কর্মদিবসে লক্ষ্মীছড়ি শিক্ষা অফিসে তালা

Laxmichhari education picture 16-01-2017

মো. শাহ্জাহান, লক্ষ্মীছড়ি থেকে ফিরে॥
খাগড়াছড়ি জেলার সবচে দুর্গম ও পশ্চাৎপদ উপজেলা লক্ষ্মীছড়ি। এই উপজেলার সরকারি সবক’টি অফিসের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের অভিযোগের অন্ত নেই। সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়মিত অফিস ফাঁকিসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির খবর পাড়ার চায়ের দোকান থেকে শুরু করে সর্বত্রই।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়েই চলছে উপজেলা পরিষদের কার্যক্রম। পার্শ্ববর্তী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাই অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। কর্তা ছাড়া ঘরের দশা যেমন, ঠিক তেমনই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন উপজেলা পরিষদের আওতাধীন অন্যান্য দপ্তরের কর্তকর্তারা। নিয়মিত ফাঁকি দিচ্ছেন অফিস।

শিক্ষাক্ষেত্রে জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে বেশ পিছিয়ে তিনটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত প্রায় লক্ষাধিক জনসংখ্যার লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা। আর এর কারণ হিসেবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের উদাসীনতা আর দায়িত্বের প্রতি অবহেলাকেই দুষছেন স্থানীয়রা।

অভিযোগ রয়েছে, কর্মকর্তারা নিয়মিত অফিসে আসেন না, বছরের বেশীরভাগ সময় থাকেন ছুটিতে। তবে এ ছুটি কাগজে-কলমে নয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে দাপ্তরিক ছুটি ছাড়াই বছরের বেশীরভাগ সময় বাড়িতেই অবকাশ যাপন করেন তাঁরা। এছাড়া সপ্তাহে কেবল দু’এক দিন চলে উপজেলা শিক্ষা অফিসের কার্যক্রম। আর বাকী দিনগুলোতে অফিস থাকে তালাবদ্ধ।

উপজেলার শিক্ষা বিষয়ক নানা দিক দেখভালের দায়িত্ব যাদের হাতে, যারা কিনা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়ম-অনিয়ম তদারকি করবার কথা তাদেরই এমন গাফেলতি! আর এই সুযোগ হাতছাড়া করবার মতো বোকা নন উপজেলার কতিপয় শিক্ষকরাও। কর্মস্থলে শিক্ষা কর্মকর্তা অনুপস্থিত, এই মোক্ষম সুযোগে নানা অজুহাতে উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর সুবিধাবাদী শিক্ষকরাও প্রায়শই কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। আর সব মিলিয়ে দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে উপজেলার শিক্ষা কার্যক্রম। ক্রমাগতভাবে আরও পিছিয়ে পড়ছে পশ্চাৎপদ উপজেলাটি।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে গেল রবিবার সরেজমিন পরিদর্শনে লক্ষ্মীছড়িতে। ঘড়ির কাঁটায় বেলা তখন ১১টা। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস, অথচ উপজেলা শিক্ষা অফিসের প্রধান ফটকে তখন তালা ঝুলছে। খানিকবাদে এস.কে মল্লিক নামে একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শিক্ষা অফিসে এসেছেন চাকুরি থেকে অবসর নেয়া শিক্ষকদের নিয়োগের (খন্ডকালীন) তথ্য নিতে। কিন্তু শিক্ষা অফিসে এসে কারও দেখা পেলেন না তিনি।

নিরুপায় হয়ে বয়োবৃদ্ধ এই প্রাক্তণ শিক্ষক অপেক্ষা করতে লাগলেন খররোদ্দুরে। এদিকে এক ঘন্টার অপেক্ষা শেষে ফিরে আসার পথে উপজেলা শিক্ষা অফিসের অফিস সহকারী দিলিপ কুমার দে’র সাথে দেখা হয় এই প্রতিবেদকের।

অফিস বন্ধের কারণ জানতে চাইলে বিনীত হয়ে ভদ্রলোক জানালেন, সাপ্তাহিক ছুটিতে বৃহস্পতিবার নিজ বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায় যান তিনি। আজই ফিরেছেন। তবে যানবাহনের যান্ত্রিক ক্রটির কারণে কর্মস্থলে পৌঁছাতে বিলম্ব হয়ে গেছে তাঁর। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘টিও স্যার বাড়িতে (ঢাকায়) গেছেন আর এটিও (সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা) স্যার ছুটিতে’।

যদিও অফিস সহকারী দিলিপ কুমার দে জানিয়েছেন যে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বাড়িতে গিয়েছেন। অথচ তা অস্বীকার করে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহ্ মোহাম্মাদ ইকবাল মনছুর মুঠোফোনে জানালেন, তিনি নিয়মিত অফিস করেন এবং রবিবার জারুলছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে ছিলেন।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াছমিনের সাথে। জানালেন, কর্মকর্তাদের অনিয়মের বিষয়টি অবগত নন তিনি। অবশ্য, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

একজন কর্মকর্তা বাড়িতে, অন্যজন ছুটিতে। একজন কাগজে-কলমে, অন্যজন গোপনে। বছরের পর বছর এভাবেই চলছে এই দপ্তরের কার্যক্রম। তাই আর আশ্বাস নয়, শীঘ্রই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে এমনটাই প্রত্যাশা লক্ষ্মীছড়িবাসীর।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন