কুতুবদিয়া সৈকতে অপরিকল্পিত বালি উত্তোলন

কুতুবদিয়া প্রতিনিধি:

কুতুবদিয়ায় সমুদ্র সৈকতের বালি উত্তোলন চলছে অপরিকল্পিত ভাবে। দ্বীপের পশ্চিম তীর ঘেঁষে প্রতিদিন অন্তত হাজার ঘন ফুট বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। যে কারণে রক্ষা করা যাচ্ছে না দ্বীপ রক্ষায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধ ও বাঁধ রক্ষায় সৃজিত বন বিভাগের ঝাউবাগান। এতে মারাত্বক হুমকির মুখে পড়তে পারে কুতুবদিয়া দ্বীপ। প্রশাসনের অগোচরে এক শ্রেণির অসাধু বালু ব্যবসায়ি প্রাকৃতিক সম্পদ (সমুদ্র সৈকতের বালি) উত্তোলন করে নিজেদের পকেট ভারী করছে।

উপকূলের পশ্চিমে সমুদ্র তীর ঘেঁষে উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের চর ধুরুং থেকে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবলের চর এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি সৈকত। এ সৈকত এলাকা জুড়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবোর) ৭১ ফোল্ডারের ৪০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে দ্বীপের পশ্চিম পাশে ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। আবার ওই ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের বাইরে বালিচরের মধ্যে কয়েক ধাপে প্রায় ৩ শত হেক্টর চর জুড়ে বন বিভাগ কর্তৃক সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় ঝাউবাগান বনায়ন করা হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে সমুদ্র উপকূলের বেড়িবাঁধ ও বন বিভাগের বনায়ন কৃত ঝাউবাগান সংলগ্ন এলাকা থেকে এক শ্রেণীর লোক অবৈধ ভাবে বালি উত্তোলন করে আসছে।

উপজেলা সদরের পশ্চিমে সমুদ্র সৈকতে গেলে সরেজমিন দেখা যায়, বড়ঘোপ মাতবর পাড়ার পশ্চিমে বন বিভাগের সৃজিত ঝাউবাগান সংলগ্ন স্থানের বালি উত্তোলন করে নিয়ে গেছে বালু ব্যবসায়িরা। কৈয়ারবিল ইউনিয়নের পরান সিকদারপাড়া সংলগ্ন সৈকতে গিয়েও একই দৃশ্য চোখে পড়ে। একইভাবে চেয়ারম্যান রোড, আইডিয়াল স্কুল রোড, আলী ফকির ডেইল, মদইন্যার পাড়া, চুল্লারপাড়া, চর ধুরুং এলাকায়ও  ট্রাক আর ট্রলি দিয়ে বেড়িবাঁধ সংলগ্ন সৈকত থেকে বালি উত্তোলন করে গর্ত আর খালে পরিণত করেছে। জোয়ারের সময় সাগরের পানি আসা যাওয়া করে অধিকাংশ সৈকতের বালি উত্তোলনকৃত এলাকায় খাল হয়ে গেছে। এ খালের কারণে বর্ষা মৌসুমে চর ধুরুং থেকে তাবলেরচর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে বেশিরভাগ বাধঁ ভেঙ্গে যায়। ফলে অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারের সময় সাগরের পানির উচ্চতা অতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলে ওইসব ভাঙ্গন বাঁধ দিয়ে লোনা পানি ঢুকে ব্যাপক এলাকা প্লাবিত হয়। এ কারণে কয়েক বছর ধরে দ্বীপের ৬ ইউনিয়নে বিশেষ করে উত্তর ধূরুং ইউনিয়নে শত শত একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না।

উপকূলীয় বন বিভাগের কুতুবদিয়া উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা অসিত কুমার রায় বলেন, বন বিভাগের অর্থায়নে ১৯৯৪ থেকে ২০১৭ সন পর্যন্ত দ্বীপের সমুদ্র উপকূলে প্রায় তিন’শ হেক্টর এলাকায় ঝাউবাগান করা হয়েছে। বর্তমানে ওই ঝাউবাগান এলাকা থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে বলে শুনেছি। বন বিভাগের কর্মকতা-কর্মচারীরা বালি উত্তোলন কারীদের বাঁধা দিলেও তা মানছে না। এ  বিষয়ে উপজেলা পরিষদসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে অবহিত করেছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের শাখা কর্মকর্তা (এসও) এলটন চাকমা বলেন, বেড়িবাঁধের পাশ থেকে বালি উত্তোলন করলে বাঁধ নরম হয়ে যায়। বালি উত্তোলনের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন থেকে কঠোর হুঁশিয়ারি থাকলেও রাতের আঁধারে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। বালি উত্তোলন অব্যাহত থাকলে বর্ষা মওসুমে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জলোচ্ছ্বাসের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। যা জনবসতির জন্য মারাত্মক হুমকি। এতে নষ্ট হবে হাজার হাজার হেক্টর আবাদি ফসলি জমি।

দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি (দুপ্রক)এর কুতুবদিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক এম.এ ছাত্তার জানান, সরকারি বে-সরকারি উদ্যোগে দ্বীপের উন্নয়ন কাজের জন্য বালির প্রয়োজন হলে সমুদ্র সৈকত থেকে নেয়া হয়। এক শ্রেণীর দুষ্কৃতিকারী সরকারি বা দ্বীপের উন্নয়ন কাজে এক ট্রাক বালি আনার কথা বলে হাজার হাজার ঘনফুট বালি উত্তোলন করে। ফলে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এ দ্বীপ। কুতুবদিয়ার অস্তিত্ব রক্ষায় সমুদ্র সৈকতের বালি উত্তোলন রোধ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চৌধুরীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, কুতুবদিয়ায় সরকারি তালিকায় কোন বালি মহাল নেই। তারপরও দ্বীপের অভ্যন্তরে সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের জন্য বালির প্রয়োজন। তবে বালি উত্তোলন করতে গিয়ে বেড়িবাঁধের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেজন্য সৈকতে নির্দিষ্ট স্থান ঠিক করে তাতে লাল পতাকা টানিয়ে দেয়া হয়েছে। বালি উত্তোলনকারীদের বেড়িবাঁধ এবং ঝাউবাগান এলাকার তিন শত গজের ভিতর থেকে বালি উত্তোলন না করার জন্য নির্দেশ দেওয়া আছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন