কক্সবাজার পিছিয়ে পড়েছে বডি বিল্ডিংয়ে
নিজস্ব প্রতিবেদক:
আর্ন্তজাতিক ক্রীড়া শরীর গঠন প্রতিযোগিতায় পুরো বাংলাদেশ সুনাম রয়েছে কক্সবাজারের বডি বিল্ডারদের। কক্সবাজারের সন্তান মোস্তাক আহম্মদ সাত বার মিস্টার বাংলাদেশ ছাড়াও প্রতিযোগিতা করছেন আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে। তিনি বাংলাদেশ বডি-বিল্ডিং ফেডারেশনের সদস্য। এছাড়া পর পর ৪ বার মিষ্টার বাংলাদেশ হয়েছে নাহিদ রেখা খাঁন সুজন। তিনি ২ বার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করছেন। কক্সবাজারের এই দুই খেলোয়াড় ছাড়াও আরো কয়েকজন মিষ্টার বাংলাদেশ হয়েছেন।
কিন্তু সর্বশেষ ২০১১ সালে নাহিদ রেখা খাঁন সুজন মিষ্টার বাংলাদেশ হওয়ার পর থেকে কক্সবাজারে আর কেউ মিষ্টার বাংলাদেশ হয়নি। প্রতিবছর প্রতিযোগিতায় গেলেও ভাল কোন ফলাফল আসছেনা। এমনকি ঘরোয়া প্রতিযোগিতায়ও ভাল ফলাফল আসছে না। রবিবারে কক্সবাজার অনুষ্ঠিত বীচ শরীর গঠন প্রতিযোগিতায় কক্সবাজারের কোন বড়িবিল্ডার ১ থেকে ৩ এর মধ্যে আসেনি।
২০১১-২০১৬ সাল পর্যন্ত কেউ আর মিষ্টার বাংলাদেশ না হওয়া এবং ভাল ফলাফল না আসায় হতাশ কক্সবাজারের সাবেক মিষ্টার বাংলাদেশ ও ক্রীড়ামোদিরা। তারা বলছেন, শরীর চর্চা হচ্ছে ক্রীড়া। আর এই ক্রীড়াকে ধ্বংস হচ্ছে ব্যবসার নামে অপচর্চা করা কিছু লোকজনের কারনে। তারা লাভের আশায় ব্যায়ামাগার খুলে বসে। যদিও তার কাছে ব্যায়ামের কোন প্রশিক্ষন নেই। এছাড়া বিয়াম হচ্ছে অনুশীলন ও ধৈর্য্যের বিষয়। কিন্তু অনেকে রাতারাতি বডিবিল্ডার হতে চায়। যার ফলে এই দুরবস্থা।
এ ব্যাপারে পরপর ৪ বার মিষ্টার বাংলাদেশ হওয়া সী-কক্স ব্যায়ামাগারের পরিচালক নাহিদ রেজা খাঁন সুজন জানান, এইবারের বীচ শরীর গঠন প্রতিযোগিতায় কক্সবাজার বড়ি বিল্ডারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এবং ভাল ফলাফল করেছে সী-কক্স ব্যায়ামাগারের বডি বিল্ডাররা। যদিও প্রতিযোগিতায় ১ থেকে ৩ এর মধ্যে কেউ আসতে পারেনি। এর মূল কারন হল যারা ব্যায়াম করে তারা ধৈর্য্য সহকারে নিয়ম অনুযায়ী ব্যায়াম করেনা। অনেকে এসে মাত্রই বডি বিল্ডার হতে চায়। এটা উচিত নয়। প্রত্যেক কিছুর নিয়ম রয়েছে, আর প্রশিক্ষককের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যায়াম করলে অবশ্যই ভাল ফলাফল আসবে। এই দূরাবস্তার জন্য তিনি দায়ী করছেন প্রশিক্ষকের অবহেলা এবং অদক্ষতাকে। তিনি বলেন, প্রশিক্ষক ছাড়া ব্যায়াম করা উচিত নয়। শহরে অনেক ব্যায়ামাগার রয়েছে, যেখানে কোন প্রশিক্ষক নেই অথবা প্রশিক্ষক থাকলেও দেখা-শোনা করছেন না। তারা শুধু ব্যবসার জন্য ব্যায়ামাগার খুলে বসেছেন।
কক্সবাজার সর্বপ্রথম বডি-বিল্ডার ৭ বার মিষ্টার বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ বড়ি বিল্ডিং ফেডারেশনের সদস্য মোস্তাক আহম্মদ জানান, শরীর চর্চা আর্ন্তজাতিক ক্রীড়া হলেও এই খেলার কদর করেনা ক্রীড়াঙ্গনের কর্মকর্তারা। ফলে বডিবিল্ডিং এর প্রতি লোকজনের আগ্রহ কম। তবে স্থানীয় ক্রিয়াঙ্গনে কদর না থাকলেও সচেতন যুবকেরা বডি বিল্ডিং-এ ঝুঁকছে।
এইবারে ভাল ফলাফল আসেনি কেন এমন প্রশ্নে বলেন, কক্সবাজারে ব্যাঙের ছাতার মত ব্যায়ামাগার হচ্ছে। এসব ব্যায়ামাগারের বেশিরভাগে যোগ্য প্রশিক্ষক নেই। এছাড়া ব্যায়ামাগার বেশি হওয়ায় তারা এক জিম থেকে অন্য জিমে যাচ্ছে। না বুঝে চেষ্টা করছে কয়েকদিনের মধ্যে মিষ্টার বাংলাদেশ হতে। তারা মনে করছে, ভারী ওজন নিলেই বড়িবিল্ডার হতে পারবে। আসলে তা নয়। ভাল বডি বিল্ডার হতে হলে প্রয়োজন নিয়ম অনুযায়ী যথাযথ অনুশীলন এবং ধৈর্য্য। আশা করা যাচ্ছে আগামী থেকে কক্সবাজারের বডি বিল্ডাররা ভাল ফলাফল করতে পারবে।
রবিবারে সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে অনুষ্ঠিত ওয়ালটন বীচ শরীর গঠন প্রতিযোগিতায় কক্সবাজারের সী-কক্স ব্যায়ামাগার থেকে ৩ জন নির্বাচিত হয়েছে ৪ থেকে ১০ এর মধ্যে। তার মধ্যে ৭০ কেজি ওজনের প্রতিযোগিতায় ৪র্থ হয়েছে রাজিব, ৬০ কেজি ওজনের প্রতিযোগিতায় ৬ষ্ঠ অবস্থানে এসেছে রাজু এবং ৮৫ ওজনের প্রতিযোগিতায় ৬ষ্ঠ হয়েছে চ-ছিলা রাখাইন। এছাড়া সৈকত ব্যায়ামাগার থেকে ৬৫ কেজি ওজনের প্রতিযোগিতায় ৫ম হয়েছে মোহাম্মদ জিয়া।
এ প্রতিযোগিতায় ২৩ টি ক্লাবের ৬০ জন প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন। যেখানে চট্টগাম-ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার বডি-বিল্ডাররা প্রতিযোগিতা করেন। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের পুরষ্কৃত করা হয়।