কাপ্তাই রাইখালী রিফিউজি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট চরমে
কবির হোসেন, কাপ্তাইঃ
কাপ্তাই উপজেলার রাইখালী রিফিউজি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একটি মনরোম পরিবেশে ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এলাকার সকলের নিকট শিক্ষা- দীক্ষা ও আদব কায়দার দিক দিয়ে ওই বিদ্যালয়টির ব্যাপক সুনাম রয়েছে বলেও এলাকার সচেতন লোকজন মন্তব্য করেন।
বিদ্যালয়টি প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু রয়েছে। এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা রয়েছে প্রায় সাতশত জন। আর এ ৭’শ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছে মাত্র তিন জন। শিক্ষক, ক্লাস, বিভিন্ন টুল-বেঞ্চ সংকটের ফলে একই শ্রেণীতে ঠেসা-ঠেশি করে ১৫০জন শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠদান করছে। টুল-বেঞ্চ এবং শ্রেণী কক্ষের সংকটের ফলে প্রতিটি বেঞ্চে ৮/১০জন শিক্ষার্থীরা বসে পাঠদান করতে দারুন কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।
লেখা পড়া করার জন্য সুন্দর পরিবেশ থাকার কথা থাকলেও খাতা কলমে আছে বাস্থবে নেই তা এ স্কুলে এসে সরজমিনে না দেখলে বুঝা যাবেনা। বিদ্যালয়টিতে সরজমিনে গিয়ে এবং প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, অভিভাবক প্রতিনিধি এবং শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে শিক্ষক সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যাজনিত তথ্য পাওয়া যায়। প্রধান শিক্ষক তপন কান্তি দে বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে আট জন শিক্ষকের পদ রয়েছে।
কিন্ত রয়েছে চার জন শিক্ষকের মধ্যে একজন পিআরএল, একজন বদলী, একজন সিইনএস এবং একজন ডেপুটেশনে রাঙ্গামাটি। এছাড়া অন্য একজন শিক্ষক মার্চ মাসে মাতৃত্বকালিন ছুটিতে যাবে। অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত নিম্নে ১৫শিক্ষক প্রয়োজন। আছে মাত্র তিন জন।
এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকের জন্য নেই কোন আলাদা ট্রেনিং বা সুযোগ সুবিধা। শিক্ষকরা এতগুলো ক্লাস নিতে হিমশিম পোহাতে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০০৯ সাল থেকে অদ্যবধি পিএসসি পরীক্ষায় শতভাগ পাশসহ ৩/৪জন বৃত্তি রয়েছে। এবং ২০১৬ সালে পিএসসিতে ১৪জন জিপিএ-৫সহ শতভাগ পাশ অর্জন করেছে। জেএসসিতে একজন এপ্লাসসহ ৭২জন পাশ করেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। শিক্ষক সংকটের ফলে সঠিকভাবে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া যাচ্ছেনা। শ্রেণী সংকটের ফলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ১৫০জন শিক্ষার্থী গাদা-গাদি করে ভিষন কষ্ট করে ক্লাসে বসে ক্লাস করছে। ভাল-ভাবে কোন কিছু লেখতে পাড়ছেনা।
শিক্ষক সংকটের ফলে অনেক ক্লাস নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। জেলা পরিষদ, শিক্ষা অফিসসহ কয়েক বার জানানো হলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ৮ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফরহাদ, আছমা বেগম তারা জানান শিক্ষক সংকটের ফলে আমাদের ক্লাস নিয়মিত নেওয়া হয়না। কারণ একজন শিক্ষকের পক্ষে এতগুলো পাঠদান দেওয়া সম্ভব হয়না। আমাদের যদি নতুনভাবে শিক্ষক বৃদ্ধি করে দেয়া হয় তাহলে আমরা ভাল ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হব বলেও তারা জানায়। এবং বেঞ্চগুলো খুব ছোট লিখতে এবং পড়তে খুবই কষ্ট হচ্ছে।
শ্রেণী শিক্ষক লিপী রানী মারমা বলেন, শিক্ষক সংকটের ফলে পাঠদান যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করতে পারিনা।প্রাক-প্রাথমিক হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ক্লাস নিতে একেবারে এনার্জি থাকেনা। দুর্বল হয়ে পড়ি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অজয় কুমার সেন এবং অভিভাবক কমিটির সদস্য ও ইউপি সদস্য শেখ নাছির উদ্দিন, রুবি আক্তার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি ইউপিতে প্রাক-প্রাথমিক হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করার ঘোষণা দিলেও পযাপ্ত পরিমানে শিক্ষক না দেওয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা সঠিক পাঠদান হতে বঞ্চিত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে ফলাফল ভাল অর্জন করা হলেও সাতশত শিক্ষার্থীকে মাত্র তিনজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা কোন মতেই সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন।
ইউপি সদস্য শেখ নাছির উদ্দিন বলেন, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক সংকটের ফলে অত্র প্রতিষ্ঠানের পাশ করে যাওয়া কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের দিয়ে কোন মতে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। তারা বলেন, আমরা শিক্ষক সংকটের ব্যাপারে একাধীকবার জেলা পরিষদ, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন মহলকে জানিয়েও কোন ফল পায়নি। বর্তমানে শিক্ষক সংকটের ফলে শিক্ষাথীরা নিজ অধিকার ও ভাল ফলাফল হতে বঞ্চিত হয়ে পড়েছে। অতিদ্রুত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
এদিকে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলমের নিকট জানতে চাইলে তিনি শিক্ষক সংকট দেখে দুঃখ প্রকাশ করেন। প্রাক-প্রাথমিক হতে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত প্রায় ৭শত’শিক্ষার্থীর জন্য তিনজন শিক্ষক পাঠদান করছে। অতিশয় ওই বিদ্যালয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষক দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষের নিকট আবেদন জানান। না হয় শিক্ষাথীরা নিজ অধিকার এবং সঠিক শিক্ষা হতে বঞ্চিত হয়ে পড়বে বলেও মনে করেন।