কচ্ছপিয়ায় অসহায় পরিবারের বিরুদ্ধে হয়রানি মূলক মামলাটি মিথ্যা প্রমাণিত

বাইশারী প্রতিনিধি:

রামু উপজেলার কচ্ছপিয়ায় বহিরাগত ভোলা শীলের হয়রানি মূলক করা মামলা বার বার মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ার পর মামলাটি ৩য় বার তদন্ত করতে কক্সবাজারের পিবিআই পুলিশের টিম কচ্ছপিয়াতে।

গত মঙ্গলবার(৩১ অক্টোবর) সকাল ১১টায় পিবিআই পুলিশ কর্মকর্তা টিটু শাহ ওই মামলাটির তদন্তের দায়িত্বভার গ্রহণ করে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এ সময় ভোলা শীল এর করা মামলার স্বাক্ষীগণ ও স্থানীয়দের সাথে গোপনে ও প্রকাশ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ করেন এবং স্থানীয় বর্তমান মেম্বার, সাবেক মেম্বারসহ বেশ কয়েকজন মেম্বার, সমাজ সর্দারগণ ও অসংখ্য এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

সমাজ সেবক আলহাজ্ব ইদ্রিস সিকদার ও সাবেক মেম্বার বিমল কান্তি দাশ জানান, কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭  তারিখে কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের পূর্ব তিতার পাড়া এলাকার অসহায় মৃদুল শর্মার বসত ভিটা দখলে নিতে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দায়ের করেন চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পার্শ্ববর্তী লক্ষীছড়ি এলাকার ভোলা শীল।

তারা আরো জানান কক্সবাজার বিজ্ঞ আদালতে করা সি আর ৩২ /১৭ (রামু) এই মামলাটি তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য প্রথমে স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে দেন আদালতের বিজ্ঞ বিচারক। ৭ মার্চ ২০১৭ চেয়ারম্যান আবু মো. ইসমাঈল নোমান নিজে স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার নুরুল আলম সিকদারসহ ইউনিয়নের পাঁচবার নির্বাচিত ২নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার জয়নাল আবেদীন ৫নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ৯নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মো. ইউনুছসহ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ১’২’৩ সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার সাবেকুন্নাহার সাবু কে নিয়ে সরেজমিনে গিয়ে গোপনে ও প্রকাশ্যে তদন্ত করেন।

এসময় মামলার স্বাক্ষী ও হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি অরবিন্দু শর্মা, বাবুল শর্মা সহ এলাকাবাসীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন চেয়ারম্যান। ওই দিন এলাকাবাসী ও স্বাক্ষীদের মতে মামলাটি সর্ম্পূন মিথ্যা প্রমানিত হওয়ায় চেয়ারম্যান অনুসন্ধান পূর্বক আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করেন।

এরপর ভোলা শীল আদালতে পূর্ন তদন্তের জন্য আবেদন করলে আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য রামু উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তাকে দেন বিজ্ঞ বিচারক। গত ৯ জুলাই রবিবার আনসার ভিডিপির কর্মকর্তা ফরিদুল আলম ঘটনা স্থলে গেলে এলাকাবাসী বহিরাগত এ ভোলা শীলের দায়ের করা মামলা মিথ্যা বলে দাবি করে তার উপযুক্ত শাস্তি চান।

গত ২৫ – ৭ -২০১৭ ইং তারিখে রামু আনসার ভিডিপি অফিসার ফরিদুল আলম ভোলা শীলের করা মামলার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে প্রতিবেদন প্রেরণ করবেন বলে জানান। এর পর ভোলা আবারও ৩য় বার আদালতের কাছে পূর্ণ তদন্ত চাইলে বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি কক্সবাজার পিবিআইর কাছে প্রেরন করেন।

গত ৩১অক্টোবর মামলাটির তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হইয়া পিবিআইর এস আই টিটু শাহ সরেজমিনে তদন্ত করতে আসেন। এ সময়ও স্থানীয় মেম্বার, সাবেক মেম্বার, সমাজের মাতব্বরসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তারা পিবিআইর তদন্ত কর্মকর্তাকে বলেন, অসহায় মৃদুলের বিরুদ্ধে করা মামলা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

কারণ বিরোধীয় জমিটি ছিল খাস দীর্ঘ ২২-২৩ বছর আগে সে বন্দোবস্তির আবেদনের মাধ্যমে সরকারি ভাবে রামু ভূমি অফিসার ও তাদের অফিসের লোকজন এসে চার পাশে লাল ফ্লাগ দিয়ে জমির দখল বুঝিয়ে দেন সরকার মৃদুলকে। ওই দিন ভোলা চন্দ্র শীলের মামলার প্রধান স্বাক্ষী চিন্তা হরির কাছ থেকে এ প্রতিবেদক জানতে চাইলে তিনি বলেন মারামারি ও গাছ টাকার বিষয়টি মিথ্যা, তবে মৃদুল শর্মা যে বাড়িতে বসবাস করছেন সেখানে আজ থেকে ২৪/২৫ বছর আগে ভোলার একটি বাঁশের ঘর ছিল সে ঘর নিজে আগুনে পুড়ে এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ায় এ ঘটনা।

অপর দিকে মৃদুল শর্মা ও তার পরিবারের লোকজন জানান ভোলা শীল ১৯৮০ সালে মিয়ানমার থেকে আসেন টেকনাফে। সেখানে কিছু দিন থাকার পর রামু উপজেলার কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতার পাড়াতে এসে বসবাস শুরু করে। তার পর আমার বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে আমার পিতাকে রাজি করে আমার আপন বোনকে বিবাহ করে কিছু দিন ঘর সংসার করার পর বোন মারা যায়।

সেই সময় এলাকায় গরু চুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। ১৯৯১ সালে নিজের ঘর নিজে আগুনে পুড়ে দুই মেম্বারসহ নিরহ ৫ ব্যক্তির জন্য মামলা করে ওই মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তখন থেকে সে পলাতক হয়ে যায়। ওই বার্মাইয়া ভোলা শীল বাংলাদেশি পরিচয়ে চট্রগ্রামের লক্ষীছড়ি এলাকায় ভোটার হয়েছে বলে জানান। দীর্ঘ ২৬ বছর পর সে আবারও এসে গর্জনিয়া ইউনিয়নের কোনার পাড়া এলাকায় অবস্থান করে বিভিন্ন মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করছে।

এ বিষয়ে ভোলা শীলের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি এক সময় বসত বাড়ি নিয়ে ছিলাম এ জমিতে ওই সময় সরকার থেকে জমিটির একসনা মিয়াদি লিজ নিই। লিজের মিয়াদ শেষ হলে আমি এলাকায় না থাকায় মৃদুল শর্মা সরকার থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে তার নামে নাম জারী খতিয়ান করেন। এবিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা দিয়েছি।

ভোলা শীলের ছেলে অলক শীল থেকে জানতে চাইলে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের হুমকি দিয়ে বলেন তাদের লিখায় কিছু আসে যায় না আমি কক্সবাজারে থাকি প্রয়োজনে এসব সাংবাদিকদের দেখে নেব। সে আরো বলেন এবার শেষ তদন্ত? অফিসার কে যত টাকা লাগে দিব রিপোর্ট আমাদের পক্ষে নিব।

এসব বিষয়ে মোবাইলে তদন্ত কর্মকর্তা টিটু শাহর কাছ থেকে জানতে চাইলে তিনি তদন্ত কাজ শেষ না হতে মুখ খুলতে নারাজ। তবে তিনি নিরপেক্ষ ভাবে যাচাই বাছাই করে আদালতে প্রতিবেদন দিবেন, যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন