কক্সবাজারে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থমকে আছে উন্নয়নের চাকা

102_0747

কক্সবাজার প্রতিনিধি::
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য লীলাভূমি পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ঘিরে এখানে বেড়াতে আসেন দেশী-বিদেশী হাজার হাজার পর্যটক। এই খাতকে পুঁজি করে শহরে গড়ে উঠেছে ৪ শতাধিক হোটেল-মোটেল,গেস্ট হাউস। কিন্তু কক্সবাজার পর্যটন খাতে সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে থমকে গেছে পরিকল্পিত উন্নয়ন।

এর মধ্যে বিশ্বের দ্বীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে সরকারের মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সমুদ্র সৈকতকে ৪ জোনে ভাগ করা, আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর সম্প্রসারণ, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ (নির্মাণাধীন), আন্তর্জাতিক স্থায়ী ক্রিকেট ষ্টেডিয়াম (অর্ধ সম্পন্ন), কক্সবাজার ঘুমধুম রেল লাইন নির্মাণ, গ্যাস সংযোগ, সমুদ্র সৈকতে সী-নেটিং ব্যবস্থা, সৈকত এলাকায় ক্যাবল কার নির্মাণ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, সোনাদিয়ায় ডে-বীচ বাস্তবায়ন, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম সড়ক চার লেনে উন্নীত করন, কক্সবাজার শহর রক্ষা বাঁধ উল্লেখযোগ্য। তৎমধ্যে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ষ্টেডিয়ামের কার্যক্রম অর্ধ সম্পন্ন রয়েছে।

ইতোপূর্বে বেশি সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা লক্ষ্যে ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে গেল আওয়ামীলীগ সরকারের আমলের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী কর্নেল (অব.) ফারুক খানের আন্তরিকতায় কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে ৪ জোনে ভাগ করার মহাপরিকল্পনা ছিল। এই প্রকল্পটি ২০১৩ সালে জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে কার্যক্রম আরম্ভ করার কথা থাকলেও নানা অব্যবস্থাপনায় ২১ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর চলতি বছরের আগষ্ট মাসের শেষের দীকে সমুদ্র সৈকতের ৪ টি জোনের লাবনী পয়েন্টের সুইমিং জোন নামে মাত্র কাজ শুরু করে।

এই সুইমিং জোনে পর্যটকদের গোসল করার সুবিধার্থে কিছু দিন আগে বয়া স্থাপন করে থাকলেও তা সীমিত সময়ের জন্য করা হয় বলে জানান সমুদ্র সৈকতের ক্ষুদ্রতম ব্যবসায়ীরা।

হোটেল শৈবাল থেকে ডায়াবেটিক পয়েন্টকে করা হচ্ছে ‘এক্সক্লুসিভ জোন’। এটি সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে না। সাধারণত বিদেশি পর্যটকের জন্য এখানে থাকবে নানা ব্যবস্থা। তবে দেশি পর্যটকরাও এখানে যেতে পারবেন। সেজন্য তাঁদের বিশেষ টিকেট নিতে হবে। বিদেশি পর্যটকদের জন্যও থাকবে টিকেটের ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ করা অর্থের বেশির ভাগ অর্থাৎ সাত কোটি টাকা ব্যয় করা হবে এই এক্সক্লুসিভ জোনের জন্য।

এছাড়া কলাতলী পয়েন্টে থাকবে স্পোর্টস জোন। লাবণী পয়েন্টে বিনোদন জোন এবং সী-ইন পয়েন্ট ও লাবণী পয়েন্টের মধ্যবর্তী স্থানকে সুইমিং জোন হিসেবে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই জোনে সৈকতের অগভীর পানিতে সুইমিং নেট লাগানো হবে। বিভিন্ন জোনে প্যারাসাইক্লিং, বিচ মোটরসাইকেল, হট এয়ার বেলুনসহ বিনোদনের নানা উপকরণ থাকবে এখানে।

জানা গেছে, গেল বছরের শুরুতেই সাত কোটি ৮২ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে এই প্রকল্পের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। পর্যটন করপোরেশনের সহায়তায় এটি বাস্তবায়নে সি-বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়। বিভিন্ন দেশের উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের বিনোদনের সুবিধার্থে নেওয়া নানা ব্যবস্থা মাথায় রেখেই এ প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সচেতন মহল মনে করেন, কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারী পৃষ্টপোষকতার পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগের প্রয়োজন রয়েছে। সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে অস্থায়ী, পরিকল্পনাবিহীন আবাসন ব্যবসার ব্যাপকতা লক্ষ্য করা যায়। তবুও অন্যান্য আনুষাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা তুলনামূলক ভাবে অনেক কম।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কক্সবাজারে প্রতিবছর ১০ লক্ষাধীক পর্যটক বেড়াতে আসেন। আর এসব পর্যটক কক্সবাজারে এসে হোটেল সমূহে রাত্রিযাপন করে। দিনের বেলায় কক্সবাজারের নানা ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও স্থাপনা দর্শন করেন। তারা শহরের বাইরে যেমন, পর্যটনকেন্দ্র দরিয়া নগর, হিমছড়ি, ইনানী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন, রামু, সোনাদিয়া, মহেশখালী সহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে যান। পর্যটকদের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের পর্যটন ব্যবসা। পর্যটন ব্যবসায়ীরা একদিকে যেমন পর্যটকদের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি হাজার হাজার চাকরি নিশ্চিত করণের মধ্যদিয়ে বৈধভাবে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। অপরদিকে পর্যটন ব্যবসার নামে কিছু সুবিধাভোগী গলাকাটা ব্যবসা করে কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসার সুনাম ক্ষুন্ন করছে। তবে বিদেশী পর্যটকদের চাহিদা পূরনের লক্ষ্যে কক্সবাজারে এখনো গড়ে উঠেনি যথার্থ অনুকূল পরিবেশ ও সুযোগ সুবিধা।

বিশেষজ্ঞ মহলের অভিমত, যদি ঠিকমত দেশী-বিদেশী পর্যটকদের চাহিদা পূরণ করা যায়, তাহলে কক্সবাজারে প্রতিবছর কোটি পর্যটক আসতে আগ্রহ প্রকাশ করবে। আর সকল শ্রেনীর পর্যটকদের চাহিদা পূরণের মাধ্যমে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারে, এমনটা মনে করেন তারা।

গতকাল ঢাকা থেকে আসা এক পর্যটক জানান, তিনি কক্সবাজারে ২ বছর আগেও এসেছিলেন। কিন্তু কক্সবাজারের পর্যটকদের সুবিধা দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি উল্লেখ করেন কক্সবাজারে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা হোটেল-মোটেলসহ রেস্তোঁরাগুলোকে দায়ি করেন তিনি।
সমুদ্র সৈকতের এক হোটেল ব্যবসায়ী দাবী করেন, কক্সবাজারে সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ব্যবসা-বানিজ্য রয়েছে। কিন্তু তবু কক্সবাজারকে হরতালের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে না। একদিনের হরতালে কক্সবাজার অনেক গুণ পিছিয়ে যাচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কক্সবাজার পর্যটন খাতে পরিকল্পিত উন্নয়নগুলো সম্পন্ন করলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার জেলায় পর্যটকে টুইটম্বুর হবে।

এদিকে মুঠোফোনে বীচ-ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের সাথে কথা হলে তিনি জানান, সমুদ্র সৈকতকে ৪টি জোনে ভাগ করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা ছিল, তা এখন চলমান রয়েছে। লাবনী পয়েন্টের সুইমিং এক পর্যায়ে শেষ হচেছ, এবং বাকী কাজ গুলো সংশিষ্ট সংস্থার বিনোয়োগ পেলে তা বাস্তবায়ন হবে।

বিশিষ্ট পর্যটন ব্যবসায়ী এম সায়েম ডালিম জানান, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা পর্যটন খাতকে উত্তর-উত্তর উন্নীত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক প্রচেষ্টা রয়েছে। পর্যটন ব্যবসার উন্নয়নে কক্সবাজারকে হরতালের আওতা মুক্ত রাখা, দ্রুত রেল লাইন বাস্তবায়ন, চার লাইনের সড়ক যোগাযোগ, এক্সক্লুসিভ টুরিস্ট জোন গঠন, দেশী-বিদেশী পর্যটকদের সর্বোচ্ছ নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আধুনিক ট্যুারিষ্ট পুলিশিং ব্যবস্থা, পর্যটন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নসহ সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। এতে পর্যটন খাতের আয় দিয়ে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হবে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন