একটি ব্রিজ বদলে দিতে পারে হাফছড়ি ইউনিয়নবাসীর জীবনযাত্রা

গুইমারা  প্রতিনিধি:

চিংগুলি পাড়া পিলাক খালের উপর একটি ব্রিজ নির্মিত হলে বদলে যেতে পারে হাফছড়ি ইউনিয়নে বসবাসরত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা। প্রসারিত হবে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ কৃষি, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির মতো গুরুত্বপুর্ণ খাতের। নবসৃষ্ট গুইমারা উপজেলাকে উন্নয়নের মডেল হিসেবে রুপ দিতে এই ব্রিজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

খাগড়াছড়ি গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের বড়ইতলি, কুকিছড়া-নাক্রাইসহ ৭টি গ্রামে প্রায় ৮ হাজার মানুষের বসবাস এখানে। প্রতিদিন দূর্গম এ সব গ্রাম থেকে ১৪- ১৫ কি. মি. পায়ে হেঁটে উপজেলা সদরে আসে শিক্ষার্থীসহ জনসাধারনরা। কৃষি প্রধান এ এলাকা থেকে যাতায়াতের কোন মাধ্যম না থাকায় নিজেদের উৎপাদিত ফসল কাঁধে নিয়ে গুইমারা বাজারে আসেন কৃষকরা। শুধুমাত্র চিংগুলিপাড়া পিলাক খালের উপর একটি ব্রিজের অভাবে এমন মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অবহেলিত ৮ হাজার মানুষ। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া সারাদেশে ছড়িয়ে পড়লেও একটি মাত্র ব্রিজের কারণে এ অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের দ্বার খোলেনি স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও।

স্বরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ এলাকার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম চিংগুলিপাড়া পিলাক খালের উপর দিয়ে। দীর্ঘকাল যাবৎ এই খালের উপর ব্রিজ না থাকায় চরম দূর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে তাদের । বর্ষা মৌসুমে জীবন বাজি রেখে কিছু ছাত্রছাত্রী ভেঁজা জামাকাপড় নিয়ে বিদ্যালয়ে আসলেও অনেক ছাত্রছাত্রীর বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।

তাছাড়া শুকনো মৌসুমে উৎপাদিত কলা , মৌসুমী ফল-ফলাদি ও শাক সবজি-সহ কৃষি পন্য গুলো পায়ে হেঁটে কিংবা মোটর সাইকেলে বাজারজাত করতে পারলেও বর্ষাকালে সময় মতো বাজারজাত করা সম্ভব হয়না। যাতায়াত সমস্যার কারণে নিরাপত্তা বাহিনী  যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেনা। ব্রিজটি নির্মাণ হলে অবহেলিত এই জনপদের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হবে। সহজেই এই অঞ্চল থেকে উৎপাদিত কৃষিপন্য, কাঠ, বাঁশ, কলা, গুরু ছাগল, হাঁস মুরগি তরিতরকারী নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সহজেই পরিবহন করা যাবে উপজেলা সদর সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।

এছাড়া হাফছড়ি ইউনিয়নের এই দুটি ওয়ার্ডে মোট ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ১২টি বৌদ্ধ বিহার, ৩টি হরিমন্দির সহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রতিদিন  উপজাতীয় শতশত লোকজন এ খালের উপর দিয়ে হেঁটে আসা-যাওয়া করতে হয়।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, উৎপাদিত কৃষিপন্য গুলো সময়মত বাজারে নিতে না পারায় কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। কোন মুমূর্ষ রোগিকে বাঁচানোর জন্য তাৎক্ষনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়না। তাদের ধারনা দেশের কোন এক দীপে বসবাস করছেন তারা। বিশেষ কি কারণে সেতুটি নির্মাণ হয়না তা না জানলেও তারা মনে প্রানে বিশ্বাস করেন যে, সরকার চাইলে নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে ব্রিজটি নির্মাণ করে দেওয়া সম্ভব।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সুইউ মারমা জানান, একটি ব্রিজ নির্মাণ হলে অবহেলিত এই জনদ অনেক উন্নত হবে এবং যাতায়াত সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। একটি ব্রিজের জন্য অনেক পিছিয়ে আছে দুটি ওয়ার্ডের ৭ গ্রামের প্রায় ৮ হাজারের অধিক জনগোষ্ঠী।

এ বিষয়ে হাফছড়ি ইউপি চেয়ারম্যান চাইথোয়াই চৌধুরী বলেন, ব্রিজটি নির্মাণের জন্য ১৯৯৭ এর দিকে এলজিডির মাধ্যমে তিনি একটি আবেদন করেছিলেন। মন্ত্রী কল্পরঞ্জন চাকমা অনুমোদনও দিয়েছিলেন কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি সরকার গঠন করায় প্রজেক্টটি বাতিল হয়ে যায়। এরপর এই এলাকায় ব্রিজ বা রাস্তা ঘাটের অদ্যবধি পর্যন্ত কোন উন্নয়ন হয়নি। তবে দ্রুততম সময়ে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নয়নে ব্রিজটিসহ রাস্তার ব্রীক সলিং নির্মাণের জন্যে সংস্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট তিনি দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, গুইমারা উপজেলা সদর থেকে চিংগুলি পাড়া পিলাক খালের অবস্থান ৩ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও অদৃশ্য কারণে দীর্ঘ দিনেও ব্রিজটি নির্মাণের যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হয়নি । যার কারণে পিছিয়ে আছে এই জনপদ। শুধু অবহেলিত দূর্গম এই জনপদের নয়, পুরো উপজেলার অর্থনীতি-ই বদলে দিতে পারে এই ব্রিজটি। সব মিলিয়ে এই ব্রিজটি নির্মিত হলে ৭ গ্রামের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।

এ বিষয়ে গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া ব্রিজটি নির্মাণ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে বলেন, উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এই ব্রিজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি  ব্রিজটি নির্মাণের জন্যে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করা হবে বলেও জানান।

Print Friendly, PDF & Email
Facebook Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও পড়ুন