এমশাদের আবেগঘন চিঠি ও চলে যাওয়া, বন্ধুদের দেয়া হলোনা জন্মদিনের ট্রিট

চকরিয়া প্রতিনিধি:

মাতামুহুরী নদীর চিরিংগা ব্রিজের নিচে সহপাঠীদের সাথে বালুর চলে দুরন্তপনা মন নিয়ে ফুটবল খেলতে যায় আমিনুল হোছাইন এমশাদ (১৭)। এমশাদ চকরিয়া গ্রামার স্কুলের দশম শ্রেণীর বিজ্ঞান শাখার মেধাবী ছাত্র ও পৌরশহরে প্রতিষ্ঠিত ধন্যাঢ্য ব্যবসায়ী আলহাজ্ব আনোয়ার হোছাইনের বড় পুত্র। এসএসসি পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের নিয়ে বার্থ ডে পার্টির ট্রিট দেয়ার কথা ছিলো এমশাদের। কিন্তু মাতামুহুরী নদী কেড়ে নিলো তার সেই স্বপ্ন।

১৪ জুলাই মাতামুহুরী নদীতে সদ্য জেগে উঠা বালুর চরে স্কুল বন্ধুদের সাথে ফুটবল খেলে নদীতে গোসল করতে গিয়ে চোরাবালিতে আটকে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের পাঁচ ছাত্র নিখোঁজ হয়, সাঈদ জাওয়াদ অরভি (১৫), দুই ভাই আমিরুল হোছাইন এমশাদ (১৫) ও  ৮ম শ্রেণীতে পড়ুয়া আফতাব হোছাইন মেহরাব (১২), দশম শ্রেণি পড়ুয়া তূর্ণ ভট্টাচার্য্য ও একই শ্রেণীর ফারহান বিন শওকত (১৫)।

ওইদিন স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরীদল ও স্থানীয় লোকজন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে। এতে এমশাদের তিন সহপাঠীসহ ও ছোট ভাই নিহত হয়। পুরো উপজেলা জুড়ে মর্মান্তিক এ নিহতের ঘটনায় শোকে কাতর। নিহত সন্তানদের হারিয়ে পরিবারের স্বজন ও স্কুলের শিক্ষকরা এখনো বাকরুদ্ধ। এমশাদসহ চারজন একই স্কুলের ছাত্র অকালে চলে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাথায় ব্যাথিত হয়েছে প্রিয় সহপাঠীরা।

সোমবার (১৬জুলাই) সকালের দিকে আত্মীয়-স্বজনরা এমশাদের পড়ার টেবিলে বই গুছাতে গিয়ে হঠাৎ খোঁজ পায় তার ব্যক্তিগত একটি ডায়েরী। পরিবারের স্বজনরা ডায়েরীর পাতা উল্টোতেই চোখে পড়ে তার হাতের লেখা একটি চিঠি। সেই চিঠি ছিলো বন্ধুদের উদেশ্যে। তার লেখা সেই চিঠি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এমশাদের চাচা জমির হোছাইন। সেই চিঠিতে বন্ধুদের উদেশ্যে

এমশাদ যা লিখেছিল…….” জানিনা আর কত দিন আছে। হয়ত আর আজ আছি কাল নেই। তবু যতদিন বাঁচব তোদের সবাইকে সাথে নিয়ে বাঁচব। জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ১২টি বছর তোদের সাথে আছি। হয়ত আর দেখা হবেনা। কিন্তু আমি তোদের কোন দিন ভুলব না। এসএসসি’র পরও তোদের সাথে যোগাযোগ থাকবে। তোরাও আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস। তা না হলে খুব একা হয়ে যাবো।

ছেলেদের মধ্যে প্রথম বেঞ্চ’র চারজন আমার boy friend, আর girl friend এর মধ্যে রিতু। কোথাও চলে গেলে যাই হোক না কেন যোগাযোগ বন্ধ রাখিস না। ১২ বছর তোদের সাথে অনেক ঝগড়া করেছি। খুব মজা পাইছি। ১২ বছর তোদের সাথে খুব সুন্দর ভাবে কাটিয়েছি। এই সুন্দর মুহুত্বগুলো আমার জীবনে আর আসবে না। আমি নিয়মিত নামাজ ও কুরান পড়ি। আর চেষ্টা করব ধরে রাখার জন্য।S S C exam পর তোদের জন্য একটা  Birthday trite থাকবে চিন্তা করিস না “।

জানা গেছে, আলহাজ্ব আনোয়ার হোছাইন দম্পতির দুই ছেলে-এক মেয়ে সন্তান ছিলো।  দুই ছেলেই লেখাপড়ায় ভাল হওয়াই তাদেরকে নিয়ে স্বপ্নও ছিলো বেশি। দুই ছেলে খুবই মেধাবী। বড় ছেলে এমশাদ পিএসসি ও জেএসসিতে বৃত্তি পেয়েছিলো। ছোট ছেলে মেহেরাবও পিএসসিতে বৃত্তি পেয়েছে। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বড় মেয়ে। পরীক্ষাই পাস হলেই উচ্চ শিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম শহরে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ফ্ল্যাটও কিনেছেন এমশাদের বাবা। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই ফ্ল্যাটে উঠার কথা ছিলো আনোয়ার হোসেনের পরিবারের। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। ফ্ল্যাটে উঠার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো তার দুই আদরের সন্তান মেধাবী ছাত্র এমশাদ ও মেহেরাব। এদিকে, চকরিয়া গ্রামার স্কুলের ৫জন মেধাবী ছাত্রের অকাল মৃত্যুতে গ্রামার স্কুলের পক্ষ থেকে ৪দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন