বিচ্ছেদে ক্ষুদ্ধ হয়ে কলেজ ছাত্রী ইতি চাকমাকে প্রেমিক রণি চাকমা খুন করে: আদালতে স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খাগড়াছড়ি::

প্রেমে বিচ্ছেদ হওয়ায় সাবেক ক্ষুব্ধ প্রেমিক রণি চাকমার হাতে খুন হয় খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমা।

 

সোমবার বিকেল ৪টায় ডিবি পুলিশের হাতে আটক তুষার চাকমা(১৮) নামের এক খুনি খাগড়াছড়ির জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবু সুফিয়ান মো. নোমানের আদালতে ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন।

হত্যাকাণ্ডে তুষার চাকমাসহ ৫ জন অংশ নিয়েছিল এবং ইতি চাকমার প্রেমিক রনি চাকমা তাকে হত্যা করে। ইতি চাকমাকে প্রথমে শ্বাসরোধ ও পরে জবাই করে হত্যা করা হয়।

তুষার চাকমা রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার বালুঘাট এলাকার সুনীল চাকমার ছেলে। তুষারের মা নিরূপা চাকমা ইউপিডিএফ সমর্থিত সাজেক নারী সমাজ সংগঠনের নেত্রী।


এ সংক্রান্ত আরো খবর পড়ুন:

  1. ইতি চাকমা খুনের তদন্তে পুলিশ : আলোচনায় প্রেম পরকীয়া : আটক ১ : ফেসবুকে অপপ্রচার
  2. উপজাতীরাই ইতি চাকমাকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করেছে
  3. ইতি চাকমা’র খুনীদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ক্লাস বর্জন
  4. ইতি চাকমার হত্যার প্রতিবাদে রাঙামাটিতে মানববন্ধন
  5. ইতি চাকমার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে বাঙালী ছাত্র পরিষদের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ 

তুষার চাকমা জানান, খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ইতি চাকমার সাথে সহপাঠী রনি চাকমার প্রেমের সর্ম্পক ছিল। রনি চাকমা নিয়মিত ইতি চাকমার কাছ থেকে টাকা নিত। কিন্তু রনির অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে এই সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে ইতি চাকমা।

এতে রনি চাকমা প্রতিশোধ নিতে তুষার চাকমাসহ ৫ জনকে সাথে নিয়ে ইতি চাকমার ভগ্নিপতির বাড়িতে তাকে গলা কেটে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে রনি চাকমাসহ ৩ জন সরাসরি অংশ নেয়। অপর দু’জন বাসার বাইরে পাহারায় ছিল।

এদিকে হত্যার পর ইতি চাকমার হত্যাকাণ্ড পাহাড়ী-বাঙালী দ্বন্দ্বের সাম্প্রদায়িক খাতে প্রবাহিত করার জন্য ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে। এ সব কর্মসূচীতে হত্যাকারীরা বক্তব্য দেন বলে জানান, আটক তুষার চাকমা।

হত্যাকারীরা ইতি চাকমা হত্যার জন্য বাঙালীদের দায়ী করেন। ইউপিডিএফ সমর্থিত পাহাড়ী বিভিন্ন অংশ সংগঠন এ হত্যাকাণ্ডে ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করে। যদিও বাঙালীরা এই অভিযোগ অস্বীকার করে পাহাড়ীদের দায়ী করে পাল্টা কর্মসূচী পালন করে।

প্রসঙ্গত, গত ২৭ ফেব্রুয়ারী রাতে জেলা সদরের আরামবাগ এলাকায় ভগ্নিপতির ভাড়া বাসায় বোন ও ভগ্নিপতির অনুপস্থিতিতে গলা কেটে হত্যা করা হয় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমাকে।

হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে চট্টগ্রাম বিভাগের সিআইডি’র সহযোগিতা নেয় খাগড়াছড়ি জেলা পুলিশ। অবশেষে রবিবার(১০ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টায় খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কোয়ার এলাকা থেকে তুষার চাকমাকে আটক করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে এ অভিযানে অংশ নেন. খাগড়াছড়ি ডিবি পুলিশের পরিদর্শক(ওসি) আব্দুর রকিব। খাগড়াছড়ি সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তারেক মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান ও উপপরিদর্শক(এসআই) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।

খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান জানান, দীর্ঘ সাড়ে ৬ মাস পর এক খুনিকে আটকের মধ্য দিয়ে চাঞ্চল্যকার খাগড়াছড়ি সরকারী কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ইতি চাকমার হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হয়েছে। অন্য আসামীদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শীঘ্রই বাকী আসামীদেরও গ্রেফতার করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন