Notice: Trying to get property 'post_excerpt' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 53

Notice: Trying to get property 'guid' of non-object in /home/parbatta/public_html/wp-content/themes/artheme-parbattanews/single.php on line 55

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতারিত হচ্ছে পর্যটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

কোমল পানীয়, চটপটি-ফুচকা সবই দাম চড়া। সেই কারণে আগত পর্যটকরা সমুদ্রপাড় থেকে কিছুই নিতে চাইনা। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে প্রতারিত হচ্ছেন পর্যটকরা।

সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে চেয়ারে বসে ছিলেন ঢাকা থেকে আসা সাংবাদিক শাহিন ও তার স্ত্রী। হঠাৎ তিন থেকে চার জনের কিছু কোমল পানীয়, ডিম ও চিপস নিয়ে চারপাশ থেকে তাদের ঘিরে ধরে। কোমল পানীর দুটি বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে তারা বলে, ৮০ টাকা দিয়ে এই বোতল দুটো নিতেই হবে। তারা হতভম্ব হয়ে যায় এবং তাদের বলল এগুলো ২ লিটারের একটি বোতল ৩০ টাকা তোমরা ৮০ টাকা কেমনে নিবে।

হতভম্ব শাহিন বললেন আমাদের কাছে পানি আছে। আমরা এগুলো নেব না। বিক্রেতাদের একজন বলেন, কেন? এখানে এলে নিতেই হবে। কিছুক্ষণ তর্ক-বিতর্ক চলার পরে লাঞ্ছিত হবার ভয়ে অগত্যা ৮০ টাকা দিয়ে সেখান থেকে চলে এসেছেন তারা।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতিনিয়ত এভাবেই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন বেড়াতে আসা পর্যটকরা। শুধু এই ঘটনা নয়, সমুদ্র সৈকতের ঝাউবাগানের ভেতরে এবং বাইরের ক্যান্টিনগুলোতেও জোর করে খাবারের দাম বেশি রাখার হাজারো অভিযোগ রয়েছে।

এ নিয়ে অসংখ্যবার লেখালেখি হয়েছে পত্র-পত্রিকায়, রিপোর্ট হয়েছে টিভি চ্যানেলেও। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। অবস্থা বরং আগের মতোই আছে। পর্যটক নিগ্রহ ও হেনস্থা চলছেই সবার চোখের সামনে। আর এসব দেখে শুনেও বেশ খোশহালে তা দেখেও না দেখার ভান করছে কর্তৃপক্ষ ও ট্যুরিস্ট পুলিশ।

আবার সমুদ্র সৈকতের আশপাশে অবস্থিত বিভিন্ন ক্যান্টিনের পেছনের দিকে গোপন কক্ষের ব্যবস্থা রয়েছে। কোনো জুটি সেখানে খেতে এলে তাদের ওই ঘরে বসিয়ে ব্ল্যাক মেইল করে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

হোটেল সী ইন পয়েন্টে একটি ক্যান্টিনে ব্ল্যাক মেইলিংয়ের শিকার রাজশাহীর আবদুর রহমান নামের এক পর্যটক বললেন, ‘আমি আমার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে চটপটি খেতে গেলে তারা আমাদের একটি ক্যান্টিনের পাশের একটি ঘর দেখিয়ে সেখানে বসতে বলেন। দুই প্লেট চটপটি খাওয়া শেষে তারা আমাদের হাতে এক হাজার টাকার বিল ধরিয়ে দেন।’

আবদুর রহমান জানান, এত টাকা বিল হয় কিভাবে জানতে চাইলে ক্যান্টিনের কর্মীরা বলেন, ফুচকার প্লেট ৫০০ শত টাকা করে। আর এই ঘরে আপনারা অসামাজিক কাজ করেছেন। সবকিছু ভিডিও করা হয়েছে। যদি টাকা না দেওয়া হয় তাহলে এই ভিডিও ফুটেজ বাজারে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বাইরের আরেকটি ক্যান্টিনের নাম ‘সী গাল ক্যান্টিন’। সেখানে প্রতারণার শিকার হয়েছে আরেকটি পরিবার। ওই পরিবারের একজন উম্মে সিকদার বলেন, আমরা ওই ক্যান্টিন থেকে ১টি চিকেন ও একটি কোক নিয়ে খাই। এরপর কোকের দাম ও চিকেনের দাম রাখা হয় ১৪০০ টাকা। অথচ বাহিরে এগুলো খাইলে ভাল করে ৩০০ টাকাও আসবেনা। তিনি আরো জানান, পর্যটন রাজধানী হিসেবে অতিরিক্ত টাকা নিলে কক্সবাজার থেকে পর্যটক বিমুখ হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এভাবে নির্দিষ্ট মূল্যের তুলনায় খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায় করা, কাস্টমারকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আদায় করাসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।

বার বার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করা হলেও লাভের লাভ ওই চিঠি দেওয়া পর্যন্তই হয়েছে। এর বেশি কোনো প্রতিকার হয়নি।

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কলাতলি মোড় থেকে ডায়াবেটিস পয়েন্ট পর্যন্ত ভেতরে এবং বাইরে ৯টির মত ক্যান্টিন রয়েছে। এগুলোতে পর্যটকরা গেলে মোটাংকের টাকা আদায় করে পর্যটকদের হয়রানি করে। এভাবে সমুদ্র সৈকতে বাদাম, পানি, ডিম, চিপসসহ নানা জিনিস অতিরিক্ত ৫/১০ দিয়ে নিতে হয়।

পর্যটকরা জানান, সমুদ্র সৈকত থেকে অনর্থক বেশি টাকা দিয়ে অনেকটা জীম্মি হয়ে কেন নেব এসব জিনিস। সেই মালামাল সমুদ্র সৈকত থেকে উঠে বাহিরের দোকানে গেলে নির্ধারিত দামে পাওয়া যায়।

কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সমুদ্র সৈকতে ও ঝাউবাগানে পুলিশ সদস্য ও নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। আগেকার সমুদ্র সৈকত তাদের দায়িত্বপালনের পর থেকে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে বলে পর্যটক ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

এব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার হোসাইন মো. রায়হান কাজেমী বলেন, ভ্রাম্যমান হকারের ব্যাপারে অনেক অভিযোগ উঠেছে। তাদের বিরুদ্ধে ট্যুরিস্ট পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতোপূর্বে অনেককে ধরে সাজা ও মা-বাবার কাছে দেয়া হয়েছে। কোনভাবেই তাদেরকে সমুদ্র সৈকতে আসতে দেয়া হবেনা। খুব শীঘ্রই অবৈধ হকারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

তিনি বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে বর্তমানে ১১৮জন ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এত বিশাল পর্যটন এলাকায় আরো বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য দরকার আছে বলেও মনে করেন।

এবিষয়ে কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. আলী হোসেন বলেন, আমাদের কাছেও এ সম্পর্কিত অনেক অভিযোগ রয়েছে। নির্দিষ্ট ক্যান্টিন সম্পর্কে অভিযোগ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেব।

তিনি আরো বলেন, সমুদ্রপাড়ে কোমল পানি, চিপস, ঝিনুকসহ বিভিন্ন  জিনিসের দাম বৃদ্ধি করা হলে বা হাতেনাতে কাউকে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন