প্রবল বর্ষণে টেকনাফ পৌরসভার ছড়ার উপর নির্মিত ক্রস বাঁধ ভেঙ্গে শতাধিক বসতবাড়ী বিধ্বস্ত

Teknaf Pic (Baad) 21-06-14(4)

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি॥

প্রবল বর্ষণে পাহাড়ী ঢলে টেকনাফ পৌরসভার পুরাতন পল্লান পাড়ায় প্রাকৃতিক পাহাড়ী ছড়ার উপর নির্মিত বাঁধটি ভেঙ্গে শতাধিক বসত বাড়ী বিধ্বস্ত হয়েছে। ৪ টি পাহাড়ের মোহনায় অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত এ বাঁধটি পানির ঢলে ভেঙ্গেছে বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত।

জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে টেকনাফ পৌর এলাকার পুরাতন পল্লান পাড়া এলাকায় পাহাড়ী ছড়ায় এ বাঁধটি নির্মাণ করা হয়। ৩ দিন থেমে থেমে প্রবল বর্ষণের ফলে ২১ জুন শনিবার সকাল ১০ টার দিকে পাহাড়ের পানির ঢলের চাপে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত বাঁধটি ভেঙ্গে শতাধিক বাড়ী-ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পানির তোড়ে নুর কবির, ইমাম হোছন, বাচা মিয়া, ছালেহ আহমদ, সোলতান আহমদ, মুন্নি আক্তার মকবুল আহমদের বাড়ীসহ শতাধিক বাড়ী বিধ্বস্ত হয়।

এদিকে টেকনাফ পৌরসভার পানির সংকট ও সমস্যা নিরসনকল্পে পাহাড়ী ছড়া এবং বৃষ্টির পানি ধরে রাখার উদ্দেশ্যে উপজেলা প্রশাসন এবং পৌরসভার যৌথ উদ্যোগে ১ নং ও ২ নং ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকায় পাহাড়ী ছড়াটির উপর বাঁধ নির্মাণের স্থান নির্বাচিত করা হয়। এর প্রেক্ষিতে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবি) এর তত্বাবধানে ২০১২-১৩ ও ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের সিডিএমসি’র অর্থায়নে এসএস ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাশন, ঢাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কণক নামক ঠিকাদার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। বাঁধটি ৪০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ মিটার উচ্চতা এবং নীচে প্রস্থ ৫০ মিটার, উপরে প্রস্থ ৩ মিটার।

অপরদিকে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আগে পরীক্ষা নিরীক্ষা ছাড়া এবং অপরিকল্পিত মনগড়া প্রাকৃতিক ছড়ার উপর পানি সংরক্ষনের নামে বাঁধটি নির্মাণ করায় প্রবল বর্ষণে পাহাড়ীর ঢলের ফলে বাঁধটি রক্ষা পায়নি। অভিজ্ঞমহলের মতে বিপুল অর্থ অপচয় ঘটে। এলাকাবাসী জানায়, কাজ চলাকালে একাধিকবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। অনিয়মের কারণে এ প্রকল্পটি নামে মাত্র কাজ দেখিয়ে বাকী টাকা আত্মসাৎ করে ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। যার জন্য টেকনাফ পৌরবাসীকে এ মাসুল দিতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাকৃতিক ছড়া দখল করে কেউ বাঁধ নির্মাণ আইনের পরিপন্থি। সচেতন মহলের মতে আগে ঠেকসই এবং আরও অর্থ বরাদ্দ দেয়ার প্রয়োজন। এ স্বল্প অর্থ দিয়ে এ বাঁধ নির্মান করা মানে একটি মরণ ফাঁদ। এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড, টেকনাফ অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী (এসও) গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২ দফায় ৪৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এ ক্রস ডেমটি সিএমসির অর্থায়নের ৫ মে কাজ শেষ হয়েছে।

টেকনাফ পৌর মেয়র হাজী মোঃ ইসলাম বলেন, বাঁধটি নির্মাণে আরও বেশী অর্থ বরাদ্দ দেয়ার দরকার ছিল। যে ডিজাইনে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে তা ঠেকসহ না হওয়ার বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে আগেই আলোচনা করা হইয়াছে।

এ প্রসংগে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের এস ও গিয়াস উদ্দিন বলেন, ডিজাইন অনুসারে ঠিকাদার কাজ সমাপ্ত করেছে। তবে তিনিও টেকসই ক্রস বাঁধ নির্মানে আরও বেশী বরাদ্দ দেয়া দরকার ছিল বলে দাবী করেন।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন