drifted and been caught). প্রকৃতপক্ষে আমরা জানি- ভারতবর্ষে বহুজাতি, বহুধর্ম ও বহু ভাষাগত জনগণের মহামিলন হয়েছে।

সংক্ষেপে উপজাতি বলতে তাদেরই বোঝানো হয়, যারা তাদের স্বকীয় অতীত ঐতিহ্যের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ভাষা-সাহিত্য ও পোশাক-পরিচ্ছেদ ইত্যাদি ব্যবহার করার প্রসঙ্গটি কেবলই নিজেদের সমাজ অভ্যন্তরে প্রচলন রেখে তদসঙ্গে বহিরাঙ্গনে চলাফেরা করার সময় আধুনিকতার স্পর্শকাতর পোশাকাদি অবাধে ব্যবহারপূর্বক স্ব-স্ব রাষ্ট্রে প্রচলিত ভাষার মাধ্যমেও সবার মাঝে ভাবের আদান প্রদান করে চলতে সক্ষম, তারাই উপজাতি হিসেবে চিহ্নিত বা গণ্য হয়ে থাকে। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, উপজাতি শব্দের অর্থ হলো ‘ক্ষুদ্র জাতি’ আভিধানিক দৃষ্টিকোণে এ শব্দটি কোনোক্রমে অবমাননাকর বা ব্যঙ্গাত্মক হাস্যোজ্জ্বল সূচক নহে; বরং বৃহত্তর জাতির পাশাপাশি স্বাচ্ছন্দ্যে ক্ষুদ্র জাতির অবস্থানকে ইঙ্গিত করে।

অন্যদিকে আদিবাসী প্রসঙ্গে কিছুটা আলোচনায় আসা যাক। যারা নিজেদের আদিবাসী বলতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে বলব যে, ‘আদিবাসী’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো: আদিকাল থেকে বসবাসকারী ঠিক। কিন্তু সমাজবিজ্ঞান কিংবা নীতিবিজ্ঞান বা নৃ-বিজ্ঞানের শব্দগত পরিভাষিক (Terminology) দিক থেকে বিচার করলে এর অর্থ দাঁড়ায় যে, যারা আদিম সমাজব্যবস্থার চালচলন কিছুটা সংশোধিত করে আংশিকভাবে উত্তোরিত হয়ে আদিবাসীর পরিচয় বহন করে চলে তারা। অতঃপর আদিবাসিত্বের জীবনযাপনের পরবর্তীতে আরো কিছুটা উন্নতি লাভের স্তরে পৌঁছে কোনো অঞ্চলে পূর্ণজাতিতে পরিণত হওয়ার প্রাক পর্যায়ে এসে উপজাতিতে পরিণত হয়; আর উপজাতিত্ব হতে যখন শিক্ষা-দীক্ষা, কর্মপেশা ও কৃষ্টি-সংস্কৃতিতে আরো বহুগুণে উন্নতি প্রাপ্তির পর্যায়ে এসে তারা ক্রমান্বয়ে রূপ নেয় রাষ্ট্রীয় প্রধান জাতি হিসেবে।
এতদদৃষ্টিতে দেখা যায়, ক্রমোন্নতির পর্যায়ক্রমিক সম্মানের প্রশ্নে জাতির স্থান সর্বোচ্চ, তৎপরের স্থান হলো উপজাতির, আর এর নিচের স্থান দাঁড়ায় আদিবাসীর। দৃশ্যত প্রতিটি নৃ-তত্ত্ববিদ, ভাষাতত্ত্ববিদ, সমাজবিজ্ঞানী, দার্শনিক, আইনবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ‘আদিবাসী’ শব্দের ব্যবহার সম্পর্কে উক্তরূপ ব্যাখ্যা সম্পর্কে ঐকমত্য সমর্থন করে বলেছে, যারা সর্বক্ষেত্রে নিজের প্রাগৈতিহাসিক স্বকীয়তাকে বজায় রেখে চলে, অথচ আধুনিক শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিজ্ঞানসম্মত কৃষিব্যবস্থা, পেশাগত চাকরি ও পোশাকের ব্যবহারের রীতি ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যাপারে উন্নতির তেমন নামগন্ধ যাদের মধ্যে নেই, তারাই ‘‘আদিবাসী’’। ‘আদিবাসী’ শব্দটির শুধু অর্থগত দিক দ্বারা ভূমিজ সন্তান গণ্যে বাংলাদেশে অতীত থেকে বসবাসকারী হিসেবে দাবি করা যায় না এজন্য যে, ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে যেকোনো কারণেই হোক, কোথাও না কোথাও থেকে রাজনৈতিক কারণে বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের অনুসন্ধানে নেমে স্থানান্তরিত হয়ে এক পর্যায়ে এসে স্থায়ীভাবে অন্যত্র বসতি স্থাপন গড়ে তুলেছে, যার অন্য কথা প্রমাণ মিলে অসংখ্য।
(৫) ‘মানব বিজ্ঞানের বিভিন্ন গ্রন্থে Primitive- শব্দ দ্বারা যা বোঝায় বা অতীতে বোঝাত, আদিবাসী কথাটি ঠিক সেই অর্থ প্রকাশ করে না। ইংরেজি প্রিমিটিভ শব্দটি দ্বারা অনেক সময় অসভ্য বর্বর ইত্যাদি অর্থ বয়ে আনে। আদিবাসী সভ্যতার স্তর নিদর্শক নয়। এদের বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রথমেই দুই ভাগে ভাগ করে নেয়া যেতে পারে। প্রথমভাগে ধরে নেয়া যায়- প্রাচীনতম আদিবাসীদের, যাকে ইংরেজিতে বলা হয় একস্-অ্যাবোরিজিনাল (ex-Aboriginal) এবং দ্বিতীয়ভাগে থাকবে তারা, যাদের বলা হয় দূষিতকারী Polluting  বা অপবিত্র জাত (Schedule Castes)। কিন্তু মনে হয় যে, এ শেষোক্ত দলের লোকেরা সম্পূর্ণভাবে বা আংশিকভাবে বাংলাদেশের ‘আদিবাসীদের’ মধ্য থেকেই চিহ্নিত হয়েছে’। [সূত্র : এই পৃথিবীর মানুষ, এ.কে.এম আমিনুল ইসলাম]
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ‘আদিবাসী’ শব্দটি নিয়ে বাংলাদেশে নানাভাবে অনেক বিতর্কের সূত্রপাত রয়েছে। কেউ কেউ বলেছে, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পশ্চাৎপদ রহস্যে মূল নেতৃত্বদানকারী প্রধান গোষ্ঠী হলো ‘বাঙালিরা’, তাদের সঙ্গে অন্যান্য ছোট জোট জাতিগুলোর জনগণও স্বাধীনতার মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিল। এতদ আঙ্গিকে বাংলাদেশের বিগত ৪৪ বছরের ঐতিহাসিক জীবনে বাঙালিদের বাদ দিয়ে যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিগুলোকে ‘আদিবাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তাহলে প্রধান স্রোতবাহী নীতিনির্ধারক বাঙালিরা কি এ দেশের নতুনবাসী (নব্যবাসী) কিনা? প্রকৃতপক্ষে দেশ, জাতি ও স্বাধীনতার মূল উজ্জীবনকারী কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ধারক জাতির জনগণ হচ্ছে বাঙালিরা, অথচ আজ কিনা কতকাংশে ‘আদিবাসী’ হিসেবে দাবি উত্থাপনকারী কতিপয় ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাঙালিদের হেয়প্রতিপন্ন করার অর্থে নব্যবাসী (নতুনবাসী) হিসেবে আখ্যায়িত (গণ্য) করার ষড়যন্ত্র চলছে।
Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

One Reply to “ক্ষুদ্র জাতিগুলোকে যদি ‘আদিবাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়, তাহলে প্রধান স্রোতবাহী নীতিনির্ধারক বাঙালিরা কি নব্যবাসী”

  1. আমাদের দেশে আদিবাসী শব্দটি নিয়ে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। আদিবাসী মানেই এই নয় যে, যারা এদেশে আগে বা পরে এসেছে। আদিবাসী অর্থ হলো একটি স্বাধীন সার্বভৌমত্ব দেশে যে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি সত্বা গুলো রয়েছে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংষ্কৃতি কৃষ্টি কালচার সবগুলো বিদ্যমান। কিন্তু দেশের মুল নিয়ন্ত্রণকারী অর্থাৎ সরকারের নীতি নির্ধারণীতে তাদের স্থান নেই। জাতিসংঘ এদেরকে আদিবাসী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বাঙালীরা আদিবাসীও না আবার নব্যবাসীও না। এদের গর্বিত এক পরিচয় আছে সেটা হচ্ছে তারা বাঙালী।
    বাঙালীরা আদিবাসী হতে পারেন না কেন? তাঁদের বাঙালী হিসেবে নিজস্ব পরিচয় আছে এবং স্বাধীন দেশে বাঙালদের মাধ্যমে সরকার পরিচালিত হয় অর্থাৎ একটি স্বাধীন দেশেই এরাই সর্বেসর্বা।
    আর একটি কথা হচ্ছে- এদেশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্বাগুলোকে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠি, উপজাতি অথবা যে নামেই ডাকা হোকনা কেন? এদের মধ্যে আদিবাসি হিসেবে যদি বৈশিষ্ট্যগুলো থেকে থাকলে কোনভাবেই তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে মনে হয়না। সে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা বা যেই জাতিরই হোক। সামান্য উদাহরণ দিয়ে বলি, মনে করি একটা গ্লাস, সেই গ্লাসে মদ খাওয়া হয়। তাকে আমি এখন গ্লাস বলবোনা অন্য নামে ডাকবো। গ্লাসের যদি তার বৈশিষ্ট্য থেকেই থাকে গ্লাসকে কোন না কোন ভাবে আপনার স্বীকার করতে হবে। সুতরাং ক্ষুদ্র জাতিসত্ত্বাগুলোকে আপনি যে নামেই ডাকা হোক সারা বিশ্বের আদিবাসীদের সাথে বৈশিষ্ট্য এক হয় তাহলে আপনি কি করবেন। আর আদিবাসী স্বীকৃতি দিলেও যে সরকার বা বাঙালীরা বিপদে পড়বে তা ভাবা মোটেও ঠিক নয়। তাই আমি বলবো এই আদিবাসী নিয়ে বিতর্কে যাওয়া পাগলামীর সামিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন