কক্সবাজারে আত্মসমর্পণ করছে ২৮ গডফাদার, ১শ’ ২ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী

বিশেষ প্রতিনিধি, কক্সবাজার:

অবশেষে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত ২৮ জন গডফাদারসহ টেকনাফের ১শ’ ২ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী।

আজ শনিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা আত্মসমর্পণ করবেন। ইতোমধ্যেই অতিথিরা টেকনাফ পৌঁছে গেছেন।

ইয়াবা ব্যবসায়ীরা ইয়াবা জমা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি’র কাছে আত্মসমর্পণ করবেন। এসময় আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম ও চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম উপস্থিত থাকবেন।

ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্য টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।  তৈরী করা হয়েছ বিশাল মঞ্চ।

অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার জন্য শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এ.বি.এম মাসুদ হোসেন বিপিএম সভাপতিত্ব করবেন। প্রধান অতিথি থাকবেন- স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি।

অনুষ্ঠানে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বিপিএম, চট্টগ্রাম রেন্ঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম-বার, পিপিএম, অতিরিক্ত ডিআইজি (অপারেশন এন্ড ক্রাইম) মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ, কক্সবাজার জেলার চারটি আসনের সংসদ সদস্য যথাক্রমে জাফর আলম, আলহাজ্ব আশেক উল্লাহ রফিক, আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল, শাহীন আক্তার চৌধুরী, বিজিবি’র রিজিওনাল চীফ, ব্যাটালিয়ন চীফ, জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন, ডিজিএফআই ও র‌্যাবের কক্সবাজার অফিস প্রধান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত পর্যন্ত ১০২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছেন রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি’র নির্দেশনায় কক্সবাজার জেলা পুলিশ আত্মসমর্পণকারীদের তালিকাটি চূড়ান্ত করেন। এই তালিকার ১শ’ ২ জন ইয়াবা ব্যবসায়ীর সবাই টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। আত্মসমর্পণকালে এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা দু’লক্ষাধিক ও কিছু অবৈধ অস্ত্র জমা দেবে।

অন্যদিকে এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কোন ধরণের সাধারণ ক্ষমা নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এমপি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শুক্রবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়েছেন, আইন মতে আত্মসমর্পণকারীদের বিচার প্রক্রিয়া চলবে।

তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত আইনেই আত্মসমর্পণকারী ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বিচার হবে। তারা ও তাদের স্বজনদের সম্পদ দুদক ও এনবিআরের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে তাদেরকে সরকারিভাবে আইনী সহায়তা দেয়া হবে।

তথ্য মতে, আত্মসমর্পণের পর তাদের আসামী করে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হবে। টেকনাফ থানা পুলিশ এই মামলা দায়ের করবে।

মাদক রোধে সম্প্রতি ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বাড়লে জীবন বাঁচাতে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। গত এক মাসে পুলিশের হেফাজতে চলে এসেছে ২৮ গডফাদারসহ ১শ’ ২ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী।

ইতিমধ্যে যে ২৮ জন ইয়াবা গডফাদারসহ ১শ’ ২ জন পুলিশের হেফাজতে এসেছে তারা হলো- সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই যথাক্রমে আবদু শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান ও এমপির ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু এবং সাহেদ কামাল। টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পুত্র দিদার মিয়া ও পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ, পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, নাজিরপাড়ার এনামুল হক মেম্বার, সাবরাংয়ের মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ ধানু মেম্বার, আলী খালির জামাল মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার, সাবরাংয়ের সামশু মেম্বার, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার ইমাম হোসেন, পশ্চিম লেদার বোরহান, সাবরাংয়ের নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ভুট্টোর ভাগিনা আফসার, হ্নীলার রমজান ও বড় হাবিবপাড়ার ছিদ্দিক, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই পুত্র আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, হ্নীলার পশ্চিম সিকদারপাড়ার ছৈয়দ আহমদ, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, পুরনো পল্লানপাড়ার শাহ আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, হ্নীলা পশ্চিম সিকদারপাড়ার রশিদ আহমদ, ওয়ালিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরীপাড়ার মং সং থেইন প্রকাশ মমচি ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জুবাইর হোসেন, হ্নীলা পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোসেন, নাইটংপাড়ার মো. ইউনুস, সাবরাং আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, শামলাপুর জুমপাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আলম, উত্তরলম্বরীর আবদুল করিম প্রকাশ করিমমাঝি, রাজারছড়ার আবদুল কুদ্দুছ, জাহেলিয়াপাড়ার মো. সিরাজ, সাবরাংয়ের আবদুল হামিদ, নাজিরপাড়ার মো. রফিক, নতুন পল্লানপাড়ার মো. সেলিম, নাইট্যংপাড়ার মো. রহিম উল্লাহ, নাজিরপাড়ার মো. হেলাল, চৌধুরীপাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়াঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার মোহাম্মদ হাছন, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নূর মোহাম্মদ, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইলপাড়ার আবদুল আমিন, উত্তর আলীখালীর শাহ আজম, দক্ষিণ নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল, সাবরাং ডেইলপাড়ার মো. সাকের মিয়া, সাবরাংয়ের আলী আহমদ, উত্তর শীলখালীর মো. আবু ছৈয়দ, জাদিমুরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, রাজারছড়ার হোসেন আলী, সাবরাং নয়াপাড়ার মো. তৈয়ব, উত্তর জালিয়াপাড়ার নুরুল বশর মিজি, নাজিরপাড়ার জামাল হোসেন, মৌলভীপাড়ার মো. আলী ও এই এলাকার আবদুল গনি, জালিয়াপাড়ার মো. হাশেম, পুরনো পল্লানপাড়ার ইসমাইল, নাইট্যাংপাড়ার আইয়ুব, সাবরাংয়ের হোসেন আহমদ, সাবরাংয়ের শওকত আলম, নাইট্যাংপাড়ার হাবিব, আলীখালীর হারুন, মাঠপাড়ার কামাল, সাবরাংয়ের রাসেল, ডেইলপাড়ার নুরুল আমিন, শীলবনিয়াপাড়ার আইয়ুব, জালিয়াপাড়ার আলম, লেদার হামিদ, মুন্ডর ডেইলয়ের মনজুর, লেদার রবিউল আলম, সাবরাংয়ের মৌলভী বশির, হ্নীলার মাহাবুব, বাজারপাড়ার মো. শাহ, লেদার ফরিদ আলম, লেদার মো. হোছন, জালিয়াপাড়ার নুরুল আলম, লেদার জহুর আলম, আবু তাহের, ফুলের ডেইলের আলী নেওয়াজ ও আবু তৈয়ব।

 

Print Friendly, PDF & Email
ঘটনাপ্রবাহ: ১শ’ ২ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী, কক্সবাজারে আত্মসমর্পণ করছে ২৮ গডফাদার
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন