কুতুবদিয়া-ছনুয়া চ্যানেল ইয়াবা চালানের নতুন ট্রানজিট

পেকুয়া প্রতিনিধি:

ইয়াবা চালানের নুতুন ট্রানজিট হিসাবে বেছে নিয়েছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পাশ্ববর্তী উপজেলা বাশঁখালীর ছনুয়া ও কুতুবদিয়া।এ চ্যানেল দিয়ে দেদারছে পাচার করছে পেকুয়া উপজেলার ইয়াবা ট্রানজিট জোন হিসেবে খ্যাত রাজাখালী ইউনিয়নের বকশিয়া ঘোনা ও সুন্দরী পাড়া এলাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদারকির অভাবের সুযোগে এ ব্যবসার মাধ্যমে ওইসব এলাকার প্রায় অর্ধ ডজনাধিক ব্যক্তি রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি।

কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, এ পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবা পাচার অব্যাহত থাকলেও অদৃশ্য কারণে ব্যবস্থা নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কিছু অসাধু ট্রলার মালিক অধিক লাভের আশায় জড়িয়েছেন এ অবৈধ কাজে। অভিনব কৌশলে পাচারকারীরা ইয়াবা পাচার অব্যাহত রাখায় তা বরাবরই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের আড়ালে রয়ে গেছে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গভীর সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ট্রলারের নামে উপকূলে নিয়ে আসা হয় ইয়াবার চালান। উপকূলের ছনুয়া চ্যানেল থেকে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ঝালকাঠি সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লবণ নিয়ে যাওয়া কার্গো ট্রলারে তুলে দেয়া হয় এসব ইয়াবা চালান। যা অত্যন্ত নিরাপদভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় গন্তব্যে স্থানে।

রাজাখালী ইউনিয়নের ইয়াবা কারবারের মূল নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করেন উত্তর সুন্দরী পাড়া এলাকার আব্দুল মালেকের পুত্র আনছারুল ইসলাম টিপু। কোন জমিদার বংশের উত্তরাধিকারী না হলেও রাজার হাল তার। তার পিতা আব্দুল মালেকও একজন চোরাকারবারী ছিলেন বলে স্থানীয় প্রবীণরা জানান। পিতার আয়কৃত কালো টাকা দিয়ে অবৈধ ব্যবসা করে মালিক হয়েছেন কাড়িকাড়ি টাকা ও অঢেল সম্পদের। এ ব্যবসায় তার সহযোগীরাও হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ।

ইয়াবা সম্রাট টিপুর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত জালাল আহমদ হয়েছেন গাড়ি, বাড়ি ও বেশ কয়েকটি ট্রলারের মালিক। জালাল আহমদের পিতা মোহাম্মদ শরিফ ছিলেন এলাকার নিতান্ত গরিব শ্রেণির মানুষ। একবছর আগেও জালাল উদ্দিন অন্যের ট্রলারে মজুরি করতেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, তাদের এ ইয়াবা পাচার সিন্ডিকেটে যুক্ত আছেন সুন্দরী পাড়া এলাকার মৃত শরীফের ছেলে আফজাল কবির, তার ছেলে শামসু, জসিম, মৃত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে গিয়াস উদ্দিন খোকা, উলা মিয়ার ছেলে জামাল, বদরুল আলমের ছেলে মিজান, রাজ্জাক মাঝির ছেলে মাহাবু, মো. গোলাম শরীফের ছেলে আব্দুল মাবুদ, জালাল আহমদের ছেলে ফয়সাল, মৃত ফজল আহমদের ছেলে সাজ্জাদ, আবুল কাশেমের ছেলে শমসু, বকশিয়া ঘোনা এলাকার ছৈয়দ নূরের পুত্র মনছুর, জকরিয়া, আমিন শরিফের ছেলে আহমদ ছবি, আলী আহমদের পুত্র আক্তার কামাল ও নবী হোছেনের ছেলে এবং চিহ্নিত মানব পাচারকারী আব্দুল মজিদ। এছাড়াও ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত রয়েছে ইউনিয়নের উলাদিয়া পাড়ার মৃত আমির হামজার ছেলে জামাল, চড়ি পাড়ার আছদ আলী মাঝির ছেলে জাফর মাঝি, বামলা পাড়া এলাকার মৃত গোলাম নবীর ছেলে বদি আলম, শাহ আলমের ছেলে মো. আলম ও সিকদার পাড়া এলাকার আমির হামজার ছেলে জামাল।

স্থানীয়রা আরো জানান, মো. জাকারিয়ার মালিকানাধীন এফবি রাবেয়া ও এমবি তামিম, আব্দুল মালেকের মালিকানাধীন এফবি নজরুল ও এমবি খোকা-২, রুহুল আমিনের মালিকানাধীন এফবি আকিব, গিয়াস উদ্দীন খোকা মালিকানাধীন এফবি জারিত এবং আনছারুল ইসলাম টিপুর মালিকানাধীন এমবি খোকা-১ ইয়াবা পাচার কাজে জড়িত রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ইয়াবা ব্যবসায় জড়িতদের ব্যাপারে যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হোক।

এ ব্যাপারে আনছারুল ইসলাম টিপুর সাথে যোগাযোগ করার জন্য ওনার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

পেকুয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মনজুর কাদের মজুমদার বলেন, পেকুয়া থানা পুলিশ ইতিমধ্যে ইয়াবার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছে। রাজাখালীতে ইয়াবা পাচারের বিষয়ে আমাদের জানা ছিল না। ছনুয়া চ্যানেল এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে। ইয়াবা ব্যবসায় যে বা যারা জড়িত থাকুক। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন