কাউখালীতে গৃহকর্তার ছেলে কর্তৃক ধর্ষণের শিকার কাজের মেয়ে: অবৈধ গর্ভপাতে মৃত শিশুর জন্ম

কাউখালী প্রতিনিধি:

রাঙামাটির কাউখালীতে গৃহকর্তা কর্তৃক কাজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষণের শিকার ওই কিশোরী ২৫ অক্টোবর দুপুরে গৃহকর্তার বাড়িতেই সাত মাস বয়সী মৃত শিশুর জন্ম দেয়।

বুধবার বিকেলে উপজেলার নাইল্যাছড়ির মাঝের পাড়ায় এঘটনা ঘটে। ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছে অভিযুক্ত গৃহকর্তা।

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মো. কবির হোসাইন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্রেহাষীশ দাশ জানিয়েছেন ঘটনা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কাউখালী থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, উপজেলার নাইল্যছাড়ির মাঝেপাড়া গ্রামের মোস্তফা তালুকদারের বাড়িতে গত চার বছর যাবত কাজের মেয়ে হিসেবে কাজ করে আসছিল নোয়াখালীর চরাঞ্চলের মৃত ফয়েজ আহম্মদের মেয়ে আনোয়ারা বেগম (১৮)। মা বাবা হারিয়ে এ কিশোরী বাঁচার তাগিদে খুব অল্প বেতনে দীর্ঘ সময় ধরে ওই বাড়িতে কাজ করতো বলে জানায় সে।

গত কয় বছর যাবৎ এ কিশোরী ওই বাড়িতে একাধিকবার ধর্ষণের শিকার হলেও প্রাণ ভয়ে কাউকে বলতে পারেনি। উপর্যপুরী নির্যাতনের শিকার হয়ে এক পর্যায়ে সে সাত মাসের অন্তসত্তা হয়ে পড়ে। গর্ভবতী হওয়া ও তার অস্বাভাবিকতা দেখে গৃহকর্তা মোস্তফার ছেলে চট্টগ্রাম পলেটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ফয়সাল বিভিন্ন স্থান থেকে ঔষধ খাইয়ে বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। অতিরিক্ত ঔষধ প্রয়োগের ফলে মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে আনোয়ারা। তার চিৎকার আশপাশের লোকজন ছুটে আসলেও প্রবাবশালী ওই ব্যক্তির বাড়িতে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার ছিল সীমিত। ফলে কেউ বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনি।

অবস্থা বেগতিক দেখে গৃহকর্তা মোস্তফা তালুকাদার তার স্ত্রীসহ গোপনে উপজেলার বিভিন্ন ফার্মেসীতে গিয়ে ডাক্তার দ্বারা বাচ্চা নষ্ট করার চেষ্টা চালায়। কিন্তু ফার্মেসীর ডাক্তারা রাজী না হওয়ায় ব্যর্থ হয়ে বাড়িতে চলে যায় তারা। বিকেল ৫টায় গৃহকর্তা মোস্তফার বাড়িতেই সাত মাসের মৃত সন্তানের জন্ম দেয় আনোয়ারা। অস্বাভাবিক সন্তান প্রসব পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়ে ওই কিশোরী। পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার দেলোয়ার হোসেনসহ এলাকার লোকজন আনোয়ারাকে কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। রাত ১২টায় অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করেন কর্তব্যরত ডাক্তার সাজ্জাদ হোসেন।

এ ঘটনার পর প্রভাবশালী মোস্তফা তালুকদার অসহায় আনোয়ারাকে মারাত্মক ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা পয়সার বিনিময়ে ঘটনাকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালায়। অতিরিক্ত ভয়ভীতি দেখানোর কারণে আনোয়ারা কারো নাম বলতে সাহস না পেলেও গৃহকর্তার ছেলে ফয়সাল দীর্ঘদিন যাবৎ ঔষধ খাইয়েছে বলে স্বীকার করে। সবশেষ ২২ অক্টোবর ফয়সাল তাকে ঔষধ খাওয়ানোর পর পেটে ব্যাথা ও রক্তক্ষরণ ও অসুস্থ্য হওয়ার কথা জানায় সে।

গৃহকর্তা মোস্তফা তালুকদার জানান, মেয়েটি ৪ বছর আমার বাড়িতে কাজ করে। তবে আমার বাড়িতে এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটেনি। কিছু হয়ে থাকলে তা বাড়ির বাইরে হয়েছে। তবে তার ছেলে কেন ঔষধ খাওয়ালো এমন প্রশ্ন করতে তিনি উত্তেজিত হযে পড়েন।

কলমপতি ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার দেলোয়ার হোসেন জানান, গ্রামে এ বাড়িটি ও মানুষগুলো একটু ভিন্ন প্রকৃতির। এদের সাথে সমাজের কারো তেমন একটা সম্পর্ক নেই। তাছাড়া এ বাড়িতে সবাই প্রবেশও করতে পারেনা। সুতরাং বাইরের কারো দ্বারা এমন ঘটনা ঘটানো অসম্ভব। তিনি জানান, যা হয়েছে তার বাড়িতেই হয়েছে এটা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি।

কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্নেহাশীষ দাশ জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য থানাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ওসি কবির হোসাইন জানানিয়েছেন, মেয়েটির পক্ষ থেকে এখনো কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। তাছাড়া মেয়েটি মারাত্মক অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। আগে তার চিকিৎসা দরকার। সুস্থ্য হলে অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কাউখালীতে মেয়েটির কোন অভিভাবক না থাকায় এবং তাকে অব্যাহত ভয়ভীতির কারণে অপরাধীরা যাতে পার পেয়ে না যায় তার জন্য প্রশাসনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন