কি বলতে হবে তা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে শরণার্থীদের : মিয়ানমারের সেনাপ্রধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করেই বলেন, কি বলতে হবে তা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে শরণার্থীদের। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

শুক্রবার সেনাপ্রধান হ্লাইংয়ের একটি সাক্ষাতকার প্রকাশ করে জাপানের দৈনিক পত্রিকা আশাহি শিমবুন।

আবারও রোহিঙ্গাদের ওপর পর্যায়ক্রমিক নৃশংসতার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করলেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধান জেনারেল মিন অং হ্লাইং।

রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য এই সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে বিচারের জোরালো দাবি উঠেছে। কিন্তু তিনি আগের মতোই সুর উল্টো করে কথা বলছেন।

তিনি বলেছেন, তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ হলো মিয়ানমারের সম্মানের প্রতি অবমাননা। পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা, যা জাতিসংঘ বলছে কমপক্ষে ৭ লাখ ৩০ হাজার, তা নিয়েও তিনি সংশয় প্রকাশ করেন।

এতে জেনারেল মিন অং হ্লাইং বলেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া এমন সমালোচনা তার দেশের মর্যাদায় আঘাত করছে।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নৃশংস অভিযান শুরু করে। এ সময় অসংখ্য নারী, যুবতীকে গণধর্ষণ করা হয়। জ্বালিয়ে দেয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম। নিকটজনদের সামনে পাখির মতো গুলি করে হত্যা করা হয় মানুষ। এমন নৃশংসতা থেকে জীবন বাঁচাতে সেই থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছেন রোহিঙ্গারা।

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন গত বছর সেনাবাহিনীর ওই নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তাদের রিপোর্টে এ নৃশংসতার জন্য মিন অং হ্লাইয় সহ আরও ৫ জন জেনারেলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইনে ভয়াবহ অপরাধের জন্য বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে।

সেনাপ্রধানের ওই সাক্ষাতকার  নিয়ে জেনেভাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি।

তিনি বলেছেন, মিন অং হ্লাইংয়ের ওই সাক্ষাতকার তিনি দেখেন নি। তবে গত বছর জাতিসংঘের সঙ্গে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মিয়ানমার সরকার। তাতে মেনে নেয়া হয়েছে যে, সহিংসতা হয়েছে। মানুষ পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করেছে। সেই সব মানুষের দেশে ফিরে যাওয়ার অধিকার রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যদি আমাদের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারীদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থাকেও তাহলে আমরা স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্বারকের দিকেই দৃষ্টি দেবো, যাতে এসব সমস্যাকে মেনে নেয়া হয়েছে। সমাধান করার কথা বলা হয়েছে।

গত মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক একজন তদন্তকারী বলেছেন, জেনারেল মিন অং হ্লাইং ও অন্যদের রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে বিচার হওয়া উচিত। রোহিঙ্গারা দেশে ফিরে যাওয়ার আগেই তা হওয়া আবশ্যক।

ওদিকে অব্যাহতভাবে হত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। এর প্রেক্ষিতে মিন অং হ্লাইংয়ের ওই সাক্ষাতকারটি নেয়া হয় মিয়ানমারের রাজধানী ন্যাপিডতে। এতে তিনি পালিয়ে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নিয়েই শুধু প্রশ্ন তোলেন নি। একই সঙ্গে তিনি তাদের উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি বলেন, তারা (রোহিঙ্গারা) বাংলাদেশে গেছে সম্ভত কিছু কারণে। তার মধ্যে রয়েছে, তারা হয়তো আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে বসবাস করতে চায় অথবা তৃতীয় কোনো দেশে যেতে চায় পালিয়ে। এখানে উল্লেখ্য, তারা হয়তো আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে বসবাস করতে চায় বলতে তিনি বাংলাদেশকে বুঝিয়ে থাকতে পারেন। কারণ, মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর দাবি, রোহিঙ্গারা বাঙালি। তারা বাংলাদেশ থেকে গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছেন মিয়ানমারে।

মিন অং হ্লাইং বলেন, তারা (রোহিঙ্গা) সবাই একই কথা বলছেন। আমার তো মনে হয় তাদেরকে এসব কথা কেউ শিখিয়ে দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: কি বলতে হবে তা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে শরণার্থীদের : মিয়ানমারের সেনাপ্রধান
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন