একে-৪৭সহ আটক থোয়াই চিং চাক নাইক্ষ্যংছড়ির প্রথম খ্রিষ্ট্রান ধর্ম প্রচারক

ধর্ম প্রচারের মুখোশে কষ্টিপাথর, পুরাতন কয়েন ও টোট্যাং সংগ্রহে ব্যর্থ শুরু করেছে হয়ে অস্ত্র ব্যবসা!

1444932214

মো.আবুল বাশার নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি:
পার্বত্য এলাকায় বসবাসরত ১১টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্টীর মধ্যে ক্ষুদ্র সম্প্রদায় ‘চাক’। শিক্ষাদিক্ষায় এগিয়ে এ জাতিগোষ্ঠী দেশের উচ্চ শিক্ষা অর্জন করে অনেকে রাষ্ট্রের সেবায় নিয়োজিত আছেন। কিন্তু সম্প্রতি চাক সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মান্তরিত করার প্রবণতা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রলোভন দেখিয়ে স্থানীয় কিছু যুবকের প্ররোচনায় বর্তমানে চাক সম্প্রদায়ের প্রায় শতাধিক লোক খ্রিষ্ট্রান ধর্মান্তরিত হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন চাক সম্প্রদায়ের নেতারা প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। আর চাক সম্প্রদায়ের মাঝে প্রথম নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ধর্মান্তরিতকরণের মপ কার্যক্রম শুরু করেন গত বৃহস্পতিবার বান্দরবানে র‌্যাবের হাতে একে-৪৭সহ আটক হওয়া তিন জনের মধ্যে থোয়াই চিং চাক (৪৪)। চাক সম্প্রদায়ের মধ্যে তিনিই প্রথম ধর্মান্তরিত ব্যক্তি ও খ্রিস্টান ধর্ম প্রচারক।

সরেজমিনে তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়নের মধ্যম চাকপাড়ার বাসিন্দা হ্লা থোয়াইগ্য চাকের চার ছেলে ও চার মেয়ের মধ্যে থোয়াইচিং চাক দ্বিতীয় সন্তান। বড় ছেলে অংছাইন চাক (৪৬) বান্দরবান ক্ষুদ্র নৃ গোষ্টী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে কর্মরত, ছোট ভাই চহ্লা মং চাক (৪১) থানচি উপজেলায় কর্মরত প্রাইমারী শিক্ষক। এবং ছোট ভাই অংফুছা চাক (৩৫) নাইক্ষ্যংছড়ি ধুংরী হেডম্যানপাড়া এলাকার বার্মিজ স্টোর ব্যবসায়ী।

Thowai ching chak pic

থোয়াইচিং চাক মাধ্যমিক শিক্ষার গন্ডি পেরুতে না পেরে এনজিও সংস্থা কারিতাসের সহায়তায় ইলেক্সট্রনিক কাজের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন এবং ১৯৯৫-৯৬ সনের দিকে ভাই অংছাইন চাকের সহযোগিতায় জড়িয়ে পড়েন কোরিয়া ভিত্তিক একটি খ্রিষ্ট্রান মিশনারিজের সাথে। তৎসময় নাইক্ষ্যংছড়ি অজপাড়ার অন্তত ১৫/২০ জন শিুশু-যুবককে প্রলোভন দেখিয়ে চট্টগ্রামে নিয়ে যান থোয়াই চিং চাক। পরে ধর্মান্তরিত করণের বিষয় তারা বুঝতে পেরে পালিয়ে যান নিজ গ্রামে। সে সময় জোর পূর্বক ধর্মান্তরিত করার অভিযোগে নাইক্ষ্যংছড়ি ধুংরী হেডম্যানপাড়ায় মার্মা সম্প্রদায়ের নিকট গণধোলাইয়ের শিকার হন থোয়াই চিং।

পরবর্তী সময়ে খ্রিষ্টান ধর্মে নিজেকে আরো সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে থোয়াইচিং চাক রুমা উপজেলার এক বম সম্প্রদায়ের নারীকে বিয়ে করে তাকেও ধর্মান্তরিত করান। র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার আগ পর্যন্ত সে স্ত্রীসহ এক ছেলে, এক মেয়ে সন্তান নিয়ে চট্টগ্রাম শহরের অক্সিজেন এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করছিলেন। ধর্ম প্রচারের পাশাপাশি নিজ গ্রামে কষ্টিপাথর, বৃটিশ আমলের প্রাচীন সোনালী রঙয়ের কয়েন এবং তক্ষক (টোট্যাং) কেনাবেচার সঙ্গেও যুক্ত হন থোয়াইচিং। তবে এ পেশায়ও লাভবান হতে পারেননি। হঠাৎ কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অর্থলোভে থোয়াইচিং চাক জড়িয়ে পড়েন বান্দরবান ভিত্তিক একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাথে। এ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি রুমা উপজেলায় অবস্থান করে অস্ত্র বেচাকেনার কাজ করত।

জানা গেছে, বাংলাদেশের সাথে ভারতের মিজোরামের ৩১৮ কি: মি: সীমান্ত রয়েছে। বান্দরবানের রুমা উপজেলার পাহাড়ী পথ বেয়ে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা ঘেষা ভারতের মিজোরাম ও ত্রিপুরা থেকে আটকৃত এসব অস্ত্র সংগ্রহ করা হয়েছিল বলে একটি অসমর্থিত সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার র‌্যাব পরিচালক মিফতা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ত্রিদেশীয় সীমান্তপথ দিয়ে অস্ত্র আসছে। আর আর্ন্তজাতিক চক্রের কাছ থেকে অস্ত্র নিয়ে তা দেয়া হচ্ছে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের কাছে। সেই অস্ত্র দিয়ে তারা পাহাড়ে সংঘাতে লিপ্ত হচ্ছে। ত্রিদেশীয় সীমান্তপথ দিয়ে আসা অস্ত্র দেশের ভেতরে ছড়িয়ে দেয়ার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের অধিকাংশই পাহাড়ি। তারা মূলত ধর্ম প্রচারের আড়ালে অস্ত্র কেনাবেচা করে।

সূত্র মতে, লক্ষ্মী প্রসাদ চাকমা নামে জনৈক ব্যাক্তি পার্বত্য এলাকার প্রভাবশালী এক পাহাড়ী নেতার নিকট আত্মীয়। তিনি মূলত ভারতের মিজোরামে অবস্থান করে পাহাড়ী সন্ত্রাসীদের জন্য অস্ত্র ও গোলাবারুদের সরবরাহ পাঠিয়ে থাকেন।

গত কিছুদিন পূর্বে থোয়াইচিং চাকের সাথে জনৈক মার্মা যুবকের পরিচয় পরবর্তী একপর্যায়ে প্রতিটি একে-৪৭ রাইফেল ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকায় ক্রয়-বিক্রয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। পরে রফা অনুযায়ী ভারতের মিজোরাম রাজ্য থেকে অস্ত্রগুলো নিয়ে আসা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ অক্টোবর বান্দরবান শহরের একটি বাসায় অস্ত্রগুলো রাখা হয়েছিল। পরদিন ১৫ অক্টোবর দুপুরে অস্ত্র বিক্রির টাকা বুঝে নিতে ফাইসুই ও থোয়াই চিং চাক শহরের মাস্টার গেস্টহাউসে আসেন এবং লাল পিয়ান মধ্যমপাড়ায় যান অস্ত্র হস্তান্তর করতে। এ সময় তাঁরা সবাই র‌্যাব সদস্যদের হাতে ধরা পড়েন।

এ বিষয়ে চাক সম্প্রদায়ের প্রবাসী এক যুবক উচা চাক সম্প্রতি আটক হওয়া থোয়াইচিং চাকের উদ্দেশ্যে তার ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন- ‘চাক জাতির নামে কলঙ্ক এ ধরনের কিছু লোক’। অন্যকে অর্থের লোভ দেখিয়ে জন্ম দাতা মা বাবার পালনীয় ধর্মকে ত্যাগ করায় এবং অন্যকে উৎসাহ জোগায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

রবিবার সরেজমিনে থোয়াইচিং চাকের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কথা হলে স্থানীয়রা থোয়াইচিং চাক অর্থ লোভে এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে বলে দাবী করেন। র‌্যাবের হাতে আটকের সময় উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের বিষয়ে তারা কিছুই বলতে না চাইলেও থোয়াচিং চাক ইতিপূর্বে বৃটিশ আমলের সোনালী কয়েন, কষ্টিপাথর, টোট্যাং সংগ্রহকাজে জড়িত ছিল বলে স্বীকার করেন। তাদের মতে, খৃষ্টান ধর্মপ্রচার তার মুখোশ। এই আড়াল ব্যবহার করে সে নানা অপরাধমূলক কাজের সাথে জড়িত ছিল।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন