কাউখালীর বাউকুল ছড়িয়েছে সবকূল: স্বাবলম্বী কৃষক ইউছুফের স্বপ্ন পূরণ

10956138_818053548265164_1991080826_n

আরিফুল হক মাহবুব, কাউখালী :

রাঙামাটির কাউখালীর কাশখালী গ্রামের কৃষক মোঃ ইউছুফ (৫২)। শিক্ষাগত যোগ্যতা বলতে ৮ম শ্রেণি পাস। কাউখালীর অন্যতম একজন খামারী। প্রথম শ্রেণির সমবায়ী হিসেবেও সুনাম রয়েছে উপজেলা সমবায় অফিসে। গত দু’বছর ধরে তিনি ঘরের পার্শ্বে দেড় একর পাহাড়ের মধ্যে ৭০টি বাউকুল গাছ লাগিয়েছেন। এ পর্যন্ত দেড় লাখ টাকা খরচ করেছেন বাগানের পেছনে।

গত বছর এ বাগান থেকে ১২০ মণ বাউকুল বিক্রি করে তার আয় হয়েছে তিন লাখ ছত্রিশ হাজার টাকা। এ বছর আশাতীত ফলন হওয়ায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার। ৭০টি গাছ থেকে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করেছেন আড়াই’শ মণ বাউকুল। বর্তমান বাজার অনুযায়ী যার মূল্য দাড়াই ছয় লাখ টাকা।

কৃষক ইউছুফের পরিবারের সদস্য সাত জন। বছর জুড়ে তার পরিবারের আয়ের প্রধান উৎসই হচ্ছে কৃষি কাজ। বছরে দু’লক্ষাধিক টাকা পরিবারের খরচের বাজেট নির্ধারণ করেন আত্মপ্রত্যয়ী এই কৃষক। অন্য আট দশজন কৃষকের মতো ঢালাও কৃষি কাজ করলেও তার দৃষ্টি মূলত ফলদ ও বনজ বাগানের দিকে। শতভাগ সফলও হয়েছেন তিনি। এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি বাউকুল ঘরে তুলতে পারায় আনন্দিত ইউছুফ। যে কেউ তার বাউকুল বাগানে প্রবেশ করলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে কোন সন্দেহ নেই। যেদিকে চোখ যায় ফল আর ফল। বাউকুলের ভার সইতে না পেরে অনেক গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে মাটিতে। কোন কোন গাছের বাউকুলের ওজন দেড় থেকে দুই’শ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে।

প্রতিদিন দু’জন শ্রমিক গড়ে দুই থেকে তিন মণ বাউকুল তার বাগান থেকে ছিড়ে বাজারজাত করছেন। স্থানীয় চাহিদা মেটানো ছাড়াও দুই থেকে আড়াই মণ বাউকুল চলে যাচ্ছে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে। প্রতিদিনই নতুন নতুন ক্রেতা আসছে তার কাছে। বিক্রয় ভাল হলেও আবহাওয়া ভাল না বলে জানালেন কৃষক ইউছুফ। কারণ এসব বাগান করতে গেলে পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা থাকতে হয়। এখন প্রচণ্ড শীত পড়লেও বাতাসে আদ্রতা কম থাকায় ফলের জন্য কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। ফলে গাছ ও ফলে বিভিন্ন রোগ ব্যাধী দেখা দিতে পারে।

বাউকুল বাগান সৃজনে নিজের এমন সফলতার কথা বলতে গিয়ে জানান, সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সফল হয়েছে তিনি। স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে কি ধরণের সহযোগিতা পেয়ে থাকেন তার উত্তরে জানান, উপজেলা কৃষি অফিসে গিয়ে আমার বাগানে উৎপাদিত বাউকুল খাইয়েছি অফিসারদের। আমি তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা চায়নি। তারপরও গত দু’বছরে তারা কখনো একটি বারের জন্য আমার বাগান দেখতে আসেননি।

তিনি জানান, আমার বাউকুল বাগান পরিচালিত হয় মূলত বাউকুলের উদ্ধাভাবক কৃষি বিজ্ঞানী আব্দুর রহীমের তত্ত্বাবধানে। তিনি সব সময় আমার খোঁজ খবর নেন এবং বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তার এ বাগানের চারাগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে ময়মনসিং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বাগানে কোন সমস্যা দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মরণাপন্ন হতে হয়।

কৃষক ইউছুফের অভিযোগ, উপজেলা কৃষি অফিস পরিদর্শন যোগ্য না এমন দুর্গম অঞ্চলে নামে বেনামে প্রকল্প দিয়ে যাচ্ছে। অথচ উপজেলার এক দুই কিলোমিটারের ভেতরে আমার মতো আরো অনেক কৃষক রয়েছেন যারা কৃষি অফিস কি জানে না।

এমন অভিযোগ অবশ্য অস্বীকার করলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার দাশ। তিনি জানান, আমরা কৃষকদের সার, কীটনাশক বা চাহিদা মাফিক কিছু দিতে না পারলেও সবসময় তাদের খোঁজ খবর নিচ্ছি। রোগ বালাই প্রতিরোধে বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। এজন্য চারটি ইউনিয়নের পনেরটি ব্লকে সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর চার ইউনিয়নের পাঁচ হেক্টর জমিতে এবার বাউকুল চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ অঞ্চলে বাউকুলে বাম্পার ফলন হবে। সবুজে সবুজে সমৃদ্ধ  হোক কৃষকের স্বপ্ন এ প্রত্যাশা সকলের।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন