কুতুপালংয়ে হিন্দু শরণার্থীদের অবস্থা দেখে গেলেন এড. রানা দাশ গুপ্ত

ঘুমধুম প্রতিনিধি:

 মিয়ানমারে সহিংসতায় অতি সাম্প্রতিককালে নির্যাতন এবং গণহত্যার শিকার হয়ে কয়েক লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ইতিপূর্বেও বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকার যে ভুমিকা পালন করছে তাও আমরা গণমাধ্যমে জেনেছি। কথাগুলো বলেছেন এড.রানা দাশ গুপ্ত। এ সময় তিনি হিন্দু শরণার্থী নিরঞ্জন শীল ও রত্না শীল সহ অনেকের সাথে কথা বলেন এবং নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাশ গুপ্ত রোববার দুপুরে কুতুপালংয়ে আশ্রিত ১৬০ পরিবারের ৪৯৭জন হিন্দু শরণার্থীদের পরিদর্শন শেষে তিনি কথাগুলো বলেন।

এ সময় তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের সাথে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনা চলছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিকভাবেও বিষয়টি উত্থাপনের চেষ্টা চলছে।

তিনি বলেন ২৭ আগষ্ট পরবর্তী বার্মা সীমান্ত অতিক্রম করে সাড়ে ৫শ জনের মতো নিগৃহীত হিন্দু শরণার্থী কুতুপালং এসে আশ্রয় নিয়েছে। তৎমধ্যে ১০০জনের মতো আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

হিন্দু শরণার্থীদের উক্তি মতে তিনি আরো বলেন, কালো মুখোশধারীরাই হিন্দুদের হামলা করে। হামলাকারীরা বাংলায় এবং বার্মিজ ভাষায় কথা বলে। মুখোশধারীদের হাতে বন্দুক, বোমা, ছোরা, দা-খুন্তিও ছিলো বলে তিনি জানান। চিকনছড়ি গ্রামের ৭০ পরিবারের ৪৮৯ জন হিন্দুদের মধ্যে ৮৬জন হিন্দুকে কেটে ফেলা হয়েছে। যাদের খোঁজ এখনো পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

ফকিরা বাজারের ঘটনাও একই ধরণের। পানিরছড়া গ্রামে একটু ব্যতিক্রম দেখা গেছে হিন্দু পল্লীর পার্শ্ববর্তী মগদের একটি কেয়াং ও পাড়ায় বোমা মেরে আগুন ধরিয়ে দেয়। হিন্দুদের বাড়ীঘর অক্ষত রেখে হিন্দুদের উদ্ধার করে বাংলাদেশে ঢুকতে সহায়তা করেছে কিছু মুসলিম ছেলে।

কালো পোশাকধারীদের সম্পর্কে কিছু বলতে পারেনি কেউ। হিন্দু পল্লী গুলোর আয়তন ভেদে ২০০/৩০০ কালো মুখোশধারীরা হামলা চালায় নির্যাতিতরা জানিয়েছে। তাদের চিহ্নিত করতে বিষয়টি আন্তর্জাতিকভাবে তদন্ত করা জরুরী বলে এড. রানা দাশ গুপ্ত মনে করেন। গণহত্যা, নির্যাতন, নিপীড়নের ভয়ে হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলিম সম্প্রদায়ের যে সকল মিয়ানমার নাগরিকরা স্বদেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছে। তাদেরকে স্বদেশে ফিরিয়ে নেওয়ার উপযুক্ত পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে হবে মিয়ানমার সরকারকে।

গণহত্যার মতো মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল করে আইনের কাঠগড়ায় আনার দায়িত্ব জাতিসংঘকে নিতে হবে। মিয়ামারে গণহত্যার বিরুদ্ধে তিনি জাতি, ধর্ম, বর্ণ সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সোচ্চার হয়ে মানবতাবাদী ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহবান জানান। সরকারের পক্ষ থেকে নির্যাতিত শরণার্থীদের এখনো পর্যন্ত কোন ধরণের ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়নি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

এ সময় নির্যাতিত হিন্দু শরণার্থীদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। সাথে ছিলেন, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাষ্টি অধ্যাপক প্রিয়তোষ শর্মা চন্দন, হিন্দু-বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহা নগরীর সভাপতি পরিমল কান্তি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তাপস হোড়, জেলা হিন্দু ধর্মীয় নেতা অধ্যাপক অজিত কুমার দাশ, কক্সবাজার জেলা পুজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি এড. রনজিত দাশ, সম্পাদক দীপক শর্মা দীপু, উখিয়া উপজেলা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি স্বপন শর্মা রনি প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন