কে বসছেন চকরিয়া-পেকুয়ার সংরক্ষিত নারী আসনে

চকরিয়া (কক্সবাজার) প্রতিনিধি

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার চতুর্থ বারের মত সরকার করেছে।ইতোমধ্যে নতুন সরকার মন্ত্রী পরিষদও গঠন করেছে।

এখন নির্বাচন কমিশনে চলছে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তোড়জোড়। পাশাপাশি শুরু হয়েছে একাদশ সংসদে সংরক্ষিত নারী (মহিলা) আসনের এমপি হওয়ার লড়াই। ইতিমধ্যে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে তদবিরও শুরু করেছেন। এ ক্ষেত্রে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে এমপি হতে ইচ্ছুক মনোনয়ন প্রত্যাশী নারী নেত্রীরাও পিছিয়ে নেই।

ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনতে ইচ্ছুক প্রার্থীরা ঢাকামুখী হচ্ছেন। একাদশ জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভায় নতুন চমক দেখিয়েছেন। অনুরূপভাবে সংরক্ষিত আসনে মহিলা এমপি নির্ধারণেও চমকের আশা করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তবে আশার কথা হলো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অতীতে যারা ভালো ভুমিকা রেখেছেন, তারাই এবার মনোনয়নের ক্ষেত্রে বেশি প্রাধান্য পাবেন বলে জানা গেছে।

দশম জাতীয় সংসদে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে দায়িত্ব পালন করেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত প্রেসিডিয়াম সদস্য আতাউর রহমান খান কায়সারের মেয়ে ওয়াসিকা আয়শা খান। অবশ্য তিনি চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে কোটা অনুপাতে সংরক্ষিত আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তিনি চট্টগ্রামের পাশাপাশি চকরিয়া-পেকুয়া আসনে কাজ করেছেন। তার আগে নবম সংসদে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে সংরক্ষিত আসনে নারী সাংসদ ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আলহাজ্ব সাফিয়া খাতুন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশেষ নজরদারি থাকায় আসন বন্টন কোটায় সাফিয়া খাতুন এ আসনের সকল সরকারি কার্যক্রমে তদারকি করেছেন। নবম সংসদে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি এলাকামুখী না হওয়ায় চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার উন্নয়ন অগ্রগতি এগিয়ে নিতে দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সংরক্ষিত আসন থেকে আলহাজ্ব সাফিয়া খাতুনকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেন।

তবে এবার একাদশ জাতীয় সংসদে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে এমপি হতে বেশ  ক’জন নারী প্রার্থী তৎপরতা চালাচ্ছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের উপজেলা ও জেলা কমিটির শীর্ষ নেতাদের কাছে যেমন যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন, তেমনি দলের হাইকমান্ডে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিশ্চিত করতে অবিরাম প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন। চকরিয়া-পেকুয়ার সংরক্ষিত আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ থেকে এমপি হতে এই পর্যন্ত মনোনয়ন দৌড়ে আছেন তিনজন প্রার্থী। তাঁরা হলেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চকরিয়া পৌরসভার সাবেক প্রশাসক প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেনের সহধর্মিনী ফিরোজা আহমদ। তিনি চকরিয়া পৌরসভা মহিলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সভাপতি।

স্বামী অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেনের দেখানো পথে আওয়ামী রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে নেন ফিরোজা আমজাদ। স্বামীর অবর্তমানে তিনি দলের নেতাকর্মীদের সুঃখ দুঃখের খবরাখবর নিতেন। বলতে গেলে চকরিয়া থানার পেছনের বাসাটি একসময় আওয়ামী লীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দলের সকল ধরনের কর্মসূচি বেগবান হতো আমজাদ হোসেনের বাসা থেকে।

সেই সফলতা থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন ফিরোজ আমজাদ। তিনি বলেন, আমার স্বামী অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন সারাজীবন আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করেছেন। দলের নেতাকর্মীদের সুঃখ দুঃখের খবরাখবর নিতেন। কারাভোগও করেছেন। তিনি বলেন, স্বামীর মতো আমিও আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দলের প্রতিটি সাংগঠনিক কার্যক্রমে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছি। আশাকরি আমার পরিবারের অতীতের ত্যাগ ও মুল্যায়ন বিবেচনা করে হাইকমান্ড আমাকে দলের মনোনয়ন দেবেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী অপরজন হলেন উম্মে কুলছুম মিনু। তিনি কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির পাশাপাশি চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে কাজ করছেন। নারী উদ্যোক্তা উম্মে কুলছুম মিনু চকরিয়া উপজেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিনের সহধর্মিনী। অ্যাডভোকেট গিয়াস উদ্দিনও আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। ছিলেন বৃহত্তর চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি।

স্বামী রাজনীতিতে থাকার সুবাদে উম্মে কুলছুম মিনু নিজেও আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিজেকে জড়িয়ে নেন। কাজ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম বাড়াতে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নারীদের সম্পৃক্ত করতে।

জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য উম্মে কুলছুম মিনু বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি আওয়ামী লীগের জন্য মাঠ পর্যায়ে উপস্থিত থেকে কাজ করে যাচ্ছি। আমি আগেও কয়েকবার দলের প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম। ২০ বছরের অধিক সময় ধরে রাজনীতির মাঠে রয়েছি। নেত্রী হয়তো আবারো আমাকে মনোনীত করবেন সেই আশায় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করব।

ফিরোজ আমজাদ ও উন্মে কুলছুম মিনুর মতো একাদশ সংসদে চকরিয়া-পেকুয়া সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী হচ্ছেন জানিয়ে নিজের ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক জন্নাতুল বকেয়া রেখা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। পাশাপাশি কাজ করছেন নারী জাগরণে। সমাজে অবহেলিত নারীদের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি ইতোমধ্যে শ্রেষ্ঠ জয়িতা নির্বাচিত হয়েছেন। চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন থেকে নারী দিবসের অনুষ্ঠানে তাঁর হাতে পুরস্কারও দেয়া হয়েছে।

জন্নাতুল বকেয়া রেখা বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছি। দলের জন্য কাজ করার পাশাপাশি সমাজের অবহেলিত নারীদের কল্যাণে কাজ করছি। ইতোমধ্যে চকরিয়া উপজেলা প্রশাসন আমাকে সফলতার সেই মুল্যায়নও দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমি ১৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে দলের মনোনয়ন ফরমও সংগ্রহ করেছি। আমি আশাবাদী আওয়ামী লীগের জন্য নিবেদিত ভাবে কাজ করছি, নারীদের জন্য কাজ করছি, এসব কিছু বিবেচনা করে দলের হাইকমান্ড আমাকে আমাকে অবশ্যই মুল্যায়ন করবে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ, চকরিয়া, পেকুয়া
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন