কক্সবাজারে ঘূর্ণিঝড়ে ব্যবসায়ীদের ২৫ কোটি টাকার শুটকি নষ্ট

(2) copy

কক্সবাজার প্রতিনিধি:

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুতে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে কক্সবাজার শহরস্থ শুটকি পল্লী খ্যাত নাজিরারটেক। এতে ওই এলাকা পানির নীচে তলিয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে গিছে মজুদকৃত ৬শ মেট্রিকটন শুটকি। যার বাজার মূল্য ২৫ কোটি টাকারও বেশি। ফলে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আড়ায় হাজারেরও বেশি ছোট-বড় শুটকি ব্যবসায়ী। শুধু তাই নয়, দূর্যোগের ফলে শুটকি ব্যবসা বন্ধ থাকায় ২০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। যাদের শুটকি মহালে পরিশ্রমই ছিল উপার্যনের একমাত্র মাধ্যম। এ অবস্থায় মানবেতর দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্ত শুটকি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের। এমনটাই তথ্য পাওয়া যায়, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কার্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায, শহরের নাজিরারটেক শুটকি পল্লী থেকে চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুটকি রপ্তানী হয়। দেশের ৯০ ভাগ শুটকির চাহিদা মেঠে এই এলাকা থেকে। এছাড়া বিদেশেরও রপ্তানী হয় এই এলাকার শুটকি। যেখান দৈনিক ২ থেকে ৩ কোটি টাকার শুটকি বিক্রি হয়। কিন্তু এই এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে স্থব্ধ হয়ে পড়েছে শুটকি পল্লী।

নাজিরারটেক শুটকি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছাসে পুরো শুটকি পল্লীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ভিঝে এবং ভেসে গেছে মজুদকৃত শুটকি। আর ভেঙ্গে গেছে শুটকি শুকানোর কাটামো (মাচা) ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। একেক ব্যবসায়ীর ক্ষতি হয়েছে ৩০ থেকে ৫০ লাক্ষ টাকার শুটকি। এই ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় কষ্টের শেষ নেই শুটকি ব্যবসায়ী ও ওই ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিকদের।

শুটকি ব্যবসায়ী রমিজ মিয়া জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তার সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। তার শুটকি মহাল পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। আর নষ্ট হয়ে গেছে ১ কোটি টাকার শুটকি মাছ। তিনি ঋণ নিয়ে শুটকি ব্যবসা শুরু করছিল। কিন্তু এই অবস্থায় তার অবশিষ্ট কিছুই থাকল না।

শুটকি মহালের দিন মজুর রাবেয়া বেগম জানান, তিনি ও তার স্বামী শুটকি মহালে মাছ বাচাইয়ের কাজ করে। আর তারা ওই এলাকারই বাসিন্দা। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে কাজ বন্ধ থাকায় তাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। কারন কাজ না চললে সংসার চলেনা। শেষ-মেষ বাধ্য হয়ে তার স্বামী বৃদ্ধ অবস্তায় রিক্সা চালাচ্ছে। শুধু রাবেয়া বেগম নয় এই ধরনের ২০ হাজার শ্রমিকেরই এই চিত্র।

শ্রমিকদের নিয়ে কথা বলা সচেতন যুবক মোহাম্মদ আতিক উল্লাহ জানান, শুটকি মহাল প্লাবিত হওয়ায় ২০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। শুধু শ্রমিক নয় সব শুটকি ব্যবসায়ীরাও এখন বেকার হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে এসব লোকজনের কাজ বন্ধ থাকায় অনেকে, রিক্সা, টমটম চালাচ্ছে। আর অন্যত্রে গিয়ে করছে দিনমজুরের কাজ। তবে বেশিরভাগেরই কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে।

নাজিরারটেক মৎস্য ব্যবসায়ী বহুমুখি সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি ওমর ফারুক বাদশা জানান, তিনি দীর্ঘদিন শুটকি ব্যবসা করে আসছে। কিন্তু এই ধরনের ক্ষয়-ক্ষতি এর আগে দেখেনি। এই ঘূর্নিঝড়ের ফলে প্রায় আড়ায় হাজার ব্যবসায়ী সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে বেশিরভাগই ধার দেনা ও ঋণ করে ব্যবসা চালাচ্ছিল। কিন্তু এত বড় ক্ষতি হওয়ায় তাদের আর কিছুই করার থাকছে না। তাই এসব ব্যবসায়ীকে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হলে অথবা সহজ সত্তে ঋণ দেওয়া হলে পুনরায় ব্যবসা চালু করতে পারবে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন জানান, ঘূর্ণিঝড়ের ফলে শুটকি খাতে ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। শুটকি উৎপাদন স্থান নাজিরারটেক, চফলন্ডি ও নুনিয়ারছড়া প্লাবিত হয়ে ৬ শ টন শুটকি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থ তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আর তাদেরকে সহজ সত্তে ঋণ প্রদানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। যাতে করে পুনরায় শুটকি ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন